শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন
Headline :
বাংলাদেশ জোট মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল হাসেম ন্যাশনাল ইউনিটি কাউন্সিল(এনইউসি) এর মহাসচিব বিদ্যুৎ চন্দ্র বর্মনের বাণী: মানবতার মূর্ত প্রতীক: *অধ্যাপক ড. আলহাজ্ব মোঃ শরীফ আব্দুল্লাহ হিস সাকী শিক্ষাবিদ ও মানবতাবাদী এক অনন্য সমন্বয়* -ড. এ আর জাফরী বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটে মূল চিন্তাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত প্রধান উপদেষ্টা ফরহাদ মাজহার বগুড়া গাবতলী স্টেশনের রেলওয়ে কর্মচারীকে মারপিট করে আহত করে ২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় – দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে নতুন সম্ভাবনার দিগন্তে বাংলাদেশ ময়মনসিংহে পলাতক আসামী গেপ্ততার করেছে র‍্যাব ১৪ যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৩ বিজিবির অভিযানে ইয়াবাসহ আটক ১ বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বিএনপিরভারপ্রাপ্তচেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ দোয়া মাহফিল

শেষ বিকেলের চিঠি- আসাদুজ্জামান খান মুকুল

Reporter Name / ৭ Time View
Update : শনিবার, ৩১ মে, ২০২৫
শেষ বিকেলের চিঠি- আসাদুজ্জামান খান মুকুল

সাহিত্য প্রতিবেদকঃ

বসন্তের বইমেলা গুলো আমার কাছে নিছক কোনো উৎসব নয়– সেগুলো যেন আমার হৃদয়ে হয়ে উঠেছে স্মৃতির মিনার, যেখানে একবার এক অচেনা রূপক এসে বসেছিল নির্জন পৃষ্ঠায়।

ময়মনসিংহ শহরের বুকজুড়ে তখন বসন্তের বাতাস, হালকা রোদে শহরের গায়ে পড়ে একরকম সোনালি আবরণ।টাউনহলের পাশের মাঠে বিভাগীয় বইমেলা। শহরের লোকজন জানে বসন্ত এলেই এখানে একটা অন্যরকম সজীবতা তৈরি হয়। ভীড়, স্টল, পলাশ ফোটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা আর মাঝেমধ্যে ভেসে আসা বাঁশি কিংবা রবীন্দ্রসংগীত।

তখন আমি তেমন কিছুই খুজছিলাম না, শুধু ছিলাম নিজের বইয়ের কাটতিটা দেখতে। একটা স্টলের এককোণে দাঁড়িয়ে থাকা মুহূর্তেই হঠাৎ চোখে পড়ল তাকে — অনিকা রূপক। সে দাঁড়িয়ে ছিল কবিতার বইয়ের তাকের সামনে, চোখে যেন এক তীব্র অনুসন্ধান। মনে হচ্ছিল সে যেন বইয়ের পাতায় হারানো সত্তাকে খুঁজছে।

আমি প্রথম তাকে দেখেছিলাম যে মুহূর্তে, সেই দৃশ্য এক অদ্ভুত ধীরগতির চিত্রপট হয়ে আমার মনে স্থির হয়ে আছে। তার পরনে ছিল সাদা-নীল সালোয়ার কামিজ এক হাতে একটা নোটবুক, অন্য হাতে একটা বই। হালকা বাতাসে চুল এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল, তবু সে নির্বিকার।

সে এগিয়ে এসে প্রশ্ন করলো “এই বইয়ের লেখক কি আপনি?” আমি একটু দ্বিধা নিয়ে বললাম, ” জি, তবে সবগুলো না। ”
সে তাকালো আমার চোখে —
গভীরতা ও কৌতূহল ভরা দৃষ্টি।
“একটা বই উপহার দিতে পারবেন?”
আমি অবাক হলেও রাজি হয়ে গেলাম। হাত বাড়িয়ে উপহার দিলাম আমার একটি কবিতার বই ” শিশিরের কান্না ” সে বইয়ের শেষ পাতায় চোখ বুলিয়ে বলল “আমার একটা ছবি আছে।আপনি কি সেটা দেখে আমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখে দিবেন ?”
আমার মনে হলো এই মুহূর্তটাই যেন কোনো অপ্রকাশ্য কবিতার সূচনা।

