লেখক সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনঃ
*বিপদ-আপদ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলার বাণী*
بسم الله الرحمن الرحيم
قال تعالى: وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَىْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوْعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْاَمْوَالِ وَالْاَنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ وَبَشِّرِ الصَّابِرِيْنَ ﴿١٥٥١٥٥﴾ الَّذِيْنَ اِذَا اَصَابَتْهُمْ مُّصِيْبَةٌ قَالُوْا اِنَّا لِلّٰهِ وَاِنَّا اِلَيْهِ رَاجِعُونَ ﴿١٥٦﴾ اُولٰٓئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُوْنَ ﴿﴾١٥٧
অর্থঃ আমি তোমাদের কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। আর সুসংবাদ শুনিয়ে দিন এমন ধৈর্যশীলদেরকে, যখন তাদের উপর মুসীবত আসে তখন তারা বলে, আমরা তো আল্লাহরই আয়ত্তে, আর আমরা সকলে আল্লাহরই সমীপে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের প্রতি বর্ষিত হবে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে বিশেষ করুণাসমূহ, এবং সাধারণ করুণাও। আর এরাই এমন লোক যারা হেদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছে। (সূরা বাকারা ১৫৫-১৫৭)
কারণঃ সতর্ক সংকেত দিয়ে গোমরাহী থেকে হেদায়াতের পথে ফিরে আসার সুযোগ প্রদান*
বান্দা যখন অপরাধের মাত্রা ছাড়িয়ে যায় এবং লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে তখন আল্লাহ তা‘আলা বিপদাপদের মাধ্যমে তরে জন্য কিছুটা শাস্তির ব্যবস্থা করেন- যেন তার হুশ হয় এবং সুপথে ফিরে আসে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন-১
﴾وَلَنُذِيْقَنَّهُمْ مِّنَ الْعَذَابِ الْاَدْنٰى دُوْنَ الْعَذَابِ الْاَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ ﴿٤١
অর্থঃ আর আমি তাদেরকে নিকটবর্তী (ইহকালীন) শাস্তিও আস্বাদন করাব আখিরাতের সেই মহাশাস্তির পূর্বে যেন তারা (বিপদাক্রান্ত হয়ে সুপথে) ফিরে আসে। (সূরা আলিফ-লাম-মীম-সিজদা-২১)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন-২
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِىْ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ اَيْدِىْ النَّاسِ لِيُذِيْقَهُمْ بَعْضَ الَّذِىْ عَمِلُوْا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ ﴿﴾٤١
অর্থঃ (স্থলভাগে) ও জলভাগে মানুষের নিজ কৃতকর্মসমূহের দরুন নানা প্রকার বালা-মুসীবত ছড়িয়ে পড়ছে, যেন আল্লাহ তাদের মন্দ কাজের কিছু অংশের স্বাদ উপভোগ করান, যাতে তারা (তা হতে) ফিরে আসে। (সূরা রুম-৪১)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন-৩
وَبَلَوْنَاهُمْ بِالْحَسَنَاتِ وَالسَّيِّئَاتِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ ﴿﴾١٦٨
অর্থঃ আর আমি তাদেরকে পরীক্ষা করে থাকি, সু-অবস্থা ও দুরবস্থা দ্বারা, যেন তারা ফিরে আসে। (সূরা আরাফ-১৬৮)
আল্লাহ তা ‘আলা বলেন -৪
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا اِلٰى اُمَمٍ مِّنْ قَبْلِكَ فَاَخَذْنَاهُمْ بِالْبَاْسَآءِ وَالضَّرَّآءِ لَعَلَّهُمْ يَتَضَرَّعُوْنَ ﴿﴾٤٢
