শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:২০ পূর্বাহ্ন
Headline :
বাংলাদেশ জোট মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল হাসেম ন্যাশনাল ইউনিটি কাউন্সিল(এনইউসি) এর মহাসচিব বিদ্যুৎ চন্দ্র বর্মনের বাণী: মানবতার মূর্ত প্রতীক: *অধ্যাপক ড. আলহাজ্ব মোঃ শরীফ আব্দুল্লাহ হিস সাকী শিক্ষাবিদ ও মানবতাবাদী এক অনন্য সমন্বয়* -ড. এ আর জাফরী বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটে মূল চিন্তাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত প্রধান উপদেষ্টা ফরহাদ মাজহার বগুড়া গাবতলী স্টেশনের রেলওয়ে কর্মচারীকে মারপিট করে আহত করে ২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় – দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে নতুন সম্ভাবনার দিগন্তে বাংলাদেশ ময়মনসিংহে পলাতক আসামী গেপ্ততার করেছে র‍্যাব ১৪ যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৩ বিজিবির অভিযানে ইয়াবাসহ আটক ১ বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বিএনপিরভারপ্রাপ্তচেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ দোয়া মাহফিল

দাওয়াত ও তাওফীক: দাঈর ভূমিকা* *বনাম আল্লাহর ফয়সালা

ডাঃ এম, জি, মোস্তফা মুসাঃ / ১১ Time View
Update : শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ডাঃ এম, জি, মোস্তফা মুসাঃ

_ভূমিকা:_ ইসলামে দাওয়াতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সকল নবী-রাসূলের প্রধান দায়িত্ব ছিল মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করা। তবে কুরআন আমাদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, মানুষের দায়িত্ব কেবল পথ দেখানো (দাওয়াত, শিক্ষা, ইরশাদ) পর্যন্ত সীমাবদ্ধ, কিন্তু কাউকে প্রকৃত ঈমানদার বানানো বা সৎপথে স্থির রাখা শুধুমাত্র আল্লাহর তাওফীকের অধীন। এই দুইটি স্তরের হিদায়াত বোঝা দাঈদের জন্য যেমন অপরিহার্য, তেমনি সাধারণ মুসলিমদের জন্যও তা শিক্ষণীয়।

*১. হিদায়াতুল ইরশাদ: দাঈর ভূমিকা*

ইরশাদ মানে হলো ‘পথ দেখানো, নির্দেশনা প্রদান, দাওয়াত ও শিক্ষা দেয়া’। নবী ও রাসূলগণ আল্লাহর বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন, কুরআন পাঠ করেছেন, সুন্নাহর মাধ্যমে সৎপথ দেখিয়েছেন। দাঈর কাজ হলো মানুষের সামনে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য তুলে ধরা, যাতে সে নিজের বুদ্ধি ও বিবেক দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

এখানে দাঈ (দাওয়াত প্রদানকারী) বা নবী ও রাসূল মানুষকে সঠিক ও ভুল পথের মধ্যে পার্থক্য বুঝিয়ে দেন, ইসলামি শিক্ষা তুলে ধরেন, কিন্তু তারা কাউকে ঈমানদার বানাতে পারেন না।

কুরআনের উদাহরণ:
*وَإِنَّكَ لَتَهۡدِيٓ إِلَىٰ صِرَٰطٖ مُّسۡتَقِيمٖ;*
‘তুমি তো কেবল প্রদর্শন কর হিদায়েতের সরল পথ’। (আশ-শূরা: ৫২)! অর্থাৎ নবী কারীম (ﷺ)-এর দাওয়াত ইরশাদ পর্যায়ের হিদায়াত।

আরও পড়ুনঃ ভালোবেসে বিয়ে, ভাড়া বাসায় নববধূর লাশ রেখে স্বামী পলাতক

*২. হিদায়াতুত তাওফীক: আল্লাহর ফয়সালা*

তাওফীক বলতে বোঝায়: আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার অন্তরে এমন সামঞ্জস্য সৃষ্টি করা যাতে সে সঠিক জ্ঞান পায়, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং সেই অনুযায়ী সৎকর্ম করার ক্ষমতা ও সফলতা অর্জন করে।

অর্থাৎ—সত্যকে চিনতে পারা + সেই সত্যকে গ্রহণ করা + সেই সত্য অনুযায়ী কাজ করার শক্তি পাওয়া = তাওফীক।

আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্তরে ঈমান সৃষ্টি করা, হৃদয়কে সৎপথে স্থির রাখা এবং আমলের তাওফীক দান।

এটি কারো হাতে নেই; না নবীর হাতে, না আলেমের হাতে, না পিতার। এটি সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছার উপর।

কুরআনের উদাহরণ:
*إِنَّكَ لَا تَهۡدِي مَنۡ أَحۡبَبۡتَ وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ يَهۡدِي مَن يَشَآءُ*
“আপনি যাকে ভালোবাসেন তাকে হিদায়েতে পথে (সৎপথে) আনতে পারবেন না; বরং আল্লাহ যাকে চান তাকেই হিদায়াত দেন”। (আল-কাসাস: ৫৬)!

নবী কারীম (ﷺ) তাঁর চাচা আবু তালিবকে মনেপ্রাণে ইসলাম গ্রহণ করাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আল্লাহর ফয়সালা হয়নি, তাই আবু তালেবের পক্ষে ঈমান আনা সম্ভব হয়নি।

কুরআনে উদাহরণ: শু‘আয়েব (আ.) তাঁর কওমকে বলেছিলেন:
*وَمَا تَوْفِيقِي إِلَّا بِاللَّهِ*
“আমার তাওফীক আল্লাহ ছাড়া আর কারো দ্বারা নয়।” (হূদ: ৮৮)!অর্থাৎ সঠিকভাবে কথা বলা, কাজ করা ও ফলপ্রসূ হওয়া শুধুমাত্র আল্লাহর সাহায্যে সম্ভব।

*৩. দাওয়াত ও তাওফীক: সম্পর্কের বিশ্লেষণ*

_(ক). দাওয়াত ছাড়া তাওফীক আসে না:_ মানুষকে সত্য জানতেই হবে, তারপরই আল্লাহ তাওফীক দিলে সে গ্রহণ করবে।

_(খ). তাওফীক ছাড়া দাওয়াত ফলপ্রসূ নয়:_ কত মানুষ সত্য শোনে, সত্য বোঝে, কিন্তু অন্তর নরম না হলে তারা সত্যপথ গ্রহণ করতে পারে না।

_(গ) . দাঈর দায়িত্ব সীমাবদ্ধ:_ দাঈর দায়িত্ব হলো কেবল নিষ্ঠার সাথে সত্য প্রচার করা, কাউকে জোর করে মুসলিম বানানো নয়। ঈমান একমাত্র আল্লাহর জিম্মায়।

_(ঘ). আল্লাহর উপর নির্ভরতা অপরিহার্য:_ দাঈ ও সাধারণ মুমিন উভয়েরই উচিত হিদায়াতের জন্য আল্লাহর কাছে দো’আ করা, আল্লাহর উপর নির্ভর করা।

আরও পড়ুনঃ বীরগঞ্জে জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল

*৪. শিক্ষা ও হিকমাহ:*

(ক). ঈমান আল্লাহর পক্ষ থেকে এ্কটি বিশেষ দান, তাকে হেলাফেলা করা উচিত নয়।

(খ). দাঈকে ধৈর্যশীল ও বিনয়ী হতে হবে; ফলাফলের জন্য উদ্বিগ্ন হলেও হতাশ হওয়া যাবে না।

(গ). সমাজ ও পরিবারে কাউকে ইসলামি শিক্ষা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব, কিন্তু অন্তর পরিবর্তন করা আল্লাহর কাজ।

(ঘ). আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিয়মিত দো’আ করা:
*رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا;*
“হে আমাদের রব্ব, আমাদের ক্বলবকে বিপথগামী করো না, যখন তুমি আমাদের হিদায়াত দান করেছ।” (আল-ইমরান: ৮)

*৫. আইন, নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও দর্শনের আলোকে হিদায়াতুল ইরশাদ ও হিদায়াতুত তাওফীক:*

_৫.১ আইন (Law):_

_(ক). হিদায়াতুল ইরশাদ:_ ইসলামে দাওয়াত প্রদানে কোনো জবরদস্তি নেই, “দ্বীনে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই”। (আল-বাকারা: ২৫৬)! দাঈর কাজ শুধু সত্যকে পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করা।

_(খ). হিদায়াতুত তাওফীক:_ আল্লাহর আইন অনুযায়ী, কাউকে মুসলিম বানানো মানুষের ক্ষমতার বাইরে। ঈমান দেওয়া ও অন্তরে স্থিরতা দান কেবল আল্লাহর ফয়সালা।

_৫.২ নীতি (Principle):_

_(ক). হিদায়াতুল ইরশাদ:_ দাওয়াত পৌঁছাতে হবে প্রজ্ঞা, যুক্তি ও মমতার সাথে: “আপনার রবের পথে আহ্বান করুন প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে”। (আন-নাহল: ১২৫)!