সেই প্রথম, আমরা দুজন এক বইয়ের পাতায় মিলিত হয়েছিলাম– লেখক রূপক, বাস্তব ও কল্পনার মিশেলে।তার ছবি দেখে লিখেছিলাম এক প্রেমের কবিতা — ধীর, গভীর, নিঃশব্দ ভালোবাসায় পরিপূর্ণ; তার চোখের মতো!

সে ছিল আনন্দমোহন কলেজের ছাত্রী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়া করা, তবু মনটা যেন সাহিত্যে দিয়ে তৈরি। প্রতিটি কথোপকথনে, সে যেন শব্দ নিয়ে ছবি আঁকতো। পরিচয়,তারপর সখ্যতার সূত্রে মাঝে মাঝে আমাদের দেখা হতো কখনো কলেজের সামনে, কখনো ব্রহ্মপুত্রের পুরনো ঘাটে,কখনো বইমেলার পেছনের ফাঁকা গলিতে।

কথা বলতে বলতে কখন যে, সম্ভোধন আপনি থেকে তুমি হয়ে ওঠেছিল বুঝতেই পারিনি। আলাপচারিতায় প্রায়ই সে বলতো –” জানো,আমি মাঝেমাঝে তোমার কবিতার পঙ্তিতে নিজেকে খুঁজে পাই। “তারপর থেমে গিয়ে বলতো, আবার ভীষণ ভয়ও পাই, যদি তুমি অন্য কাউকে নিয়ে এমন করে লেখো?

আমি বলতাম ” তোমার ভেতরে যে কবিতার উপাদান সেটার মত আর কেউ নেই।”সে স্মিত হাসিতে মেতে উঠতো।আমাদের সম্পর্ক ছিল অদ্ভুত,নামহীন,কিন্তু সুস্পষ্টভাবে আমরা কখনো ভালবাসি বলিনি সে বলেছিল,” তুমি যদি আমার প্রেমিক হয়ে যাও তাহলে হয়তো আমার ভেতরের কবিতাটা হারিয়ে যাবে।’

আমিও ভেবেছিলাম কিছু সম্পর্ক থাকে যেগুলো উচ্চারিত হলে ভেঙ্গে পড়ে, তাই আমরা নীরবতার মধ্যেই একটা গভীর সংলাপ জারি রেখেছিলাম। কবিতা লিখে পাঠাতাম,সে কখনো উত্তর দিতো, কখনো নীরব থাকতো।সেই নীরবতাতেই আমি আবিষ্কার করতাম তার অভ্যন্তরে ভালোবাসার স্বর।

এক বসন্তে সে জানাল, ” আমি সিলেট চলে যাচ্ছি।একটি এনজিও তে চাকরি হয়েছে। প্রথমে ছয় মাস। তারপরে স্থায়ী হতে পারে”।আমি শুধু বলেছিলাম “তুমি গেলে আমার শহরটা একটু ফাঁকা হয়ে যাবে।”

যাবার সময় সে আমাকে একটা খাতা দিয়েছিল।দিয়ে বলল “তুমি শুধু আমাকে নিয়ে কবিতা লিখবে এখানে। এমনভাবে, যেন আমি ফিরে এসে পড়তে পারি।” আমি বলেছিলাম, ” তোমাকে নিয়ে লেখাই হবে আমার সবচেয়ে দীর্ঘ কবিতা।আমি কখনো থামবোনা।”

