শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন
Headline :
বাংলাদেশ জোট মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল হাসেম ন্যাশনাল ইউনিটি কাউন্সিল(এনইউসি) এর মহাসচিব বিদ্যুৎ চন্দ্র বর্মনের বাণী: মানবতার মূর্ত প্রতীক: *অধ্যাপক ড. আলহাজ্ব মোঃ শরীফ আব্দুল্লাহ হিস সাকী শিক্ষাবিদ ও মানবতাবাদী এক অনন্য সমন্বয়* -ড. এ আর জাফরী বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটে মূল চিন্তাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত প্রধান উপদেষ্টা ফরহাদ মাজহার বগুড়া গাবতলী স্টেশনের রেলওয়ে কর্মচারীকে মারপিট করে আহত করে ২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় – দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে নতুন সম্ভাবনার দিগন্তে বাংলাদেশ ময়মনসিংহে পলাতক আসামী গেপ্ততার করেছে র‍্যাব ১৪ যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৩ বিজিবির অভিযানে ইয়াবাসহ আটক ১ বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বিএনপিরভারপ্রাপ্তচেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ দোয়া মাহফিল

নাসিরনগরের মারুফার সংসার চলে সন্তান বিক্রির টাকায়

এম বাদল খন্দকার (বিশেষ প্রতিনিধি) / ১৪ Time View
Update : বুধবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৫

নাসিরনগরের মারুফার সংসার চলে সন্তান বিক্রির টাকায়

এম বাদল খন্দকার (বিশেষ প্রতিনিধি)

জন্মের পর জন্মদাতা মায়ের কোলে উঠেনি সন্তান। জন্মের আধাঘণ্টার মধ্যেই অন্যের হাতে তুলে দেয়া হলো সন্তানটিকে। বিনিময়ে মিললো টাকা ও চাউল। এতে বেশ ভালোই চলছিলো তাদের সংসার।

নবজাতকের পিতা মোহাম্মদ আলী লালনের ভাষ্যমতে, ‘কাছা থাকতেঅই দেলাইছলাম পুলাডারে। মার বুকের দুধটা খাওয়াইবার ওটাইম দিছে না। কথা যখন দেলাইছি এর লাইগ্যা কিছু কইতামও পারি না। অহন পোলাডা কই আছে,কার কাছে আছে ইতা ত আমি অ জানি না।

ওই সন্তানটি ছিলো লালনের ষষ্ঠ সন্তান। মাস দেড়েক আগে জন্ম নেয়া ৭ম সন্তানও তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। জন্মের ১৪ দিনের মাথায় সন্তানকে তুলে দেন আগের মতোই অন্যের হাতে। এবারও বিনিময়ে মিলে টাকা।

লালন বলেন, ‘কিতা আর করুম কন। অতলা পুলামায়া লইয়া ত আর চলতাম পারি না। খাওন দিতাম পারি না। তবে আমি ত পুলাপান বেচি না। যারা নে হেরা খুশি হইয়া আমারে যা দে তা অই রাহি। এইবার দিবার সময় কাগজ কইরা দিছি। যাতে মাইঝে মাইঝে পুলাডারে দেখতাম পারি। তবে পুলা কুন বাড়িত গেছে জানি না। হুনচি হেরা ডাহা লয়া গেছে গা। জন্মের পর পুলার অসুখ দেহা দে। জ্বর ঠান্ডা আছিল। চিন্তা করলাম চিকিৎসা জহন করাইতারতাম না তহন ইডা দেলাইলেঅই বালা।’

জানা গেছে মোহাম্মদ আলী লালন একজন ভবঘুরে। স্ত্রী মারুফা বেগম করেন ভিক্ষা।বড় সন্তানদের দিয়েও করানো হয় ভিক্ষা।বিয়ের দশ বছরে ৭ সন্তান জন্ম দিয়েছে এ দম্পত্তি। বছর দেড়েক আগে ষষ্ঠ সন্তান জন্মের পর বিক্রি করে দেন। আবারও বিক্রি করলেন আরেক সন্তান।

