শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৯ পূর্বাহ্ন
Headline :
বাংলাদেশ জোট মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল হাসেম ন্যাশনাল ইউনিটি কাউন্সিল(এনইউসি) এর মহাসচিব বিদ্যুৎ চন্দ্র বর্মনের বাণী: মানবতার মূর্ত প্রতীক: *অধ্যাপক ড. আলহাজ্ব মোঃ শরীফ আব্দুল্লাহ হিস সাকী শিক্ষাবিদ ও মানবতাবাদী এক অনন্য সমন্বয়* -ড. এ আর জাফরী বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটে মূল চিন্তাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত প্রধান উপদেষ্টা ফরহাদ মাজহার বগুড়া গাবতলী স্টেশনের রেলওয়ে কর্মচারীকে মারপিট করে আহত করে ২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় – দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে নতুন সম্ভাবনার দিগন্তে বাংলাদেশ ময়মনসিংহে পলাতক আসামী গেপ্ততার করেছে র‍্যাব ১৪ যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৩ বিজিবির অভিযানে ইয়াবাসহ আটক ১ বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বিএনপিরভারপ্রাপ্তচেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ দোয়া মাহফিল

*সুন্নাহর আইনগত মর্যাদা:* *কুরআন-ব্যাখ্যা ও নীতি-নৈতিকতা*

ডাঃ এম, জি, মোস্তফা মুসাঃ / ৯ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫

ডাঃ এম, জি, মোস্তফা মুসাঃ

*সুন্নাহর আইনগত মর্যাদা:*
*কুরআন-ব্যাখ্যা ও নীতি-নৈতিকতা*

_ভূমিকা:_ ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা প্রদান করে। এর মূল ভিত্তি কুরআন ও সুন্নাহ। কুরআন কেন্দ্রিক এবং সমাজে কুরআন প্রতিষ্ঠাকল্পে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) “কুরআন শিক্ষা কার্যক্রমের” অধীনে কুরআনের যে পাঠ, বর্ণনা, ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ (সকল বক্তব্য); প্রয়োগ ও প্র্যাকটিকাল (সকল কর্ম), তাঁর সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনা যা তিনি অনুমোদন করেছেন এবং তাঁর জীবনধারা, যা আল্লাহর নির্দেশনার বাস্তব রূপ, তাই হলো সুন্নাতে-রাসূল, তথা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাহ।

সুন্নাতে-রাসূল কেবল একটি আধ্যাত্মিক চর্চা নয়, বরং এটি আইন (Sharī‘ah Law), নীতি (Policy), নৈতিকতা (Ethical & Morality), মূল্যবোধ (Values) ও দর্শনের (Philosophy) সমন্বিত একটি জীবনচিত্র।

প্রথমত, আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে, সুন্নাহ হলো শরীয়াহর দ্বিতীয় উৎস, যা কুরআনের বিধানকে ব্যাখ্যা ও বাস্তবায়ন করে। উদাহরণস্বরূপ, সালাত, যাকাত, সিয়াম ও হজ্বের মৌলিক বিধান কুরআনে থাকলেও এর বিস্তারিত রূপ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাহ থেকেই জানা যায়।

দ্বিতীয়ত, নীতির ক্ষেত্রে, সুন্নাহ এমন নীতিমালা প্রদান করে যা মানবসমাজের স্থিতিশীলতা, ন্যায়বিচার ও কল্যাণ নিশ্চিত করে।

তৃতীয়ত, নৈতিকতার ক্ষেত্রে, সুন্নাহ আমাদেরকে সততা, ধৈর্য, সহমর্মিতা, অঙ্গীকার ও আমানতের মতো গুণাবলি অনুশীলনে উদ্বুদ্ধ করে, যা ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের উন্নতিতে অপরিহার্য।

আরও পড়ুনঃ দৈনিক সময়ের সংবাদ-এর ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

চতুর্থত, মূল্যবোধের ক্ষেত্রে, সুন্নাহ আমাদের জীবনে ঈমান, তাকওয়া, করুণা, ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য, সংহতী ও মানবিক মর্যাদার মতো মৌলিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করে।

পঞ্চমত, দর্শনের ক্ষেত্রে, সুন্নাহ জীবনকে শুধু পার্থিব সাফল্যের জন্য নয় বরং আখিরাতের সাফল্যের জন্যও পরিচালিত করে, যেখানে প্রতিটি কর্ম আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়।