অর্থঃ আর আমি আপনার পূর্বে অন্যান্য উম্মতের নিকটও পয়গাম্বর প্রেরণ করেছিলাম, অনন্তর আমি তাদেরকে অভাব-অনটন ও রোগ-ব্যাধি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম, যেন তারা বিনীত হয়ে পড়ে। (সুরা আনআম-৪২)
আরও পড়ুনঃ মহাদেবপুর উপজেলার চান্দাশ ইউনিয়ন এর ৮নং ওয়ার্ড বিএনপি আয়োজিত উঠান বৈঠক
জানা গেল, আল্লাহ তা‘আলা মানুষের উপর বিপদাপদ অবতীর্ণ করে তাদেরকে সুপথে ফিরিয়ে আনতে চান। আর বলাবাহুল্য যে, এতে আল্লাহ তা‘আলার কোন ফায়দা নেই; বরং সুপথে প্রত্যাবর্তনের যা লাভ তার পুরোটাই স্বয়ং সেই বান্দার।
কারণঃ পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে বান্দাকে যাচাই করা এবং তাকে জান্নাতের উপযোগী করে তোলা*
আল্লাহ তা‘আলা সবকিছু জানা সত্ত্বেও মাখলুককে সাক্ষী রাখার জন্য বান্দাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার লক্ষ্যে তার উপর বিপদাপদ ও পেরেশানী চাপিয়ে দেন। নিজে দেখেন এবং মাখলুককে দেখান যে, বান্দা বিপদে পড়ে তার প্রতিপালকের সঙ্গে কী আচরণ করে? সে কি আল্লাহর ফায়সালায় একাত্ম হয়ে ধৈর্যধারণ করে এবং আনুগত্য বাড়িয়ে দেয়, না কি হতাশ হয়ে বিদ্রোহ করে বসে এবং নাফরমানীতে লিপ্ত হয়। বাস্তবতা হল, অধিকাংশ বান্দা-ই এই পরীক্ষায় অযোগ্যতার পরিচয় দেয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
وَاِذَا اَذَ قْنَا النَّاسَ رَحْمَةً فَرِحُوْا بِها وَاِنْ تُصِبْهُمْ سَىِّئَةٌ ۢبِمَا قَدَّ مَتْ اَ يْدِ يْهِمْ اِذَا هُمْ يَقْنَطُوْ نَ ﴿٢﴾– سو ر ة ا لر وم ٣٦
অর্থঃ আর যখন মানুষকে আমি কিছু অনুগ্রহ উপভোগ করাই তখন তারা আনন্দিত হয়; আর যদি তাদের উপর তাদের নিজেদের পূর্বকৃতকর্মের কারণে কোন বিপদ নেমে আসে, তখন তারা হতাশ হয়। (সূরা রুম-৩৬)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে –
وَاَمَّا اِذَا مَا ابْتَلٰهُ فَقَدَرَ عَلَيْهِ رِزْقَهٗ فَيَقُوْلُ رَبِّىْ اَهَانَنِ سو ر ة الفجر – ١٦
অর্থঃ আর যখন আল্লাহ তার বান্দার রিযিক সংকুচিত করে তাকে পরীক্ষা করেন তখন সে বলে, আমার প্রতিপালক আমাকে অপমান করেছেন। (আল্লাহর পানাহ) সূরা ফাজর-১৬০
আরও পড়ুনঃ জলঢাকায় মাদকদ্রব্য ৬০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট সহ আটক ১
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা ঝালিয়ে দেখেন যে, বান্দা জান্নাতের অনন্ত-অফুরন্ত নেয়ামতরাজির উপযুক্ত কি না। কারণ জান্নাত কোন সস্তা সওদা নয়; বিনা যোগ্যতায় কাউকে তা প্রদান করা হয় না। জান্নাত তো আল্লাহ তা‘আলা মুমিনের জান ও মালের বিনিময়ে খরীদ করে নিয়েছেন। তো আল্লাহ তা’আলার তার খরীদা (বস্তুর) উপর বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন যে, বান্দা এসব পরিস্থিতিতে কি আচরণ করে একজন কৃতজ্ঞ বান্দার পরিচয় দেয়, না কৃতঘ্ন আচরণ করে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলার বাণী-১
الٓمٓ ﴿١﴾ اَحَسِبَ النَّاسُ اَنْ يُّتْرَكُوْا اَنْ يَّقُوْلُوْا اٰمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُوْنَ ﴿٢﴾ وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِيْنَ ﴿﴾٢
অর্থঃ আলিফ-লাম-মীম (এর অর্থ আল্লাহ জানেন)। তারা কি এ ধারণা করেছে যে, একথা বলেই অব্যাহতি পারে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি‘- আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আর আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম যারা তাদের পূর্বে অতীত হয়ে গেছে সুতরাং আল্লাহ সেই লোকদেরকে জেনে নিবেন- যারা সত্যবাদী ছিল এবং মিথ্যাবাদীদেরকেও জেনে নিবেন। (সূরা আনকাবূত-১-৩)
