"ডা. মুহাম্মাদ গোলাম মোস্তফা মূসা"ঃ
*সুলাইমান (আ.)-এর বিচার-ফয়সালার*
*মধ্যে রয়েছে পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচার*
_১. ভূমিকা:_ ন্যায়বিচার মানুষের সভ্যতা ও সমাজব্যবস্থার ভিত্তি। আর ইসলামী ন্যায়বিচারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মানবিকতা ও সংশোধনের সুযোগ। শাস্তিমূলক বিচারব্যবস্থা (Punitive Justice) যেখানে কেবল অপরাধের প্রতিফলন হিসেবে শাস্তির ওপর জোর দেয়।
সেখানে পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচার (Restorative Justice) অপরাধ, অপরাধী এবং ভুক্তভোগীর মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি করতে চায়। এটি পুনঃপ্রতিষ্ঠামূলক বিচারব্যবস্থা, ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ বিচারমূলক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ।
এটি শাস্তির চেয়ে অপরাধীর অনুশোচনা, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ, সম্পর্ক পুনঃস্থাপন, সামাজিক শান্তি এবং নৈতিক সংশোধনের ওপর গুরুত্ব দেয়। ইসলামের বিচার-ব্যবস্থা, বিশেষত নবী সুলাইমান (আ.)-এর ফয়সালা, প্রমাণ করে যে, ইসলাম বহু আগে থেকেই মানবিক ও পুনর্বাসনমুখী ন্যায়বিচারের ধারক ও বাহক।
*২. পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচার (Restorative Justice):* পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচার এমন একটি বিচারপদ্ধতি, যেখানে কোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর অপরাধী, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি এবং সমাজ—এই তিন পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খোঁজা হয়।
এর উদ্দেশ্য শুধু অপরাধীর শাস্তি নয়, বরং অপরাধীর অনুতাপ, সংশোধন, ভুক্তভোগীর ক্ষতিপূরণ এবং সমাজে পুনরায় শান্তি ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা। এই ন্যায়বিচারের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিম্নরূপ:
_(ক). অপরাধীর অনুতাপ, সংশোধন ও দায়িত্ব গ্রহণ:_ যেমন, সুলাইমান (আ.)-এর ফয়সালার ঘটনায় মেষের মালিকের মেষগুলো ক্ষেতের ফসল নষ্ট করেছিল। সুলাইমান (আ.) নির্দেশ দেন, ক্ষেতের মালিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে মেষগুলো থেকে সাময়িকভাবে উপকার ও দুধ গ্রহণ করবেন, আর মেষের মালিক ক্ষেতে কাজ করে ধ্বংস হওয়া ফসল পুনঃউৎপাদন করবেন।
_(খ). ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির ন্যায্যতা ও স্বীকৃতি:_ ক্ষেতের মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মেষের কারণে। সুলাইমান (আ.)-এর ফয়সালায় মেষের মালিককে দায়িত্ব দেওয়া হয় ফসল পুনরায় উৎপাদনের, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ক্ষতিপূরণ পান। ফসল পুনঃউৎপাদনের পর মেষের মালিককে তার মেষ ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
_(গ). সমাজে পুনরায় ভারসাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা:_ সুলাইমান (আ.)-এর এই বিচারের ফলে ক্ষেতের মালিক এবং মেষের মালিক উভয়ের মধ্যেই শান্তি ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়। উভয় পক্ষই উপকৃত হয়, যা সমাজে দীর্ঘস্থায়ী স্থিতি এবং ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত তৈরি করে।
