ইমরোজের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, ছোটবেলা থেকে চায়ের দোকানে বাবাকে সহযোগিতা করে আসছেন ইমরোজ। দোকানেই পড়াশোনা করতেন তিনি। অনেক প্রতিকূলতাও থামাতে পারেনি ইমরোজকে। এক সময় দারিদ্র্যের কারণে প্রাথমিক স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হতে বসেছিল ইমরোজের।
বেলায়েত হোসেন ইমরোজের বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিনোদপুর বাছারকান্দি গ্রামে। শামছুল তালুকদার ও হালিমা বেগম দম্পতির ছেলে ইমরোজ। চার ভাইবোনের মধ্যে তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। চার বছরের বিবাহিত জীবনে ইমরোজেরও সাফরিনা নামে এক মেয়ে আছে।
আরও পড়ুনঃ এইচএসসি-বিসিএস পরীক্ষার্থীদের হাতে সময় নিয়ে বের হওয়ার আহ্বান ডিএমপির
ইমরোজ স্থানীয় বিনোদপুর মৌলভী কান্দি দাখিল মাদ্রাসা থেকে এসএসসি ও শরীয়তপুর সরকারি কলেজে এইচএসসি শেষ কর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে। স্নাতক শেষে ২০১৯ সালে ওই বিভাগ থেকে তিনি স্নাতকোত্তর পাস করেন। পড়ালেখা শেষে সরকারি চাকরির প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেন ইমরোজ।
২০২২ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় সদর উপজেলায় প্রথম হন ইমরোজ। গত ২২ জানুয়ারি স্থানীয় ১২৬ নম্বর বড়সন্দিপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। পাশাপাশি নিতে থাকেন বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতিও।
আরও পড়ুনঃ বর্ষার বৃষ্টি- হাফিয রেদওয়ান
এরপর গত বৃহস্পতিবার ৪১তম বিসিএসের সুপারিশপ্রাপ্তদের নামের তালিকা প্রকাশ করে পিএসসি। সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে দর্শন বিষয়ে সারা দেশে দ্বিতীয় হন ইমরোজ। ইমরোজের সফলতায় খুশি বাবা-মাসহ স্থানীয়রা।
বেলায়েত হোসেন ইমরোজ বলেন, আমি একটি সাধারণ কৃষক পরিবারের সন্তান। বাবার একটি চায়ের দোকান আছে। সেই দোকানে বাবার সঙ্গে আমি চা বিক্রি করতাম, বাবাকে সহযোগিতা করতাম। পাশাপাশি আর বই ও পত্রিকা পড়তাম। বাবা-মা আমাকে পড়ালেখায় উৎসাহ দিতেন। তাই এত দূর আসতে পেরেছি। তাই পরিবার নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। আমার মা–বাবা আমাকে উন্নত জীবন দিতে দেশের সেরা বিদ্যাপীঠে পড়িয়েছেন।
৪১তম বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে দর্শন বিষয়ে মেধা তালিকায় দ্বিতীয় হয়েছি। এ সময় আমার বাবা-মা ও স্ত্রী আমাকে সহযোগিতা করেছেন। পড়ালেখা চালিয়ে নেয়ার জন্য বাবা-মা অনেক পরিশ্রম ও কষ্ট করেছেন। আমার সাফল্য দেখে তারা অনেক খুশি হয়েছেন, আমিও খুশি।
ইমরোজ বলেন, কর্মজীবনে আমি দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে যাব।
আরও পড়ুনঃ যাবার খবর এলো বুঝি – মজনু মিয়া
আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী বলেন, ইমরোজ অনেক ভালো ছেলে। লেখাপড়াও অনেক ভালো। এমন মেধাবী ছেলে আমাদের এলাকায় আর নেই। তিনি বিসিএস পরীক্ষায় সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে দর্শন বিষয়ে সারা দেশে দ্বিতীয় হয়েছেন। তার সফলতায় আমরা খুবই খুশি।
ইমরোজের মা হালিমা বেগম বলেন, পড়ালেখার খরচ জোগাতে আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। ছেলের সাফল্য দেখে সব কষ্ট ভুলে গেছি।
ইমরোজের বাবা শামছুল তালুকদার বলেন, আমরা গরিব পরিবারের মানুষ। দোকানে চা বিক্রি ও কৃষি কাজ করে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালানোই কষ্টসাধ্য। সন্তানদের পড়ালেখা না করাতে পারলে উন্নত জীবন পাব না। এমন ভেবে দিনরাত পরিশ্রম করে বিভিন্নভাবে আয় করেছি। আল্লাহ সহায় ছিলেন বলে চার সন্তানকে পড়ালেখা করাতে পেরেছি৷ আমার ছেলে বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে কলেজশিক্ষক হয়েছে। আমরা অনেক খুশি ও আনন্দিত।