এম বাদল খন্দকার( বিশেষ প্রতিনিধি):
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় মাঠ থেকে শখের গরুটি বাড়ি আনতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাজেদা খাতুন (৭৮) নামে এক বৃদ্ধা নিহত হন। এসময় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান গরুটিও। নিহত মাজেদা খাতুন উপজেলার ইমামবাড়ি গ্রামের এ প্রয়াত ওহিদ ভূঁইয়ার স্ত্রী। তিনি পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ে সন্তানের জননী।
বুধবার বিকেলে বাড়ির কাছেই ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে তার লাশ দাফন করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন ও পরিবারের সদস্যরা জানান, ৭৮ বছর বয়সি মাজেদার গরু পালন বেশ শখের। তিনি নিজেই গরুর যত্ন করতেন। পরিবারের সবার অসম্মতির মুখেই তিনি গরু পালতেন।
দুটি গরু পালনের জন্য অন্যজনের কাছে দেওয়ায় বাড়িতে হাই হুতাশ করেন মাজেদা খাতুন। কাটা পড়া গরুটিও কারো কাছে দেয়ার কথা বলার পর তিনি কয়দিন খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেন। শেষ পর্যন্ত পরিবারের লোকজন এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। একবার হজ্ব করে আসা মাজেদা খাতুন আবারো নিজের টাকায় হজ্বে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ঘটনা বুধবার বেলা সাড়ে চারটার দিকে।
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি কসবার ইমামবাড়ি স্টেশন পার হওয়ার সময় মাজেদা খাতুন গরু নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। গরুর গলার রশি তার হাতে বাঁধা ছিলো। ট্রেন আসতে দেখে তিনি গরুটিকে আটকে রাখার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে গরুটি রেললাইনে উঠে যায়। ট্রেনের চালক দূর থেকে দেখতে পেয়ে হুইসেল বাজান ও হাতের ইশারায় ওই নারীকে সরে যেতে বলেন।
কিন্তু মাজেদা খাতুন কোনোভাবেই হাত থেকে রশিটি ছাড়েননি। গরুটি ট্রেনে কাটা পড়ার পর রশির টানে তিনিও ছিটকে ট্রেনের সাথে ধাক্কা খান। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি প্রাণ হারান।
আরও পড়ুনঃ গোপালগঞ্জে আ.লীগ ৮ নেতার পদত্যাগের হিড়িক
খবর পেয়ে আখাউড়া রেলওয়ে থানার পুলিশ রাতে লাশ উদ্ধার করে। তবে পরিবারের কোনো আপত্তি না থাকায় আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেন।
ইমামবাড়ি রেলওয়ে স্টেশন এলাকার দোকানী রহিম উদ্দিন মুন্সি বলেন, ‘খুবই ভালো একজন মহিলা ছিলেন মাজেদা খাতুন। একবার হজ্ব করে এসেছেন। আবার হজ্ব করতে যাবেন বলে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এজন্য লোকজনকে বাড়িতে নিয়ে দাওয়াত খাইয়েছেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস শখের গরুকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি নিজেই নিহত হয়েছেন। তিনি তখন রশিটি ছেড়ে দিলে হয়তো নিজেকে বাঁচাতে পারতেন।
মাজেদা খাতুনের ভাতিজা মোঃ নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘পরিবারের কেউ তাঁর গরু পালনে রাজি নন। কিন্তু তিনি শখ করে পালতেন। নিজেই গরুর যত্ন করতেন। এই শখের গরুই কাল হলো এখন। পশুর প্রতি এমন ভালোবাসা আসলে কমই দেখা যায়।
মাজেদা খাতুনের বড় ছেলে মোঃ নাসির ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি দুবাই থাকি। মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে চলে এসেছি। আমার মা মূলত গরুটিকে বাঁচাতে গিয়েই নিজের প্রাণ দিয়েছে। তিনি শখ করে গরু পালতেন। আমরা অনেকবার না করলেও তিনি এসবে পাত্তা দিতেন না।
এ ব্যাপারে আখাউড়া রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাতে খবর পাওয়া মাত্রই আমরা লাশ উদ্ধার করি। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি গরুর রশি ওই নারীর হাতে বাঁধা ছিলো। গরুটি কাটা পড়ার পর তিনিও ছিটকে পড়েন।