এভাবে, পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচার কেবল শাস্তি প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি সম্পর্ক পুনর্গঠন, মানসিক ক্ষত নিরাময় এবং ভবিষ্যতে অপরাধ প্রতিরোধের দিকেও সমান গুরুত্ব দেয়। ইসলামী ন্যায়বিচারে এই ধারণা সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়, যা মানবিকতা, করুণা এবং ন্যায়ের এক অপূর্ব সমন্বয়।
*৩. সুলাইমান (আ.)-এর বিচার-ফয়সালা: এক নিদর্শন:* সুলাইমান (আ.)-এর বিখ্যাত ফয়সালার ঘটনা (সূরা আল-আম্বিয়া ২১:৭৮-৭৯) ইসলামী ন্যায়বিচারের এক অনন্য উদাহরণ। দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ হয় যখন কিছু পশু এক কৃষকের ফসলের ক্ষতি করে।
প্রথমে দাউদ (আ.) রায় দেন যে, ক্ষতিপূরণ হিসেবে পশুগুলো কৃষককে দিয়ে দিতে হবে। কিন্তু সুলাইমান (আ.) আরও সূক্ষ্ম ও পুনর্বাসনভিত্তিক রায় দেন—ক্ষতিপূরণ হিসেবে কৃষক সাময়িকভাবে পশুগুলো ব্যবহার করবে এবং দুধ পান করবে, আর ক্ষতিপ্রদানের দায়ে থাকা ব্যক্তি ফসল পুনরায় চাষ করবে।
এতে উভয় পক্ষই উপকৃত হয় এবং স্থায়ী ক্ষতির পরিবর্তে উভয় পক্ষ লাভবান হয়। শিক্ষা ও হিকমাহ: (ক). ন্যায় মানেই শাস্তি নয়, বরং টেকসই সমাধান। (খ). ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত, তবে অপরাধীর সর্বনাশ নয়। (গ). উভয় পক্ষের সম্মান বজায় রেখে সমাধান।
*৪. পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচার (Restorative Justice):* মৌলিক ধারণা ও ইসলামী দৃষ্টিকোণ: পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচার বলতে কী বোঝায়: পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচার বলতে বোঝায় এমন একটি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পরে ভুক্তভোগী,
অপরাধী ও সমাজ—এই তিন পক্ষের মধ্যে সংলাপ ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, যাতে: (ক). অপরাধী অনুতপ্ত হয় ও সংশোধনের সুযোগ পায়, (খ). ভুক্তভোগী ক্ষতিপূরণ, ন্যায্যতা, মানসিক ও নৈতিক স্বীকৃতি পায়, এবং (গ). সমাজে শান্তি, ভারসাম্য ও পুনর্মিলন স্থাপিত হয়।
‘শাস্তির পরিবর্তে শান্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠা’, এই নীতি ইসলামের মৌলিক ন্যায়বিচার ধারনার সঙ্গে মিল রেখে চলে।
*৫. ইসলামে পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচার (Restorative Justice)-এর ভিত্তি:* ইসলামের ন্যায়বিচার শুধু শাস্তি নির্ধারণে সীমিত নয়, বরং মানুষের সংশোধন, পারস্পরিক সম্পর্ক পুনর্গঠন এবং সমাজে স্থিতি বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেয়।
পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচার (Restorative Justice)-এর ধারণা ইসলামী শিক্ষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত, যার ভিত্তি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে নিহিত: দিয়াত (রক্তপণ) ও ক্ষমা, যা অপরাধের পর সমঝোতা ও ক্ষতিপূরণের সুযোগ সৃষ্টি করে;
তওবা ও সংশোধনের সুযোগ, যা অপরাধীকে নতুনভাবে জীবন শুরু করতে সহায়তা করে; এবং মুসলিমদের পারস্পরিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন, যা সামাজিক শান্তি ও ঐক্য রক্ষায় ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা। এই তিনটি উপাদান ইসলামে পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচারকে মানবিকতা, নৈতিকতা এবং সহমর্মিতার এক অনন্য দৃষ্টান্তে পরিণত করেছে।