আল্লাহ তা ‘আলার বাণী-২
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَاْتِكُمْ مَّثَلُ الَّذِيْنَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَّسَّتْهُمُ الْبَاْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوْا حَتّٰى يَقُوْلَ الرَّسُوْلُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ مَتٰى نَصْرُ اللّٰـهِ اَلَا اِنَّ نَصْرَ اللّٰـهِ قَرِيْبٌ ﴿﴾٢١٤
অর্থঃ তোমরা কি মনে কর যে, (বিনা শ্রমে) জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ এখনও পূর্ববর্তীদের ন্যায় তোমাদের সামনে কোন কঠিন বিপদের ঘটনা ঘটেনি। যারা তোমাদের পূর্বে অতীত হয়েছে তাদের উপর এমন এমন অভাব ও বিপদ-আপদ এসেছিল এবং তারা এমন প্রকম্পিত হয়েছিল যে, স্বয়ং রাসূল ও তার মুমিন সাথীরা বলে উঠেছিলেন, ‘আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে?‘ স্মরণ রেখো! আল্লাহর সাহায্য আসন্ন। (সূরা বাকারা-২১৪)
আরও পড়ুনঃ জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বিজয় মিছিল উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক আলোচনা সভা প্রধান অতিথি সাইফুল ইসলাম
আল্লাহ তা‘আলার বাণী-৩
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَىْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوْعِ وَنَقْصٍ ۢمِّنَ الْاَمْوَالِ وَالْاَنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ وَبَشِّرِ الصَّابِرِيْنَ ﴿﴾١٥٥
অর্থঃ আমি তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলদেরকে। (সূরা বাকারা-১৫৫)
আল্লাহ তা‘আলার বাণী-৪
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتّٰى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِيْنَ مِنكُمْ وَالصَّابِرِيْنَ وَنَبْلُوَ اَخْبَارَكُمْ ﴿﴾٣١
অর্থঃ আমি অবশ্যই তোমাদের সকলকে পরীক্ষা করব তাদেরকে জেনে নেয়ার জন্য, যারা তোমাদের মধ্যে দ্বীনের জন্য ত্যাগী ও দৃঢ় পদ। আর তোমাদের অবস্থাও আমি যাচাই করে নেব। (সূরা মুহাম্মদ-৩১)
আল্লাহ তা‘আলার বাণী-৫
وَنَبْلُوْكُمْ بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً وَاِلَيْنَا تُرْجَعُوْنَ ﴿﴾٣٥
অর্থঃ আমি তোমাদেরকে বিপদ ও নিয়ামত দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই নিকট তোমরা প্রত্যানীত হবে। (সূরা আম্বিয়া-৩৫)
এ প্রসঙ্গে নবীজীর বাণী
عن أنس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم:إن عظم الجزاء مع عظم البلاء وإن الله إذا أحب قوما ابتلاهم فمن رضى فله الرضا ومن سخط فله (২৩৯৬)السخط رواه الترمذى الحديث
অর্থঃ হযরত আনাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, বড় প্রতিফল বড় বিপদের বিনিময়েই। আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন সম্প্রদায়কে ভালোবাসেন তাদেরকে বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। সুতরাং যে এতে সন্তুষ্ট থাকে তার জন্য আল্লাহ তা‘আলার সন্তোষই রয়েছে এবং বিপদে যে অসন্তুষ্ট তার জন্য অসন্তোষই রয়েছে। (তিরমিযী)
