মোহাম্মদ জাকিরুল্লাহ পাতা
ক্রীড়া সাংবাদিক,
বাংলাদেশ ফুটবলে নতুন ইতিহাস রচিত হলো। দীর্ঘ ২২ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ভারতকে পরাজিত করল লাল-সবুজের ছেলেরা। ২০০৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ২-১ গোলের স্মরণীয় জয়ের পর ভারতের বিপক্ষে আর কোনো সাফল্য ছিল না। বহু সমালোচনা, হতাশা ও ব্যর্থতার পাহাড় পেরিয়ে নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়রা এনে দিল সেই কাঙ্ক্ষিত জয়।
ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের পাশাপাশি প্রায় দুই যুগ পর মালদ্বীপকে হারিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে আবারও নিজেদের শক্তির জানান দিল বাংলাদেশ। বহুক্ষণ ধরে ছন্দহীন থাকা দলটিকে নতুন উদ্যমে ফিরিয়ে এনেছে এই জয়গুলো।
নেপালের মাঠে ও ঘরের মাঠে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে জয়ের দেখা না পেলেও এবার সেই ব্যর্থতার শিকল ভেঙেছে বাংলাদেশ। ধারাবাহিক সাফল্য দলের আত্মবিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করেছে।
হামজা, সোমিত ও ফাহমিদুলের মতো তরুণ ফুটবলারদের আগমনে যেন বদলে গেছে দলের চেহারা। মাঠে গতি, পাসিং, সমন্বয়—সবই যেন নতুন রূপ পেয়েছে। বিশেষ করে হামজার অসাধারণ বাইসাইকেল কিকের গোলটি দর্শকদের মনে ফিরিয়ে এনেছে কিংবদন্তি আসলামের স্মৃতি।
দলের খেলায় উন্নতি স্পষ্ট হলেও মূল সমস্যাটা এখনও রয়ে গেছে—কার্যকর স্ট্রাইকারের অভাব। সুযোগ তৈরি হচ্ছে কিন্তু শেষ মুহূর্তে গোল আদায় করে নেওয়ার মতো একজন নির্ভরযোগ্য স্ট্রাইকারের প্রয়োজন তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আক্রমণভাগের জন্য আলাদা প্রশিক্ষণ ক্যাম্প এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা জরুরি।
বিশ্বকাপ ফুটবল বাছাইপর্বে জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, পর্তুগালের মতো দলগুলো গোলের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে। ছোট দল নরওয়ে যেভাবে ধারাবাহিক জয়ে বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে, তা বাংলাদেশ দলের জন্যও প্রেরণাদায়ক। জয়ের চাবিকাঠি একটাই—গোল। সুযোগ পেলেই গোল করতে হবে, তাহলেই বড় টুর্নামেন্টে সাফল্য ধরা দেবে।
বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা বিশ্বাস করেন—এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে আগামী দিনের বাংলাদেশ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। ঠিক যেমন ২২ বছর পর ভারতকে হারিয়ে নতুন ইতিহাস তৈরি হলো, তেমনই সামনে আরও বড় সাফল্যের স্বপ্ন দেখছে দলটি।
ফুটবল গোলের খেলা—যে দল বেশি গোল করে সে-ই বিজয়ী। আর এবার বাংলাদেশ সেটাই প্রমাণ করেছে।
এই জয়ের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের ফুটবলাররা জানিয়ে দিল—বাংলাদেশ ফুটবল আবারো ঘুম থেকে জেগে উঠছে।