_(ক). দিয়াত (রক্তপণ) ও ক্ষমা:_ কুরআনে বলা হয়েছে: “হে ঈমানদারগণ, নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য ক্বিসাসের (প্রতিশোধ গ্রহণের বিধান) বিধিবদ্ধ করা হল…; কিন্তু তার ভাইয়ের পক্ষ হতে কিছুটা ক্ষমা প্রদর্শন করা হলে, প্রচলিত প্রথার অনুসরণ করা ও সদয়ভাবে তার রক্ত-বিনিময় পরিশোধ করা কর্তব্য।” (সূরা আল-বাকারা: ১৭৮)।
এখানে নিহত ব্যক্তির পরিবার চাইলে দিয়াত (রক্তপণ) গ্রহণ করে হত্যা মাফ করতে পারে। দিয়াত শুধু ক্ষতিপূরণ নয়, বরং সম্পর্কের পুনঃস্থাপন। ভুক্তভোগী পরিবার শাস্তির পরিবর্তে ক্ষমা করতে পারে; এতে সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি একধরনের পুনর্বাসনভিত্তিক নিষ্পত্তির (Restorative settlement)।
_(খ). তওবা ও সংশোধনের সুযোগ:_ “আল্লাহ অবশ্যই সেই সব লোকের তওবা গ্রহণ করবেন, যারা অজ্ঞাতসারে মন্দ কাজ করে বসে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে নেয়; এরাই তো তারা, যাদের তওবা আল্লাহ গ্রহণ করেন। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা আন-নিসা: ১৭)। তওবা হচ্ছে ব্যক্তির নিজের অপরাধ স্বীকার ও সংশোধনের অঙ্গীকার। ইসলাম অপরাধীকে শুধু শাস্তি নয়, তওবার মাধ্যমে সমাজে ফিরে আসার পথও দেয়।
_(গ). সামাজিক সমঝোতা ও শান্তি পুনঃস্থাপন:_ “আর যদি দুই মুসলিম গোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধ হয়, তবে তাদের মধ্যে মীমাংসা করো।” (সূরা হুজুরাত: ৯)। ইসলামে শান্তির জন্য মীমাংসা ও সমঝোতা অপরিহার্য। এই আয়াত সামাজিক বিরোধে ‘সমঝোতা ও সমাধান’-কে উৎসাহ দেয়, যা পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচার (Restorative Justice)-এর গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচারের মূল চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
*৬. ইসলামে পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচার (Restorative Justice)-এর উদাহরণ:*
_উদাহরণ-১:_ কাব ইবনু মালিক (রা.)-এর ঘটনা (তওবা গ্রহণ): তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করায় কাব (রা.)-কে সামাজিকভাবে একঘরে করা হয়। তিনি অনুশোচনায় কাঁদতে থাকেন এবং অবশেষে তাঁর তওবা কবুল হয় (সূরা তওবা: ১১৮)। শাস্তি নয়, বরং সামাজিক সংশোধনের মাধ্যমে তাঁর পুনরায় সমাজে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দেওয়া হয়।
_উদাহরণ-২:_ হুদাইবিয়ার সন্ধিতে রক্তপাতের প্রতিরোধ: সুলাইহ (বা হুদাইবিয়া) চুক্তিতে মক্কার কুরায়েশদের সাথে মুসলিমরা শান্তিচুক্তি করে, যদিও তা আপাতত মুসলিমদের ক্ষতিসাধন বলে মনে হয়। কিন্তু এই শান্তিচুক্তি ভবিষ্যতে ইসলামের ব্যাপক দাওয়াহ ও সামাজিক পুনঃসংহতির দরজা খুলে দেয়।
_উদাহরণ-৩:_ মাফের ঘটনা—মক্কা বিজয়ের দিন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মক্কা বিজয়ের দিনে ঘোষণা করেন: “আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। তোমরা সবাই মুক্ত!” (সহীহ বুখারী)। যে শহরের লোকেরা তাঁকে বহিষ্কার করেছিল, সেই শহরের লোকদের তিনি ক্ষমা করেন। ফলস্বরূপ মক্কার মানুষের হৃদয়ে ইসলামের প্রতি নরম মনোভাব তৈরি হয়, তারা দলেদলে ইসলাম গ্রহণ করে। এ এক অনন্য পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচার (Restorative Justice)-এর উদাহরণ।