তারপর দূরত্বের অধ্যায়।মেসেঞ্জারে কথা হতো কখনো খুব দীর্ঘ, কখনো দীর্ঘ নিরবতা,তবুও আমি লিখে যেতাম। একবার পাঠিয়েছিলাম কবিতা;
“তুমি যদি থাকো দূরবীন ছুঁয়ে, আমি তবু আলো হবো যতদূর গেলে ফিরে দেখা যায় – সেই দূরত্বে রয়ে যাব আমি।”

সে লিখেছিল “কবিতা হারিয়ে গেলে কি তুমি আমাকেও হারাবে?” আমি কোন উত্তর দেইনি শুধু বুঝেছিলাম আমরা একে অন্যের চেয়ে বেশি কিছু হয়ে গিয়েছি।
চারটি বছর কেটে গেল। শহরটা বদলায়নি শুধু তার বুকের পলাশ গাছে আগের মত ফুল ফোটে না। বসন্তেই একা একা যেতাম বইমেলায় বা অন্য অনুষ্ঠানে, দাঁড়িয়ে থাকতাম।মনে হতো কেউ পেছন থেকে বলবে “এইযে কবি!”
কিন্তু কেউ বলতো না।এক বসন্তের দুপুরে হোয়াটসঅ্যাপে একটি বার্তা –” এই বসন্তে কি তোমার কাছে ফিরতে পারি? ”

আমি চোখ কচলালাম। সত্যি কি সে ফিরেছে?সে ছবি পাঠালো আনন্দমোহন কলেজের উত্তর পাশে চায়ের দোকানের একটু দূরে বসে আছে। হাতে সেই খাতা।আমি তাড়াতাড়ি চলে গেলাম সেখানে। দোকানটা ছিল আগের মতোই ইহার অদূরেই আছে সে। অনিকা রূপক। চোখে সেই আগের মতই গভীরতা, মুখে একটুখানি অচেনা পরিণতি।

আমি বললাম “তুমি কি জানো আমি কখনো তোমার ফেসবুকেও ছবি দেখিনি,কারণ আমি শুধু সেই ছবিটা মনে রাখতে চেয়েছিলাম – -যেটি দিয়ে তুমি আমাকে প্রথম কবিতা লিখতে বলেছিলে।” সে খাতা এগিয়ে দিয়ে বলল “তুমি লিখেছিলে আমি হবো তোমার সবচেয়ে দীর্ঘ কবিতা।এবার আমিও কিছু লিখেছি।” খাতা খুলে পড়ে নিলাম —
“তুমি যে শব্দ দিয়ে শুরু করেছিলে আমি সেই শব্দকে পাখা দিয়েছি।

ময়মনসিংহ থেকে সিলেট, কবিতার দূরত্বে হাঁটতে হাঁটতে আমি জেনে গেছি — ভালোবাসা মানে ফিরে আসা নয়, বরং থেকে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি।তুমি থাকো ঠিক আগের মত আমি এবার সত্যি রুপক হবো। তোমার জীবনের।”

আমি বললাম, ” তাহলে এবার চলো আবার মেলায় যাই, ঘুরি ফিরি, বই কিনি। না হয় এবার একটা বই লিখি আমাদের নামে।”
সে বলল “তুমি লিখবে কবিতা আমি লিখব পাশে নীরবতা।”
আমরা হাঁটছিলাম টাউনহলের দিকে বসন্ত এবার আরো বাস্তব। আর আমার দীর্ঘতম কবিতা কনিকা রূপক — আমার পাশে হাঁটছিল।

তবে ফিরে যাওয়ার আগে সে বললো ” এখন আবার যেতে হবে।কিন্তু এবার তুমি কি আমাকে চিঠি লিখবে?”
আমি কিছু বলিনি শুধু তাকিয়ে ছিলাম তার চোখে। সে চোখের ভিতরেই হয়তো লিখে ফেলেছিলাম ভালোবাসার অর্ধেক চিঠি।
সে চলে যাওয়ার পর আমি্‌,,,,,,,,,


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category