ডাঃ এম, জি, মোস্তফা মুসাঃ
*মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ): তাঁর আখলাক, নীতি, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ*
_ভূমিকা:_ মানবজাতির ইতিহাসে এমন কোনো ব্যক্তিত্ব নেই, যিনি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবাধ এবং আখলাকের এমন পূর্ণাঙ্গ এবং শাশ্বত উদাহরণ স্থাপন করেছেন, যেমনটি করেছেন আল্লাহর প্রিয় রাসূল মুহাম্মদ (ﷺ)। তাঁর জীবন শুধুমাত্র ইবাদত বা পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে সীমিত নয়; বরং তাঁর প্রতিটি আচরণ, কথা, মনোভাব এবং সম্পর্ক রচনা করেছে মানবিকতার এক পূর্ণাঙ্গ সংবিধান। আল্লাহ তাঁকে ঘোষণা করেছেন: “তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।” (সূরা আল-কলম, ৬৮:৪)
আরও পড়ুনঃ আওয়ামী লীগনেতা নিলুফার জোয়ার্দারের মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের শোক
এই মহান চরিত্র, আখলাক, নীতি ও নৈতিকতা থেকে আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে শিক্ষা নেওয়া উচিত, কারণ এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে ব্যক্তিজীবন, পারিবারিকজীবন, সমাজজীবন, রাষ্ট্রজীবন, এমনকি বৈশ্বিক শান্তির মূল চাবিকাঠি।
*রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আখলাক ও নৈতিকতা:*
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ব্যক্তিত্বের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য ছিল তাঁর অহংবোধের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি এবং সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন। তিনি কখনও নিজেকে আলাদা বা বিশেষভাবে উপস্থাপন করতেন না। এমনকি মসজিদে বসলে এমনভাবে মিশে যেতেন যে, প্রথম দেখায় চেনা যেত না যে তিনিই আল্লাহর প্রেরিত নবী। তিনি বিশেষ কোনো আসনে বসতেন না এবং কোনো সম্মানিত আসন দাবি করতেন না।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সবসময় সাধারণ মানুষের কাছে সহজগম্য ছিলেন। একজন দাস অথবা দাসী রাস্তায় তাঁকে দাঁড় করিয়ে কথা বলতে পারতেন, আবার একজন গরীব মানুষের দাওয়াতও তিনি গ্রহণ করতেন। তিনি কারো সাথে কথা বললে পুরো মনোযোগ দিয়ে শুনতেন, কথার মাঝখানে ব্যাঘাত ঘটাতেন না। কারো দিকে ইঙ্গিত করতে হলে এক আঙুল নয়, চার আঙুল প্রসারিত করে ইশারা করতেন যাতে কাউকে লজ্জায় না ফেলা হয়।
তিনি ছিলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল, কোমল মেজাজের এবং দয়ালু। তিনি অশ্লীলতা, রুক্ষতা, অভদ্রতা থেকে দূরে থাকতেন। তাঁর ভাষায় কোনো কটুক্তি, ব্যঙ্গ, বা কঠোরতা ছিল না। তিনি পরোক্ষভাবে মানুষকে সংশোধন করাতেন, সরাসরি অপমান বা তিরস্কার করতেন না। এমনকি কারো কোনো দোষ থাকলেও সাধারণভাবে বলতেন: “লোকেদের মধ্যে এমন কিছু আছে…”—যাতে ব্যক্তিগতভাবে কাউকে আঘাত না লাগে।
আরও পড়ুনঃ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট নয়, বলাৎকারের পর হত্যার অভিযোগ!