_উদাহরণ-৪:_ চুরির অপরাধে শাস্তি না দেওয়া (যখন প্রয়োজনীয়তা ছিল): খলিফা উমার (রা.)-এর সময়ে এক ব্যক্তির ওপর চুরির অভিযোগ ওঠে, কিন্তু পরে জানা যায় যে সে চরম দারিদ্র্যের কারণে এই কাজ করেছিল। উমার (রা.) পরিস্থিতি বিবেচনায় শাস্তি প্রয়োগ না করে দয়া ও সহানুভূতির মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করেন।
*৭. ইসলামী নীতি ও মূল্যবোধের আলোকে পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচার (Restorative Justice):* ইসলাম পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচারকে উৎসাহিত করে কারণ: (ক). ইসলাম মানুষকে নাশকতা নয়, সংশোধন করতে বলে। (খ). সমাজে করুণা, দয়া ও সহানুভূতি বজায় রাখতে বলে। (গ). মানুষের মর্যাদা রক্ষা ইসলামের অন্যতম উদ্দেশ্য। (গ). উদ্দেশ্য: অপরাধীর অন্তর পরিবর্তন, ভুক্তভোগীর স্বস্তি, সমাজের স্থিতি।
*৮. আধুনিক যুগে ইসলামী পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচার (Restorative Justice)-এর প্রাসঙ্গিকতা:* বর্তমানে জেল, কঠোর শাস্তি এবং সামাজিক একঘরে করার সংস্কৃতি বহুক্ষেত্রে অপরাধ কমাতে ব্যর্থ হয়েছে। ইসলাম আমাদের শিখায়: (ক). মানবিক বিচারব্যবস্থা অপরিহার্য।
(খ). অপরাধীর জন্য অনুতাপ ও সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে। (গ). ভুক্তভোগীর ক্ষতিপূরণ, ন্যায্যতা ও মানসিক শান্তি নিশ্চিত করতে হবে। (ঘ). সমাজের সাথে অপরাধীর সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে হবে, যেখানে সমাজে করুণা, সহমর্মিতা ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। (ঙ). বিচারব্যবস্থা কঠোরতার বদলে মানবিকতার বার্তা দেয়। পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচার (Restorative Justice) আধুনিক বিশ্বের বিচারব্যবস্থাকে নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে। ইসলাম এই পথে বহু আগে থেকেই পথ দেখাচ্ছে।
*৯. আধুনিক যুগে পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচার (Restorative Justice)-এর উদাহরণ ও সমসাময়িক প্রেক্ষাপট:* বর্তমান যুগে বিশ্বজুড়ে মেডিয়েশন (Mediation), কমিউনিটি জাস্টিস (Community Justice), ভিকটিম-অফেন্ডার ডায়ালগ (Victim-Offender Dialogue) প্রভৃতি পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এগুলোর লক্ষ্য অপরাধের সমাধান শাস্তির মাধ্যমে নয়, বরং উভয় পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়া, দুঃখপ্রকাশ, ক্ষতিপূরণ এবং সম্পর্ক পুনঃস্থাপন। উদাহরণস্বরূপ:
_(ক). মেডিয়েশন (Mediation):_ কোনো বিরোধ বা অপরাধ সংঘটিত হলে উভয় পক্ষের সম্মতিতে একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি (মেডিয়েটর) তাদের আলোচনায় সাহায্য করেন। উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর এমন একটি সমাধান নির্ধারণ হয়, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ন্যায্যতা পান এবং অপরাধী সংশোধনের সুযোগ পায়। ইসলামি ন্যায়বিচারের সাথে এর আশ্চর্য মিল দেখা যায়, যেমন — ক্ষতিপূরণ, সমঝোতা ও ক্ষমা।
_(খ). কমিউনিটি জাস্টিস (Community Justice):_ কিছু দেশে স্থানীয় সম্প্রদায় অপরাধের পরে মিটিং করে, যাতে অপরাধী, ভুক্তভোগী এবং কমিউনিটির অন্যান্য সদস্যরা একসঙ্গে বসে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করে। ইসলামি সমাজে সালিশি প্রথা বা “মজলিসে শুরা” ঠিক এভাবেই সামাজিক সমাধানের পথ তৈরি করত।
