আলতাফ আলী তরফদারঃ
আজ ২২ সেপ্টেম্বর। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামী চিন্তাবীদ ও ইসলামী আন্দোলনের বিপ্লবী সিপাহসালার মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রাহি.)-এর মৃত্যুবার্ষিকী।
তিনি ছিলেন ইসলামী জাগরণের অগ্রপথিক। তাঁর সমস্ত জীবন অতিবাহিত হয়েছে কঠোর শ্রম-সাধনা, অগাত জ্ঞানচর্চা ও গবেষণায় এবং অপরদিকে বিশ্বমানবতার কাছে দ্বীন ইসলামকে তার প্রকৃতরূপে উপস্থাপনায়।
সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রাহি.)-এর পুরো জীবনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো উল্লেখ করা হলো-
১৯০৩- ২৫ সেপ্টেম্বর হায়দরাদে জন্ম গ্রহণ করেন।
১৯১৮- সাংবাদিক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন, প্রথমেই বিজনৌরের একটি পত্রিকায় কাজ শুরু করেন।
১৯২০- মধ্যপ্রদেশের জবলপুরে ‘তাজ’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
১৯২১- খিলাফত আন্দোলনে অংশ নেন। দিল্লিতে ফিরে যাওয়া ও মাওলানা আব্দুস সালাম নিয়াজির কাছে আরবি ভাষা শিক্ষাগ্রহণ করেন।
১৯২৩- জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের মুখপাত্র ‘দৈনিক মুসলিম’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
১৯২৫- ইংরেজ সরকার কর্তৃক মুসলিম বন্ধ হয়ে গেলে ‘আল জামিয়ত’ নামে আরেকটি পত্রিকা চালু করে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ। তিনি এই পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন।
আরও পড়ুনঃ এক্সএমজি মিউজিক গ্রুপের উদ্যোগে সেনবাগে দুস্থ পরিবারের মাঝে উপহার সামগ্রী বিতরণ
১৯২৬- দিল্লির ‘দারুল উলুম ফতেহপুরি’ থেকে ‘উলুম-এ-আকালিয়া ওয়া নাকালিয়া’ সনদ লাভ করেন।
১৯২৭- ‘আল জিহাদ ফিল ইসলাম’ নামে জিহাদ বিষয়ক একটি গবেষণাধর্মী গ্রন্থ রচনা শুরু করেন জমিয়ত পত্রিকায়।
১৯২৮- দারুল উলুম ফতেহপুরি থেকে ‘জামে তিরমিযি’ এবং ‘মুয়াত্তা ইমাম মালিক’ সনদ লাভ করেন।
১৯২৮ – জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ কংগ্রেসের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করায় আল জমিয়ত পত্রিকা কংগ্রেসের হয়ে কাজ করতে শুরু করে। মাওলানা মওদূদীকে জমিয়তের নেতারা হিন্দুত্ববাদী সংগঠন কংগ্রেসের পক্ষে লিখতে চাপ দেয়। এজন্য তিনি সম্পাদকের চাকুরি ছেড়ে দেন।
১৯২৮- হায়দরাবাদে ফিরে যান এবং জ্ঞান চর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। আর চাকুরি না করার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৩০- ‘আল জিহাদ ফিল ইসলাম’ নামের ধারাবাহিক লেখা বই আকারে প্রকাশিত হয়।
১৯৩২- ভারতের হায়দারাবাদ থেকে ‘তরজুমানুল কুরআন’ নামে নিজের পত্রিকা প্রকাশ করেন। তার এই পত্রিকা ভারতের মুসলিম বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। এই পত্রিকার মাধ্যমে আল্লামা ইকবালের সাথে মাওলানা মওদূদীর পরিচয় হয়।
১৯৩৭ – ১৫ই মার্চ দিল্লির এক প্রসিদ্ধ পরিবারের সাইয়িদ নাসির উদ্দিন শামসির কন্যা মাহমুদা বেগমের সাথে সাইয়েদ মওদূদীর বিবাহ হয়।
১৯৩৮- আল্লামা ইকবালের অনুরোধে মাওলানা মওদূদীর নেতৃত্বে পাঞ্জাবের পাঠাকোটে চৌধুরি নিয়াজ আলীর ৬৬ একর জমিতে ‘দারুল ইসলাম ট্রাস্ট’ গঠিত।
১৯৩৮- জমিয়তের প্রধান হুসাইন আহমেদ মাদানীর লেখা ‘মুত্তাহিদা কওমিয়াত আওর ইসলাম’ নামক বইটির যুক্তি খন্ডন করে ‘মাসয়ালায়ে কওমিয়াত’ বইটি লিখেন। তার এই বইটি সারা ভারতের মুসলিমদের উজ্জীবিত করে এবং মুসলিম লীগের পক্ষে জনমত তৈরি হয়। শুধু তাই নয় এর প্রভাবে জমিয়তে হিন্দ ভেঙে শাব্বির আহমদ উসমানীর নেতৃত্বে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম গঠিত হয়। এভাবে কওমি ওলামাদের সাথে মাওলানার বিরোধ তৈরি হয়। তাদের অনেকে মাওলানাকে কাফের বলে অপবাদ দেয়।