সুতরাং, সুন্নাহ কেবল অতীতের ইতিহাস নয়—এটি বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্যও আইনগত কাঠামো, নীতিগত রূপরেখা, নৈতিক দিশা, মূল্যবোধের সংরক্ষণাগার এবং দর্শনের ভিত্তি। যে সমাজ সুন্নাহর এই বহুমাত্রিক প্রয়োগে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকে, সেখানে ন্যায়বিচার, শান্তি ও মানবিক মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।

নিচে প্রবন্ধের বিষয়বস্তুকে আইন, নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও দর্শন—এই পাঁচটি দৃষ্টিকোণ থেকে সংক্ষিপ্ত, স্পষ্ট ও গবেষণাশৈলীতে বিশ্লেষণ করা হলো। আল-হামদু লিল্লাহ।

*১. আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে: সুন্নাহর কুরআনিক ও হাদীসীয় ভিত্তি ও আইনী প্রয়োগ*

_(ক). উৎস ও কর্তৃত্ব:_ ইসলামিক আইনে (শরী‘আহ) কুরআনকে প্রধান উৎস ও সুন্নাহকে দ্বিতীয় উৎস বলে স্বীকৃত। কুরআনী নির্দেশগুলো প্র্যাকটিকাল অনুশীলনে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য সুন্নাহ অপরিহার্য, তাই সুন্নাহকে আইনগত বিধান নির্ধারণে সরাসরি কর্তৃত্ব দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনঃ আরাফাত রহমান কোকোর ৫৬ তম জন্মদিন উপলক্ষে গাবতলী মহিষাবান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত

কেউ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আনুগত্য করলে সে তো আল্লাহর আনুগত্য করল (সূরা নিসা, ৪:৮০); অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাহর আনুগত্য করলে সে তো কুরআন তথা আল্লাহরই অনুগত্য করল।রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আনুগত্য কেন ফরজ, কারণ “রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ” (সূরা আহযাব, ৩৩:২১)।

_(খ). নির্ধারণ ও ব্যাখ্যা:_ কুরআনে যেসব নীতিগত আদেশ আছে (যেমন সালাত ফরজ হওয়া) — তার বিশদ প্রয়োগ (সময়, রাক‘আত নির্ধারণ ইত্যাদি) সুন্নাহই প্রদান করে; ফলে আইন প্রণয়ের সময় সুন্নাহকে রেফারেন্স হিসেবে ধরা বাধ্যতামূলক।

_(গ). আইনী স্থিতিশীলতা ও প্রক্রিয়া:_ সুন্নাহর সংকলন ও মুহাদ্দিসদের কঠোর পরিশ্রমের ফলে হাদীস সংকলনের পদ্ধতি ও সনদ-মতনের যাচাই-বাছাই একটি সুসংগঠিত আইনি ফ্রেমওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। এই ন্যায়ব্যবস্থা ও প্রমাণ যাচাই প্রক্রিয়াগুলো শরীয়ah আইনকে নিয়মতান্ত্রিক, বিশ্বাসযোগ্য ও স্থিতিশীল করে তুলেছে, যা ইসলামী আইন প্রয়োগে নির্ভরযোগ্যতা এবং ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে।

_(ঘ). আইনি সমস্যা-সমাধান (ijtihad) ও সুন্নাহ:_ নতুন কোনো ঘটনা বা সমস্যার ক্ষেত্রে কুরআনের নীতি ও উদ্দেশ্য (maqasid) এবং সুন্নাহর বিধান একত্রে বিবেচনা করে মুজতাহিদরা আইনি সিদ্ধান্ত নেন। এখানে সুন্নাহ interpretive/operational ভূমিকা রাখে।

_(ঙ). প্রয়োগের উদাহরণ:_ সালাতের সুনির্দিষ্ট সময়, রাকাত সংখ্যা ও আদায় পদ্ধতি কেবল কুরআন থেকে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে কুরআনের সাধারণ নির্দেশনার ব্যাখ্যা ও বাস্তব প্রয়োগ সুন্নাহ দ্বারা স্পষ্ট হয়েছে। অর্থাৎ, কুরআনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সালাতের নিয়ম-কানুন নির্ধারণের দায়িত্ব সুন্নাহ পালন করে। যেমন বিখ্যাত হাদীসে এসেছে— জিবরীল (আ.) দুই দিনে মোট ১০ ওয়াক্ত সালাতে ইমাম হয়ে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর ইমামতি করে প্রতিটি সালাতের সময়, রাকাত সংখ্যা ও আদায়ের সকল নিয়ম-কানুন শিখিয়ে দেন (সহীহ মুসলিম)।

আরও পড়ুনঃ বগুড়ার গাবতলীতে যুব দিবস পালিত

*২. নীতির দৃষ্টিকোণ থেকে: সমাজ-নির্মাণ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সুন্নাহের ভূমিকা*