উপর্যুক্ত আয়াত ও হাদীসসমূহ দ্বারা জানা গেল যে, আল্লাহ তা‘আলা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাইয়ের উদ্দেশ্যে বান্দার উপর বিপদাপদ চাপিয়ে দেন।
আরও পড়ুনঃ বগুড়া গাবতলী মহিষাবান ইউনিয়নের পার রানীর পাড়া মসজিদ এর উন্নয়নকল্পে আর্থিক সহায়তার প্রদান
কারণঃ*
বান্দার গুনাহ মাফ ও মর্যাদা বৃদ্ধি করা
আল্লাহ তা‘আলা কখনও বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করার জন্য তাকে বিপদাপদ ও বালা-মুসীবতে গ্রেফতার করে থাকেন। অর্থাৎ, আল্লাহ তা‘আলা বান্দাকে একটি বিশেয মর্যাদা প্রদান করতে চান; কিন্তু বান্দার পক্ষে আমলের দ্বারা সেই মর্যাদা লাভ করা সম্ভব নয়। অথবা তিনি বান্দার গুনাহ ক্ষমা করে দিতে চান কিন্তু বান্দা তাওবা-ইস্তিগফারে মনোযোগী নয়; তখন আল্লাহ তা‘আলা বান্দার উপর বিপদাপদ চাপিয়ে দেন। ফলে বান্দা সেই বিপদে ধৈর্যধারণ করে এবং তার অন্তরও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, এর দ্বারা আল্লাহর তা‘আলা তাকে নির্ধারিত সেই মর্যাদা দান করেন এবং তার গুনাহ মাফ করে দেন।
এ প্রসঙ্গে হাদীসের বাণী-১
عن اَ بي هر ير ة رضي ا لله عليه قا ل قا ل رسو ل ا الله صلي الله اِنَّ الرَّ جُلَ لَيَكُوْ نُ لَه عِنْدَ اللهِ ا لْمَنْزِ لَةُ فَمَا يَبْلُغُهَا بِعَمَلِه فَمَا يَزَ ا لُ ا للهُ يَبْتَليْهِ بِمَا يَكْرَ هُ حَتّي يَبْلُغُهَا
অর্থঃ হযরত আবূ হুরাইরা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা‘আলার নিকট কোন ব্যক্তির জন্য একটি উচ্চ মর্যাদা নির্ধারিত থাকে। কিন্তু সে নিজের আমলের মাধ্যমে উক্ত মর্যাদায় পৌছতে পারে না। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে এমন এমন জিনিসের দ্বারা আক্রান্ত করতে থাকেন যা তার জন্য বাহ্যিকভাবে কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। (যেমন রোগ-শোক, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি) অবশেষে সে এসব পেরেশানীর উসিলায় উক্ত মর্যাদায় পৌঁছে যায়। (মুসনাদে আবূ ইয়ালা, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৩/১৩)
এ প্রসঙ্গে নবীজীর বাণী-২
عن أبي موسى أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال لا يصيب عبدا نكبة فما فوقها أو دونها إلا بذنب وما يغفو الله عنه أكثر قال وقرأ { وما أصابكم من مصيبة فبما كسبت أيديكم ويعفو عن كثير } رواه الترمذى الحديث ()٣٢٥٢
অর্থঃ হযরত আবূ মূসা আশআরী রা. হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, বান্দার প্রতি যে দুঃখ পৌঁছে থাকে, চাই তা বড় হোক বা ছোট হোক- তা নিশ্চয়ই অপরাধের কারণে, অবশ্য আল্লাহ তা‘আলা তার অধিকাংশ গুনাহগুলি নিজ দয়ায় ক্ষমা করে দেন। অতঃপর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমর্থনে আয়াত তিলাওয়াত করলেন-
وما أصابكم من مصيبة فبما كسبت أيديكم ويعفو عن كثير
অর্থঃ তোমাদের প্রতি যে বিপদ পৌঁছে, তা তোমাদের কৃতকর্মের দরুন, আর আল্লাহ অনেক গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিযী)
আরও পড়ুনঃ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে ২০০০ পিস ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেটসহ আটক-১
হাদীসের বাণী-৩
عن عائشة قالت قال رسول الله صلى الله عليه و سلم إذا كثرت ذنوب العبد ولم يكن له ما يكفرها من العمل ابتلاه الله عز و جل بالحزن ليكفرها عنه رواه احمد الحديث ()٢٥٢٧٥