_(খ). হিদায়াতুত তাওফীক:_ নীতি হলো আল্লাহ যার অন্তরে খুশু-খুঁজু, বিনয় ও আন্তরিকতা দেখেন, তাকেই সঠিকভাবে পথ দেখার শক্তি দান করেন।

_৫.৩ নৈতিকতা (Morality):_

_(ক). হিদায়াতুল ইরশাদ:_ দাঈর উচিত ধৈর্যশীল, বিনয়ী ও আদর্শ চরিত্রবান হওয়া। মানুষ চরিত্র দেখে বেশি প্রভাবিত হয়।

_(খ). হিদায়াতুত তাওফীক:_ অন্তরের নৈতিক পবিত্রতা আল্লাহর রহমত আকর্ষণ করে। অহংকার, জিদ, জুলুম ও হিংসা মানুষকে তাওফীক থেকে বঞ্চিত করে।

আরও পড়ুনঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহানন্দা ব্যাটালিয়ন ৫৯বিজিবির টহল দলের বিরুদ্ধে মোবাইল চোরাকারবারীর মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগ

_৫.৪ মূল্যবোধ (Values):_

_(ক). হিদায়াতুল ইরশাদ:_ কুরআন মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা ও দায়িত্ববোধ স্বীকৃতি দিয়েছে। দাঈর কাজ হলো পথ দু’টি দেখিয়ে দেওয়া, তারপর মানুষ নিজের ইচ্ছায় বেছে নেবে।

_(খ). হিদায়াতুত তাওফীক:_ যখন কেউ আন্তরিকভাবে সত্যকে গ্রহণ করতে চায়, তখন আল্লাহ তার অন্তরকে দৃঢ় করেন এবং তাকে সঠিক মূল্যবোধে অটল রাখেন।

_৫.৫ দর্শন (Philosophy):_

_(ক). হিদায়াতুল ইরশাদ:_ এটি মানুষের বুদ্ধি, যুক্তি ও জ্ঞানচর্চার পরিসরে। মানুষ দাওয়াত শুনে ও চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

_(খ). হিদায়াতুত তাওফীক:_ এটি মানুষের জ্ঞান ও প্রচেষ্টার সীমা অতিক্রম করে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের ফল। এজন্য মানব ইতিহাসে এমন উদাহরণ আছে, নিকটজন থেকেও হিদায়াত পায়নি, যেমন আবু তালিব, আবার দূরের মানুষ মুহূর্তেই ঈমান পেয়েছে, যেমন বিলাল (রা.)।

_সংক্ষেপে:_ হিদায়াতুল ইরশাদ হলো মানুষের দায়িত্ব অর্থ্যৎ পথ দেখানো, শিক্ষা দেওয়া। আর হিদায়াতুত তাওফীক হলো আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ, অন্তরে ঈমান সৃষ্টি ও ঈমানকে দৃঢ় করা। আইন, নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও দর্শনের আলোকে এ দুই স্তর পরস্পর সম্পর্কিত হলেও স্পষ্টভাবে ভিন্ন।

*৬. উপসংহার:*

দাওয়াত ও তাওফীক, শব্দ দুইটি একে অপরের সম্পূরক। মানুষ দাওয়াতের মাধ্যমে সত্য জানতে পারে, আর আল্লাহর তাওফীকের মাধ্যমে অন্তরে ঈমান জন্মায়।

নবী-রাসূলের সীমাহীন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করেনি, আবার অনেকেই মুহূর্তে ঈমান লাভ করেছে। এটাই প্রমাণ করে যে দাঈর কাজ হলো পথ দেখানো, কিন্তু ফলাফল একমাত্র আল্লাহর হাতে।

এজন্য মুমিনের করণীয় হলো: দাওয়াতের কাজে আন্তরিক প্রচেষ্টা করা, নিজের জন্য ও অন্যদের জন্য আল্লাহর কাছে হিদায়াত প্রার্থনা করা, এবং আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা।

*আল্লাহ-হুম্মা সাল্লি, ওয়া সাল্লিম, ওয়া বারিক আ’লা মুহাম্মাদ; আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন*। (মূসা: ২৭-০৯-২৫)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category