_(ক). নীতিগত রূপরেখা:_ কুরআনের নীতিগুলো (দারিদ্র বিমোচন, সামাজিক ন্যায়, করুণা, জনকল্যাণ, আমলগত জবাবদিহি) বাস্তবে কিভাবে চালু হবে, তার নীতিগত ধারাকে সুন্নাহ সুস্পষ্ট করে।

_(খ). রেসপন্সিবল পলিসি নির্মাণ:_ যেমন—যাকাতের লক্ষ্য, যাকাতের দীক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা নীতি ইত্যাদির বাস্তব কাঠামো সুন্নাহ ও সাহাবী কার্যকৌশলের উপর নির্ভর করে।

_(গ). দৈনন্দিন নীতি ও প্রশাসন:_ ঋণদেনা, লেনদেন, শান্তি ও নিরাপত্তা, বিচার, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য—এসব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কুরআন চিরন্তন মৌলিক নীতিমালা প্রদান করে। কিন্তু সেই নীতিগুলোকে বাস্তবে কার্যকর করার সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ও প্রক্রিয়া আমরা পাই সুন্নাহ থেকে, যা নীতিগত নির্দেশনা (policy instruments) হিসেবে কাজ করে। ফলে নীতি শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং জীবনের প্রতিটি স্তরে প্রয়োগযোগ্য ও কার্যকর হয়ে ওঠে।

_(ঘ). নীতি তৈরিতে উদারতা ও স্থিতিশীলতা:_ সুন্নাহ এমন বহু নীতির দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে যা সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী অভিযোজিত হতে পারে। এতে নীতি নির্ধারণে প্রয়োজনীয় নমনীয়তা নিশ্চিত হয়, তবে একই সঙ্গে ইসলামী শিক্ষার ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা ও মৌলিক মূল্যবোধ অক্ষুণ্ণ থাকে। এই ভারসাম্য নীতি প্রণয়ন ও প্রয়োগে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা এবং সমাজের বাস্তব চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি বজায় রাখতে সহায়তা করে, যা সুস্থ ও সংগঠিত সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

_(ঙ). বাস্তব জীবনের দৃষ্টান্ত (ব্যবহারিক উদাহরণ):_ কুরআন দরিদ্র ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার মৌলিক নীতি প্রদান করে, আর সুন্নাহ নির্দিষ্ট পরিবার ও শ্রেণির কল্যাণের জন্য বাস্তবিক দিকনির্দেশনা দেয়; এই মিলিত শিক্ষা রাষ্ট্রীয় সামাজিক নীতিতে পরিণত হয়ে সমাজে ন্যায় ও সমতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে।

*৩. নৈতিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে: চরিত্র, আদর্শ ও আচরণগত নির্দেশনা*

_(ক). আচরণগত আদর্শ:_ কুরআন নৈতিক রূপরেখা দেয়, যেমন সৎকর্ম, সত্য, ধৈর্য, ক্ষমাশীলতা ইত্যাদি; সুন্নাহ এই নীতিগুলোকে জীবন্ত করে তুলেছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চরিত্রিক প্রদর্শনের মাধ্যমে (উসওয়াতুল হাসানা)। (সূরা আহযাব, ৩৩:২১)!

_(খ). বিবেচনা ও প্রতিষ্ঠিত রীতি:_ সুন্নাহ শুধু নৈতিক আদেশই দেয় না, বরং শেখায় কীভাবে কঠিন ও জটিল পরিস্থিতিতেও সঠিক নৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জীবন থেকে উদাহরণ পাওয়া যায়—যেমন প্রজ্ঞাপূর্ণ সিদ্ধান্ত, ক্ষমাশীলতা, এবং ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত—যা মুসলিম সমাজে স্থায়ী ও কার্যকর নৈতিক চর্চার ভিত্তি গড়ে তোলে।

_(গ). দায়বদ্ধতা ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্নতা:_ কুরআনের নৈতিক নির্দেশনা শুধু মুখস্থ বা তাত্ত্বিক জ্ঞান নয়; সুন্নাহকে জীবনে অনুশীলন করলে সেগুলো অভ্যাসে রূপ নেয়। এই অনুশীলন মুমিনকে দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহভীতি (তাকওয়া) ও নৈতিক দায়িত্ববোধে দৃঢ় করে। সুন্নাহর অনুসরণ মানুষকে শুধু বাহ্যিক আচরণে নয়, অন্তরের গভীরে সৎ চিন্তা, ন্যায়বোধ ও অন্তর্দৃষ্টি গড়ে তুলতে সাহায্য করে। ফলে নৈতিক দর্শনের এই বাস্তবমুখী অংশ ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের জীবনে একটি স্থায়ী নৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করে।