১৯৪১- লাহোরে ‘জামায়াতে ইসলামী হিন্দ’ নামে একটি ইসলামী রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর আমীর নির্বাচিত হন।
১৯৪২ – ‘তাফহীমুল কুরআন’ নামক তাফসির গ্রন্থ লেখা শুরু করেন।
১৯৪৭ – দেশভাগের সাথে জামায়াতও দুইভাগ হয়ে যায়। ভারতে জামায়াতে ইসলামী হিন্দ থাকে। মাওলানা জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান নামে আলাদা সংগঠনের আমীর হন।
১৯৪৮ – ‘ইসলামী সংবিধান’ ও ‘ইসলামী সরকার’ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচারণা শুরু করেন।
১৯৪৮ – ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের জন্য পাকিস্তান সরকার তাকে কারাগারে বন্দী করে।
১৯৪৯ – পাকিস্তান সরকার জামায়াতের ‘ইসলামী সংবিধানের রূপরেখা’ গ্রহণ করে।
১৯৫০ – কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন।
আরও পড়ুনঃ এক্সএমজি মিউজিক গ্রুপের উদ্যোগে সেনবাগে দুস্থ পরিবারের মাঝে উপহার সামগ্রী বিতরণ
১৯৫৩- ‘কাদিয়ানী সমস্যা’ নামে একটি বই লিখে কাদিয়ানী বা আহমদিয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম প্রমাণ করেন। কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন তৈরি হয়। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন কিছু উগ্র নেতার কারণে সহিংসতায় রূপ নেয়। সামরিক সরকার মাওলানাকে গ্রেপ্তার করে ও ফাঁসীর আদেশ দেয়।
১৯৫৩- মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর চাপ এবং দেশী বিদেশী মুসলিম নেতৃবৃন্দের অনুরোধে মৃত্যুদন্ডাদেশ পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়, কিন্তু পরে তা-ও প্রত্যাহার করা হয়।
১৯৫৫ – মাওলানা কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন।
১৯৫৬ – দামেশকে অনুষ্ঠিত মুতামেরে আলমে ইসলামীর দ্বিতীয় সম্মেলনে যোগদান করেন।
১৯৫৮ – সকল রাজনৈতিক দলের সাথে জামায়াতকেও নিষিদ্ধ করে আইয়ুব খান।
১৯৫৯ – কুরআনে বর্ণিত স্থানসমূহ পরিদর্শনের জন্য মধ্যপ্রাচ্য গমন করেন। যা কুরআন বুঝার ক্ষেত্রে তাকে আরো বেশি সহায়তা করে।
১৯৬০ – মদিনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য গঠিত কমিটির সভায় যোগদান করেন। তিনি এর সিলেবাস প্রণয়নে ভূমিকা রাখেন।
১৯৬২ – জামায়াত আবারো রাজনীতি শুরু করে এবং মাওলানা জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতের আন্দোলন শুরু করেন।
১৯৬৪- আন্দোলন তীব্র হলে আইয়ুব খান জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে এবং মাওলানাকে গ্রেপ্তার করে। একই বছর তিনি মুক্তি পান।
১৯৬৭ – ঈদের চাঁদ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে আইয়ুব সরকার মাওলানাকে আবার বন্দী করে। দুই মাস পর মুক্তি পান।
১৯৭২- তাফহীমুল কুরআন নামক তাফসির গ্রন্থটির রচনা সম্পন্ন করেন।
১৯৭২- জামায়াতে ইসলামীর আমীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। এরপর থেকে জামায়াতের শুরা সদস্য হিসেবে ভূমিকা রাখেন।
১৯৭৮- তার রচিত শেষ বই ‘সিরাতে সারওয়ারে আলম’ প্রকাশিত হয়। এটি নবী মুহাম্মাদ-এর জীবনী গ্রন্থ।
১৯৭৯- ২২ সেপ্টেম্বর এই মহান মনীষী ইন্তেকাল করেন।
মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর খেদমতকে কবুল করুন!
আমীন!