✒️ হালিম রাজ
সংরক্ষিত নারী আসন: নারী ক্ষমতায়ন না কি রাজনৈতিক অলঙ্কার?
আহ্বায়ক, বাংলাদেশ মাতৃভূমি দল (BMLP)
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজচিন্তক
বাংলাদেশের সংসদে নারীর অংশগ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর ইস্যু। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এই অংশগ্রহণ কতটুকু গণতান্ত্রিক? কতটুকু ক্ষমতায়নের প্রতীক? আর কতটুকু অলঙ্কার হিসেবে ব্যবহৃত?
সাম্প্রতিক সময়ে অনেক রাজনৈতিক দল ১০০ নারী সংসদ সদস্যের সংরক্ষিত আসনের দাবী তুলেছে। বলা হচ্ছে, নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই ১০০ জন নারী হবেন বিনা ভোটে নির্বাচিত—একটি অবাধ্য দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, যেখানে জনগণের কোনও অংশগ্রহণ নেই।
আরও পড়ুনঃ অনেক “রোগ” আসলে রোগ নয়, বরং স্বাভাবিক বার্ধক্য
❝বিনা ভোটে ক্ষমতা: নারী ক্ষমতায়ন না নারীকে ব্যবহার?❞
সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের ইতিহাস বলছে—প্রথমে ছিল ১৫, পরে ৩০, এখন ৫০। এখন আবার সেটি ১০০ করার উদ্যোগ! কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এদের ভূমিকা কী?
একটি রাষ্ট্রে যেখানে নারী কৃষক, নারী শ্রমিক, নারী উদ্যোক্তা, নারী চিকিৎসক, নারী শিক্ষক—প্রতিনিয়ত সমাজ ও অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে, সেখানে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বে তারা ভোট ছাড়া, পদলেহী, সুশোভিত একটি গহনার মতো আচরণ পান।
বিনা ভোটে সংসদ সদস্য হওয়া কোনও নারীর জন্য গৌরবজনক নয়। এটা নারীর মর্যাদাহানিকর। যিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন, তিনি কাকে প্রতিনিধিত্ব করছেন?
🔍 গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২: ভুলে যাওয়া নাকি ইচ্ছাকৃত এড়িয়ে যাওয়া?
১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলসমূহকে উৎসাহিত করা হয়েছিল সাধারণ আসনের এক-তৃতীয়াংশে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিতে। কিন্তু বাস্তবে, সংরক্ষিত আসনের বাইরেও নারীদের অংশগ্রহণ একেবারেই নগণ্য। বড় দলগুলো একদিকে সংরক্ষিত নারী আসন চায়, অন্যদিকে সাধারণ আসনে পুরুষ-নির্ভর রাজনীতি বজায় রাখে।
এ যেন “নারীকে ক্ষমতা দিই” বলে সেলফি তোলা, আর বাস্তবে সুযোগ না দিয়ে তাকে ছায়ায় ফেলে রাখা!
আরও পড়ুনঃ “কিছু কথা, কিছু আশা”যদি তুমি বড় হতে চাও, খেলাধুলা করো”, প্লেটো
💰 সংরক্ষিত আসনের আর্থিক ব্যয় ও রাজনৈতিক স্বার্থ
সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যদের জন্য রয়েছে ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি, বিদেশ সফর, সরকারি বাড়ি, ভাতা, এবং নানা প্রটোকল সুবিধা। কিন্তু রাষ্ট্রের পক্ষে প্রশ্ন তুলতেই হয়—এই বিনিয়োগের কতটা সমাজে ফিরে আসে? কয়জন নারী সংসদ সদস্য নিজের অবস্থানকে ব্যবহার করে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন? কয়জন গ্রামীণ নারীর অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন?
প্রশ্ন কঠিন, কিন্তু উত্তর আরও বিব্রতকর। সংসদে বসে থাকলেই প্রতিনিধি হওয়া যায় না—প্রতিনিধিত্ব আসে জনগণের আস্থা ও ভোটের মাধ্যমে।
⚖️ নারীকে অলঙ্কার নয়, রাজনীতির অংশীদার বানান
নারীকে রাজনীতিতে টেনে আনতে হলে তাকে করুণা নয়, প্রতিযোগিতার ময়দানে সম্মানের সাথে সুযোগ দিতে হবে। সংরক্ষিত আসনের মাধ্যমে নারীকে সংসদে বসিয়ে রেখে তার অবস্থান ও প্রতিভাকে সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে। বরং রাজনৈতিক দলগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে সাধারণ আসনে নারীদের মনোনয়ন দিতে হবে।
একজন ভোটে নির্বাচিত নারী সংসদ সদস্য যেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে জনগণের জন্য কথা বলেন, একটি দলীয় মনোনয়নে আসা বিনাভোটের নারী সংসদ সদস্য কখনোই সেই শক্তি নিয়ে দাঁড়াতে পারেন না।
আরও পড়ুনঃ অপূর্ণ জাতীয় আকাঙ্ক্ষা ও গনঅভ্যুত্থান
🛑 “১০০ নারী আসন” নয়, “১০০ নারী বিজয়ী” দরকার
নারীকে এগিয়ে নিতে চাইলে, সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা বাড়ানো নয়, বরং নারীকে নির্বাচিত করার সংস্কৃতি গড়ে তোলা দরকার। দলীয়ভাবে নারীর প্রস্তুতি, মাঠপর্যায়ের প্রশিক্ষণ, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহায়তা দিয়ে নারীদের সামনে আনতে হবে।
নারীকে পদক না দিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে জায়গা দিন, কারণ প্রকৃত নারীর ক্ষমতায়ন ভোটের বাক্স থেকেই জন্ম নেয়।
📌 উপসংহার
বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে যদি শক্তিশালী করতে হয়, তবে নারীকে সংরক্ষিত রাখার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নারীকে ভোটে জয়ী হয়ে সংসদে আসার পথ প্রশস্ত করতে হবে। না হলে এ ‘নারী ক্ষমতায়ন’ শব্দবন্ধ হয়ে থাকবে একটি ছদ্মবেশী রাজনৈতিক অলঙ্কার, যেখানে নারী আছে শুধু শোভার জন্য, কাজের জন্য নয়।
প্রধান উপদেষ্টাঃ ফরহাদ মাজহার
উপদেষ্টাঃ এস,এম নজরুল ইসলাম ভুইয়া
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ আবুল হাসেম
উপ সম্পাদকঃ এম, আসমত আলী মিসু
সহঃসম্পাদকঃ আলী নওয়াব খোকন
বার্তা সম্পাদকঃ ইয়াছিন আরাফাত
সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদকঃ আসাদুজ্জামান খান মুকুল
www.dainikbanglarsangbad.com
ইমেইলঃ dainikbanglarsangbad490@gmail.com
প্রধান কার্যলয়ঃ বাড়ি নং ৩৫, রোড নং-৪, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
মোবাইলঃ01736-091515, 01716-698621
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Copyright © 2025 dainikbanglarsangbad.com. All rights reserved.