ওয়াস-সালাম,
ডা. এম. জি. মোস্তফা মূসাঃ
আজকের উক্তি: অতীত আর ভবিষ্যৎ দুটোই খুব অদ্ভুত, অতীত ফিরে পাওয়া যায় না, ভবিষ্যৎ জানা যায় না, তবুও সবাই অতীতের স্মৃতি আর ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়েই বর্তমানটা কাটিয়ে দেন।
_সময় (Time) কি কোন বিমূর্ত ধারণা? বৈজ্ঞানিক, ইসলামিক এবং দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে সময়:_
*১. বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে সময়:* সময় (Time) একটি মাত্রা (Dimension), যাকে আমরা সাধারণত দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতার মতো স্থানিক মাত্রার (Spatial Dimensions) সঙ্গে তুলনা করতে পারি।
আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব (Theory of Relativity) অনুযায়ী, সময় আর স্থান একত্রে “Space-Time” তৈরি করে। অর্থাৎ সময় একা কোনো কিছু নয়, এটি স্থান, বস্তু ও শক্তির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
গতি (Motion) ও মহাকর্ষবল (Gravitational Force) সময়কে প্রভাবিত করে — যেমন উচ্চ গতি বা প্রবল মহাকর্ষক্ষেত্রে সময় ধীরগতি হয়, এটিকে টাইম ডাইলেশন (Time Dilation) বলে।
বিগ ব্যাং তত্ত্ব অনুযায়ী, সময়ের শুরু হয়েছিল প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে মহাবিশ্বের সৃষ্টি লগ্নে। অর্থাৎ সময়ও সৃষ্টি হয়েছে — এটি চিরন্তন নয়।
বৈজ্ঞানিকভাবে, সময় হলো পরিমাপযোগ্য (যেমন ঘড়ি দিয়ে), কিন্তু সেটি মানসিক উপলব্ধি নয়, বরং পদার্থবিজ্ঞানে ব্যবহৃত একটি গাণিতিক এবং বাস্তব কাঠামো।
আরও পড়ুনঃ গফরগাঁওয়ে আনন্দঘন পরিবেশে কাপ কার্নিভাল প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত
*২. ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে সময়:* ইসলামে সময়কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, পবিত্র এবং অমূল্য সম্পদ হিসেবে দেখা হয়I আল-কুরআনে বলা হয়েছে: *“وَالْعَصْرِ إِنَّ الْإِنسَانَ لَفِي خُسْرٍ”*
(সূরা আল-আসর ১–২); “শপথ সময়ের, নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে…” এখানে সময়ের প্রতি আল্লাহর শপথ সময়ের গুরুত্বকেই নির্দেশ করে।
হাদীসে বলা হয়েছে: “মানুষের দুটি নিয়ামত আছে, যেগুলোতে অনেকেই ধোঁকায় পড়ে যায়: সময় এবং স্বাস্থ্য।” (বুখারী)!
ইসলামে সময় হলো আমানত (Trust), যা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। সময়ের হিসাব নেয়া হবে কেয়ামতের দিনে। সময় এক দান, যার সঠিক ব্যবহারই জীবনের সফলতা।
*৩. দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে সময়:* সময়ের প্রকৃতি নিয়ে দার্শনিকরা অনেক যুগ ধরে বিতর্ক করেছেন।
_(ক). অ্যাগাস্টিন (St. Augustine) বলেছিলেন:_ “আমি জানি সময় কী, কিন্তু যখন আমাকে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়, তখন পারি না।” তার মতে, সময় হলো মনের ভেতরের এক অভিজ্ঞতা — যা আমাদের স্মৃতি (past), প্রত্যক্ষ (present), ও প্রত্যাশা (future) দ্বারা গঠিত।
_(খ). ইমানুয়েল কান্ট (Kant) মনে করেন:_ সময় হলো মানুষের জ্ঞানের কাঠামোর অংশ। মানে, সময় আমাদের অভিজ্ঞতাকে সাজানোর একটি মানসিক উপায় — এটি বাস্তবে বাইরে নেই, বরং আমাদের চেতনার ভিতরে বিদ্যমান।
_(গ). হেনরি বার্গসন (Henri Bergson) বলেন:_ সময় দুই রকম, মেকানিকাল টাইম (clock time), যা ঘড়ি মাপে; দৈনন্দিন অনুভবযোগ্য সময় (lived time), যা আমরা অনুভব করি।
দার্শনিকভাবে, সময় একটি বিমূর্ত ধারণা, যা বাস্তব নয় বরং আমাদের বোধের কাঠামো।
*৪. উপসংহার:* বৈজ্ঞানিক, ইসলামিক এবং দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে সময় কি:
(ক). বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে সময় স্থান-সময় একত্রে একটি চতুর্মাত্রিক কাঠামো পরিমাপযোগ্য, বাস্তব I
(খ). ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে সময় হলো আল্লাহর দেওয়া একটি নিয়ামত ও পরীক্ষার উপাদান পবিত্র, হিসাবযোগ্য।
দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে সময় হলো দার্শনিক চেতনার কাঠামো বা বিমূর্ত অনুভব বিমূর্ত, অভিজ্ঞতাভিত্তিক।
_শেষ কথা:_ সময় একদিকে ঘড়ির কাঁটার মতো নির্ভুল, অন্যদিকে আমাদের অনুভবের মতো রহস্যময়। বিজ্ঞান এটিকে মাপে, ইসলাম এটিকে মূল্যায়ন করে, আর দর্শন এটি নিয়ে ভাবতে শেখায়। তাই সময়কে শুধু হিসাব না করে, অর্থপূর্ণভাবে ব্যবহার করাটাই আমাদের আসল দায়িত্ব। (মূসা: ২৩-০৬-২৫)