_(ঘ). সামাজিক-নৈতিক শিক্ষা:_ সুন্নাহ কেবল ব্যক্তিগত নৈতিকতা নয়, সমাজে নৈতিক আচরণ প্রতিষ্ঠার ও নির্দেশনার মাধ্যম (যেমন সততা, ন্যায়পরায়ণতা, স্বচ্ছতা, প্রতিবেশীর প্রতি যত্ন ও সহানুভূতি প্রদর্শন)।

_(ঙ). নৈতিকতার জীবন্ত দৃষ্টান্ত:_ মানুষের সাথে আচরণে ‘সদাচরণ’ শুধু তত্ত্বে সীমাবদ্ধ নয়; কুরআন নির্দেশ দেয় শ্রদ্ধা, মর্যাদা ও ন্যায় বজায় রাখতে, আর সুন্নাহ সেই নির্দেশনার বাস্তব রূপ তুলে ধরে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিরোধ, বিতর্ক বা মতবিরোধের সময় নম্রতা, ক্ষমা, সুবিবেচনা ও ধৈর্যের এমন উদাহরণ স্থাপন করেছেন, যা দেখায়—প্রকৃত নৈতিকতা কেবল আদেশ মানা নয়, বরং হৃদয় থেকে আচরণে রূপ দেওয়া।

আরও পড়ুনঃ শিবগঞ্জে আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে র‍্যালি ও আলোচনা সভা

*৪. মূল্যবোধের দৃষ্টিকোণ থেকে: সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও আধ্যাত্মিক মাপকাঠিতে সুন্নাহ*

_(ক). মূল্যবোধের উৎস:_ কুরআন মৌলিক ধর্মীয় মূল্যবোধ নির্ধারণ করে (তাওহীদ, ন্যায্যতা, সততা, বিনয়, কল্যাণমানসিকতা); সুন্নাহ সেই মূল্যবোধকে সাংস্কৃতিক ও অনুশীলনী রূপে রূপায়িত করে।

_(খ). শিক্ষাগত ধারাবাহিকতা:_ শিশু ও তরুণকে মৌলিক মূল্যবোধ শেখাতে সুন্নাহর জীবনী ও দৃষ্টান্ত ব্যবহার করা হয়, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিমের মতো নামগুলো বৈধতার সঙ্গে তালিকাভুক্ত।

_(গ). সাংস্কৃতিক স্থায়িত্ব:_ সামাজিক অনুশাসন, উৎসব-ঐতিহ্য, দায়িত্ববোধ ইত্যাদি সুন্নাহর মাধ্যমে একটি স্থায়ী মূল্যবোধের সংস্কৃতিতে রূপ নেয়—যা যুগে যুগে ধারাবাহিক থাকে।

_(ঘ). আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ:_ কুরআন ইহকালীন জীবনের মাপকাঠি ও পরকালীন উপলব্ধি আদর্শ প্রদান করে, অন্যদিকে সুন্নাহ ব্যক্তি মনোভাবকে আধ্যাত্মিকভাবে দৈনিক ইবাদত ও নৈতিক অভ্যাস গঠনে সহায়তা করে।

_(ঙ). প্রয়োগ উদাহরণ:_ কুরআন সমাজে দান, দায়ত্বও পরোপকারের নির্দেশ দেয়; সুন্নাহ কীভাবে দানকে মর্যাদাপূর্ণ ও নিয়মিত করা যায় তা শেখায় (রাসূলের জীবনীকথা)।

*৫. দর্শনের দৃষ্টিকোণ থেকে: জ্ঞানের থিওরি, অনুশীলনী প্রজ্ঞা ও ধর্মতত্বে সুন্নাহর প্রয়োগ*

_(ক). ওহী ও মানবিক অজস্রতা:_ কুরআন হলো নাজিলকৃত আল্লাহর নিখুঁত তত্ত্ব ও বাণী, যা ধর্মতত্ত্বের ভিত্তি গড়ে তোলে। আর সুন্নাহ হলো সেই তত্ত্বের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ ও ব্যাখ্যা, যা মানুষের অসংখ্য ও বহুমুখী অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা ও নৈতিক বোধের সঙ্গে মিলিত হয়। এখানে “মানবিক অজস্রতা” বলতে বোঝানো হয়েছে মানুষের জীবন, সমাজ, সংস্কৃতি, এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে অর্জিত বহুপ্রকার জ্ঞান ও নৈতিকতা, যা সুন্নাহর মাধ্যমে সুসংহত ও পরিচালিত হয়।