হযরত আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন বান্দার গুনাহ অধিক হয়ে যায় এবং সেগুলোর প্রায়শ্চিত্তের মত তার কোন নেক আমল না থাকে তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে বিপদ দ্বারা চিন্তাগ্রস্ত করেন যাতে তার গোনাহের প্রায়শ্চিত্ত করে দিতে পারেন। (আহমদ)
হাদীসের বাণী-৪
عن محمود بن لبيد ان رسول الله صلى الله عليه و سلم قال ان الله عز و جل إذا أحب قوما ابتلاهم فمن صبر فله الصبر ومن جزع فله الجزع. رواه أحمد الحديث ()٢٣٦٧٢
অর্থঃ হযরত মাহমূদ ইবনে লাবীদ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন সম্প্রদায়কে ভালোবাসেন, তখন তাদেরকে (বিপদে ফেলে) পরীক্ষা করেন। তারপর যে ধৈর্যধারণ করে তার জন্য ধৈর্যধারণ (এর অফুরন্ত সাওয়াব) লিখা হয়, আর যে অধৈর্য হয়ে পড়ে তার জন্য বে-সবরী (এর গুনাহ) লিখে দেয়া হয়। (ফলে সে কেবল কান্নাকাটি ও হা-হুতাশ-ই করতে থাকে)। (মুসনাদে আহমাদ, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৩/১১)
উপর্যুক্ত প্রমাণসমৃদ্ধ আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট হল যে, আল্লাহ তা‘আলা মুমিন বান্দাকে ধ্বংস করার জন্য বিপদে নিপতিত করেন না। বরং তাকে ভালোবাসেন বলেই বিপদাপদের মাধ্যমে তাকে জান্নাতের উপযোগী করে তুলতে চান; তার মর্যাদা বৃদ্ধি করতে ও গুনাহ মাফ করতে চান, সর্বোপরি সতর্ক সংকেত দিয়ে তাকে ভালো হওযার সুযোগ দিতে চান।
বিপদগ্রস্ত কোন ব্যক্তি তা সে যত বড় বিপদেই আক্রান্ত হোক না কেন, উপর্যুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চিন্তা করলে বিপদে তার ধৈর্যধারণ অত্যন্ত সহজ হয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে প্রথমত বিপদাপদ থেকে হিফাযত করুন, দ্বিতীয়ত কোন কারণে বিপদাপদ এসে গেলে তাতে ধৈর্যধারণ করার এবং তা থেকে উপকৃত হওয়ার ও নসীহত হাসিল করার তৌফিক দান করুন -আমীন।
*করণীয়-১*
এটাকে সতর্ক সংকেত মনে করবে পূর্বে বলা হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা পরীক্ষা গ্রহণ, মর্যাদা বৃদ্ধি, গুনাহ মাফ এবং সতর্ক সংকেত হিসেবে বিপদাপদ দিয়ে থাকেন, কিন্তু একজন মুমিন বিপদগ্রস্ত হলে সর্বপ্রথম সে এটাকে নিজের মন্দ আমলের প্রতিক্রিয়া মনে করবে এবং ধারণা করবে যে, সতর্ক করে দেয়ার জন্যই তাকে বিপদে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর উপকারিতা হল, এতে সে ভীত-কম্পিত হয়ে পূর্বকৃত আমলের হিসাব-নিকাশ শুরু করবে এবং ভুল-ভ্রান্তিগুলো চিহ্নিত করবে অতঃপর তাওবা-ইস্তিগফার করে আমল সংশোধনের ফিকির করবে।
পক্ষান্তরে যদি সে এটাকে সতর্ক সংকেত মনে না করে প্রথমেই মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ মনে করে বসে, তাহলে সে নিজের প্রতি সুধারণা বশতঃ আমল সংশোধনে মনোযোগী হবে না। ফলে অবশেষে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। কেননা, হয়তো বিপদ এসেছিল তাকে সতর্ক করতে কিন্তু সে রয়ে গেল আগের মতই নিচেষ্ট ও উদাসীন। তবে আমল সংশোধন করে নেয়ার পর বিপদাপদকে গুনাহ মাফ ও মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ মনে করাতে কোন সমস্যা নেই, বরং সেটা আরও ভালো। কেননা, এতে মনোবল চাঙ্গা থাকে, হতাশা দূরীভূত হয় এবং ইহতিসাব তথা সওয়াবের নিয়ত থাকাতে অতিরিক্ত সাওয়াবও পাওয়া যাবে।