*নীতি, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ:*
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নীতি ও নৈতিকতার অন্যতম দিক ছিল ন্যায় ও সমতা। তিনি কারো ওপর অন্যায় রাগ দেখাননি, নিজের জন্য প্রতিশোধ নেননি। রেগে গেলে মুখ লাল হয়ে যেত, কিন্তু দোষী ব্যক্তি কাছে এলে তিনি মুখ ঘুরিয়ে নিতেন, যেন কঠোরভাবে কিছু না বলতে হয়। ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়, তিনি শুধু আল্লাহর জন্যই কঠোর হতে পারতেন।
তিনি নিজের কাজ নিজেই করতেন—কাপড় সেলাই, জুতা মেরামত, ছাগলের দুধ দোহন। ঘরে প্রবেশের সময় নম্রভাবে সালাম দিতেন যাতে কেউ ঘুমিয়ে থাকলে জেগে না ওঠে। তাঁর খাদ্যাভ্যাসে ছিল অতিরিক্ততা ও অপচয়ের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি। তিনি কখনো খাবারের সমালোচনা করতেন না, যা পেয়েছেন তা-ই খেয়েছেন।
পরিবারের ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন উদাহরণীয়। স্ত্রীদের মধ্যে সমান সময় ও দয়া ভাগ করে নিয়েছেন। তাঁর সেবক আনাস (রা.) বলেন, “দশ বছর তাঁর সাথে ছিলাম, কখনো বকা দেননি।”
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হালকায় (পরিচিতি চক্রে) সবাই মনে করত, “আমাকেই তিনি বেশি ভালোবাসেন।” এটাই তাঁর আখলাকের সৌন্দর্য। তিনি মানুষকে বিশেষ অনুভূতি দিতেন, যেন প্রত্যেকেই তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো: রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ইসলামের দর্শন কেবল মসজিদে নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। এটাই ইসলামের পরিপূর্ণতা।
*শিক্ষা ও হিকমাহ:* রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর এই গুণাবলী আমাদের শেখায়: মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা, অহংকার না করা, ছোট-বড় সবাইকে সম্মান করা, মৃদুস্বভাব ও দয়ালু থাকা, সমতা ও ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখা, সহজ-সরল জীবনযাপন, অপচয় না করা, পরিবারকে সময় দেওয়া, ধৈর্য ও ক্ষমাশীলতা চর্চা করা, এবং সরাসরি কাউকে অপমান না করা।
*উপসংহার:* রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আখলাক, নীতি, নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ এমন এক মহাসমুদ্র, যার তল নেই, প্রান্ত নেই। তার জীবন আমাদের জন্য মিসবাহ (প্রদীপ), যা অন্ধকারে আলোকের পথ দেখায়। বর্তমান যুগের অস্থিরতা, রূঢ়তা ও বৈষম্যের ভিড়ে তাঁর জীবন ও চরিত্র আমাদের কাছে সেই শান্তির বার্তা বহন করে, যেখানে আছে মানবিকতা, সহনশীলতা, দয়া ও সুবিচার।
আমাদের কর্তব্য, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আখলাক নিজের জীবনে ধারণ করা এবং তাঁর সেই অমীয় শিক্ষা সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া। কারণ তিনিই আমাদের জন্য “উসওয়াতুন হাসানা (সর্বোত্তম আদর্শ)"। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর মহান চরিত্র অনুসরণের তৌফিক দিন।
*আল্লাহ-হুম্মা সাল্লি, ওয়া সাল্লিম, ওয়া বারিক আ'লা মুহাম্মাদ; আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ'লামীন*। (মূসা: ০৮-০৭-২৫)
প্রধান উপদেষ্টাঃ ফরহাদ মাজহার
উপদেষ্টাঃ এস,এম নজরুল ইসলাম ভুইয়ামোঃ আমিনুল ইসলাম,
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ আবুল হাসেম,
সহঃসম্পাদকঃ আলী নওয়াব খোকন,
বার্তা সম্পাদকঃ ইয়াছিন আরাফাত,
সহকারী বার্তা সম্পাদকঃ এম, আসমত আলী মিসু,
সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদকঃ আসাদুজ্জামান খান মুকুল,
www.dainikbanglarsangbad.com
ইমেইলঃ dainikbanglarsangbad490@gmail.com
প্রধান কার্যলয়ঃ বাড়ি নং ৩৫, রোড নং ৪, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
মোবাইলঃ01736091515, 01716698621
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Copyright © 2025 dainikbanglarsangbad.com. All rights reserved.