অর্থাৎ, কুরআনের ঐশ্বরিক নির্দেশনা ও সুন্নাহর মানবিক জ্ঞানের বিশাল ভাণ্ডার একত্রে ধর্মতত্ত্ব এবং বাস্তবজ্ঞান হিসেবে কাজ করে। কুরআন বিজ্ঞানের দিক (ওহী) এবং সুন্নাহর হিকমাহ ও জীবনব্যবস্থার বোধ একসাথে মিলে ইসলামী জীবনব্যবস্থাকে পরিপূর্ণতা দেয়। (সূরা নিসা, ৪:১১৩; সূরা কিয়ামাহ, ৭৫:১৭-১৯)।

_(খ). জ্ঞানতাত্ত্বিক ভিত্তি (epistemology):_ ইসলামী জ্ঞানের প্রধান ও কেন্দ্রীয় পাঠসমষ্টি বা মূল জ্ঞানভাণ্ডার (কোরপাস) হিসেবে কুরআনকে গ্রহণ করা হলেও, ‘জ্ঞান কিভাবে প্রাপ্ত হবে’—এখানে সুন্নাহ নির্দেশনা দেয় (যেমন জিবরীল (আ.)-এর ইমামত এবং তাঁর পক্ষ থেকে কুরআনের ব্যাখ্যা ইত্যাদি)। এভাবে ওহী থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান এবং মানবীয় অভিজ্ঞতা-নির্ভর জ্ঞানের মধ্যে সমন্বয় সাধিত হয়।

_(গ). অ্যাকশন-অরেরেন্টেড ফিলোসফি:_ ধর্মীয় দর্শনে কেবল বিশ্বাস নয়, আচরণও অপরিহার্য; সুন্নাহ দর্শনগতভাবে “বিদ্যমানতা-এবং-কর্ম” (being-and-doing) উভয়কেই যুক্ত করে।

_(ঘ). নৈতিক দর্শন ও উদ্দেশ্য (Maqasid):_ শরীয়ার উদ্দেশ্য হলো জীবন রক্ষা, জ্ঞান/বুদ্ধি সংরক্ষণ, বংশধারা রক্ষা, সম্পদ সংরক্ষণ, ঈমান/ধর্ম রক্ষা তথা কুরআনি মূল্য নির্ধারণ; সুন্নাহ এসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কৌশল সরবরাহ করে।

_(ঙ). তত্ত্ব ও অনুশীলন সংলাপ:_ Pphilosophy of Religion)-এ সুন্নাহ কেবল রূপ বা তাত্ত্বিক কাঠামো নয় বরং কুরআনকে কার্যতান্ত্রিক অর্থে নির্মাণ করে, এটি ধর্মদর্শনের একটি কার্যকরি মডেল প্রদান করে।

_(চ). প্রয়োগ উদাহরণ:_ বিশ্বাস ও আমলের সম্পর্ক: কুরআন বিশ্বাসের নির্দেশ দেয়; সুন্নাহ দেখায় বিশ্বাস কীভাবে কার্যদক্ষতায় রূপ নেয় (ঈমানের বহিঃপ্রকাশ—আচরণ ও আমল)।

*উপসংহার:* কুরআন ও সুন্নাহ একে অপরের পরিপূরক: কুরআন তাত্ত্বীক; সুন্নাহ তা জীবন্ত, প্রয়োগযোগ্য, নৈতিক ও আইনি রূপে রূপায়িত করে।

আইনগতভাবে সুন্নাহর মাধ্যমেই কুরআনের বাস্তব প্রয়োগ সম্পূর্ণ; নীতিগতভাবে তা নীতির রূপায়ন; নৈতিক ও মূল্যবোধগতভাবে তা চরিত্র-গঠন ও সামাজিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় অপরিহার্য; দর্শনগতভাবে এটি কুরআনকে ‘অ্যাকশন-ওরিয়েন্টেড’ করে।

ফলে “সুন্নাতে-রাসূল মূলত সুন্নাতে-আল্লাহ”, এই ঘোষণাটি কেবল ধর্মীয় দাবিই নয়; আইনী, নীতিগত, নৈতিক, মূল্যবোধগত ও দার্শনিক দিক থেকেও সুসংহত ও যৌক্তিক।

*আল্লাহ-হুম্মা সাল্লি, ওয়া সাল্লিম, ওয়া বারিক আ’লা মুহাম্মাদ; আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন*। (মূসা: ১২-০৮-২৫)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category