মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:
নওগাঁর মহাদেবপুরে নাহিদ হোসেন (৪০) নামের এক যুবকের মৃত্যু ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্যের অন্তর্জাল। পরিবারের দাবী স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে পিটিয়ে হত্যার পর কীটনাশক পানে আত্মহত্যার প্রচার চালানো হচ্ছে।
অন্যদিকে স্ত্রী সন্তানরা জানান, পারিবারিক কলহের জেরে কীটনাশক পানে আত্ত্বহত্যা করেছে সে। আজ সকাল শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) পারিবারিক কবরস্থান উপজেলার বাজিতপুর গ্রামে দাফন করা হয় তাকে।
নিহত নাহিদ হোসেন উপজেলার চেরাগপুর ইউপির বাজিতপুর গ্রামের ওসমান আলীর
ছেলে। নিহতের পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় ২১ বছর পূর্বে একই গ্রামের
আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে সাথী বানুর সাথে নাহিদ হোসেনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের
সংসারে ১ ছেলে ও ১ মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। সংসারে অভাব অনটন থাকায় বেশ কিছুদিন পূর্বে স্বামী-স্ত্রী ঢাকায় গিয়ে আশুলিয়ার বসুন্ধরা টেকে একটি বাসায় রুম ভাড়া নেয়।
সেখানে স্ত্রী সাথী বানু একটি গার্মেন্টসে চাকুরী নেয় ও নাহিদ রিকশা চালিয়ে
জীবিকা নির্বাহ করতেন। সেখানে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। গত
কয়েকদিন থেকে তাদের পারিবারিক কলহ চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। এরই এক পর্যায়ে গত
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নাহিদ কীটনাশক পান করে অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রত তাকে উদ্ধার করে প্রথমে হ্যাপী হাসপাতালে ও পরে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৯ টার দিকে তার মৃত্যু হয়। সেখানে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার ভোরে গ্রামের বাড়ি বাজিতপুরে নিয়ে আসা হয় নাহিদের লাশ।
নিহতের ছোট ভাই নাজমুল হুদা, ভগ্নিপতি শফিকুল ইসলাম বাবুসহ স্বজনরা অভিযোগ করেন যে, নাহিদের লাশের কপালে, পেটের দুইপাশে ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়াও তার বাম হাতের কব্জির নিকট ভাঙা রয়েছে। তারা আরো অভিযোগ করেন, নাহিদের স্ত্রী সাথী পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়েছে এমন সন্দেহে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুনঃ সরকারি গাড়িতে ইউএনও’র স্বামীর নিয়মিত অফিসযাত্রা, উঠছে প্রশ্ন
এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, স্ত্রী সাথী নিজের পরকীয়া সম্পর্ক আড়াল করতে ভাই মিলনসহ নাহিদকে মারপিট করে হত্যার
পর কীটনাশক পানে আত্মহত্যার প্রচার করছে। স্ত্রী সাথী বানু জানান, প্রায় ২২ বছর
পূর্বে নাহিদ তাকে ধর্ষণ করেছিল। সে ব্যাপারে আদালতে মামলা হলে সে মামলা থেকে
বাঁচাতে নাহিদের পরিবার তার সাথে নাহিদের বিয়ে দেয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই শশুর
বাড়ির লোকজনসহ স্বামী নাহিদ তাকে নানাভাবে নির্যাতন করে আসছিল। সে মাদকাসক্তও
ছিল। এসব বিষয়ে বেশ কিছুদিন থেকে তাদের পারিবারিক কলহ চলছিল। এর জেরেই
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে নাহিদ। পরে চিকিৎসাধীন
অবস্থায় রাত সাড়ে ৯ টার দিকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। নাহিদের
ছেলে সোহান হোসেন (১৭) মারপিটের কথা অস্বীকার করে তার বাবা কীটনাশক পান করে
আত্মহত্যা করেছেন বলে জানান।