_(গ). ভিকটিম-অফেন্ডার ডায়ালগ:_ পশ্চিমা দেশে ব্যাপকভাবে চর্চিত এই পদ্ধতিতে অপরাধী ও ভুক্তভোগী মুখোমুখি বসেন, অপরাধী নিজের অপরাধ স্বীকার করেন, অনুতপ্ত হন এবং ভুক্তভোগীর মানসিক ক্ষতি বোঝার চেষ্টা করেন। অনেক ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগী অপরাধীকে ক্ষমা করে দেন বা ন্যায্য ক্ষতিপূরণে সম্মত হন। ইসলামেও কিসাসের পরিবর্তে দিয়াত গ্রহণ বা ক্ষমা এই চেতনারই প্রতিফলন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেমন কানাডা, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় এই পদ্ধতিগুলো আদালতের বাইরে বহু বিরোধ নিষ্পত্তি করছে। ইসলামী ন্যায়বিচার এ ধরনের সমাধানকে অনেক আগেই উৎসাহিত করেছে। বিশেষ করে নবী সুলাইমান (আ.)-এর ফয়সালার মতো রায়গুলো প্রমাণ করে, অপরাধ সমাধানে ক্ষতিপূরণ, সম্পর্ক পুনঃস্থাপন এবং মানবিকতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
অতএব, আধুনিক বিশ্ব আজ যে মানবিক এবং পুনর্বাসনভিত্তিক বিচারব্যবস্থার সন্ধানে, ইসলাম সেই ধারণাগুলো শতাব্দীর পর শতাব্দী আগে থেকেই শিক্ষা দিয়ে এসেছে। ইসলামী ন্যায়বিচার কেবল আইন প্রয়োগ নয়, বরং মানবিকতা, করুণা, এবং সমাজের ভারসাম্য রক্ষার এক চিরকালীন দিশারি।
*উপসংহার:* সুলাইমান (আ.)-এর বিচারের কাহিনী প্রমাণ করে যে ইসলাম শুধুমাত্র আইন বা শাস্তির ধর্ম নয়, বরং মানবিকতা, করুণা ও সামাজিক পুনর্মিলনের ধর্ম। ইসলামী ন্যায়বিচারে পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচার (Restorative Justice)-এর নিদর্শন সর্বত্র বিদ্যমান। বর্তমান বিশ্ব যেখানে মানবিক ও টেকসই বিচারব্যবস্থার খোঁজ করছে, ইসলামের এই চিরকালীন নীতিগুলি সেখানেই হতে পারে এক অপরিহার্য আলোকবর্তিকা।
ইসলাম একটি এমন দ্বীন-জীবন ব্যবস্থা, যার ন্যায়বিচার শুধু শাস্তিমূলক নয় বরং সংশোধনমুখী ও সহমর্মিতাপূর্ণ। পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচার (Restorative Justice)-এর আধুনিক ধারণা ইসলামে বহু পূর্বে থেকেই ছিল—যেখানে তওবা, দিয়াত, ক্ষমা, দয়া এবং নৈতিক শিক্ষা অপরাধ দমনের চেয়ে বড় গুরুত্ব পায়। আধুনিক বিশ্ব যেখানে মানবিক ও টেকসই বিচারব্যবস্থার সন্ধানে, সেখানে ইসলামের এই ধারনাগুলো এক মহামূল্যবান দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করতে পারে।
*আল্লাহ-হুম্মা সাল্লি, ওয়া সাল্লিম, ওয়া বারিক আ’লা মুহাম্মাদ; আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন*। (মূসা: ২৯-০৬-২৫)।
প্রধান উপদেষ্টাঃ ফরহাদ মাজহার
উপদেষ্টাঃ এস,এম নজরুল ইসলাম ভুইয়ামোঃ আমিনুল ইসলাম,
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ আবুল হাসেম,
সহঃসম্পাদকঃ আলী নওয়াব খোকন,
বার্তা সম্পাদকঃ ইয়াছিন আরাফাত,
সহকারী বার্তা সম্পাদকঃ এম, আসমত আলী মিসু,
সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদকঃ আসাদুজ্জামান খান মুকুল,
www.dainikbanglarsangbad.com
ইমেইলঃ dainikbanglarsangbad490@gmail.com
প্রধান কার্যলয়ঃ বাড়ি নং ৩৫, রোড নং ৪, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
মোবাইলঃ01736091515, 01716698621
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Copyright © 2025 dainikbanglarsangbad.com. All rights reserved.