দারিদ্রতায় যেন বিবর্ণ জীবন। ভাঙাচুরা টিনের ঘর।নিজের কোন বাড়িঘর নেই। থাকেন প্রতিবেশী সোলেমান মিয়ার বাড়ির পরিত্যক্ত একটি ঘরে। দুপুরের সূর্যটা ঘর ভেদ করে ঢুকছে। বৃষ্টি হলে পানি পড়াটা নাকি স্বাভাবিক বিষয়। ঘরে আসবাবপত্র বলতে কিছুই নেই! না আছে বসার কিংবা ঘুমানোর জায়গা। রান্নার দু’একটা পাতিল আর নিজেদের কয়েকটা কাপড়ই সম্বল। বাজার থেকে কুড়িয়ে আনা পুঁটি মাছ দিয়ে রান্না করা ঝুলে ভাত খাচ্ছে লালন-মারুফার সন্তানরা।

লালন-মারুফা দম্পতির বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়েনের শ্রীঘর গ্রামের তেলি বাড়িতে। লালন ও মারুফা বেগম দম্পতি থাকেন অন্যের জায়গায় তোলা ঘরে। লালনের বাবার চিকিৎসায় বাড়ি বিক্রি করে দেয়ায় এলাকার মানুষের সহায়তায় ছোট্ট একটি ভাঙ্গা একটি ঘরেই তাদের ঠাঁই হয়।

এলাকাবাসী জানালেন, এ দম্পতির সন্তান বিক্রিসহ দুরবস্থার কথা জেনে তারাও কষ্ট পেয়েছেন। তবে এটা ঠিক যে এসব বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে সেভাবে কথা বলা হয়ে উঠেনি কিংবা তাদেরকে সচেতনতামূলক পরামর্শও দেয়া হয়নি। সরকারিভাবে কোনো সহায়তা বা পরামর্শও পাননি বলে জানান এলাকার মানুষ।

৫ সন্তানকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা মারুফা বেগমকে সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। ঘরে যাওয়ার অনুরোধ করলে ভেতরে গিয়ে চোখ ছানাবড়া। মাত্র ১০০ স্কয়ার ফুটের মতো ঘরে সাতজনের বাস কীভাবে সম্ভব- এমন প্রশ্নে মারুফা বলতে থাকেন, ‘কুনু রহমে তাহি আরকি। নিজের বাড়ি নাই। আরেকজন জাগা দিছে। এলাকার মাইনসে ঘর তুইল্লা দিছে। মাডির মইদ্দেই আমডা গুমাই। বাইরে জে চুলা আছে ইডাত রান্দি। ঘরে আইন্না খাই। অতলা পুলা মায়া জহন কষ্ট ত করন অই লাগবো। ত খারাপ লাগে বৃষ্টি আইলে। পুলাপানডি ক কুন সম ঘর ঠিক করুম। তহন হেরার বাফে বুজাই দে।’

মারুফা জানায়, বর্তমানে বাড়িতে থাকা ৫ সন্তানের মধ্যে বড় আট বছর বয়সি মেয়েটা মাঝে মাঝে বিদ্যালয়ে যায়। সবার ছোট দুজন এখনো ভালোভাবে কথা বলতে পারে না।

শ্রীঘর গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা জামায়াতের আমির মো. আমীরুল ইসলাম জানান, ওই দম্পতির ২ সন্তান বিক্রির খবরটি তিনি জেনেছেন। উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে পরিবারটির জন্য কিছু করার চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।

নাসিরনগর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা রাকেশ পাল বলেন, ‘লালনের স্ত্রী ভিক্ষা করেন। ভিক্ষুকদের নিয়ে সরকারের একটি প্রকল্প আছে। সেখান থেকে ওই নারীকে সহায়তা করার চিন্তা করছি।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category