ডঃ এম, জি, মস্তফা মুসাঃ
একজন মুসলিমের জীবনের মূলভিত্তি হলো তাওহীদ, ‘আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ ও ইবাদাতের একমাত্র মাবুদ হিসেবে স্বীকার করা’। কোরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শিরক করাকে ক্ষমা করবেন না, তবে তিনি ইচ্ছা করলে এর বাইরে অন্য যেকোনো গুনাহ ক্ষমা করবেন” (সূরা নিসা ৪:৪৮)। অর্থাৎ, ঈমান ও শিরকের মধ্যে কোনো সমঝোতার সুযোগ নেই।
_সম্প্রতি আমার সুহৃদয় বন্ধু প্রফেসর ডা. আমজাদ আলী লিটন লিখেছেন: “একজন ঈমানদার মুসলিম কখনো পৌত্তলিকতাকে কোন ভাবে উৎসাহিত করতে পারে না। সুতরাং “শুভ মহালায়া”বলা সরাসরি শিরক। ভাতৃত্ববোধে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু শিরকের ব্যাপারে কোন সমঝোতা নেই।”_
উপরোক্ত এই বক্তব্য ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক পাওয়া যায়:
_১. শিরককে উৎসাহ দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ:_ ইসলাম অন্য কোনো ধর্মের উপাসনা বা আচারকে সমর্থন করতে অনুমতি দেয় না। অন্য ধর্মের উৎসবকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে শুভেচ্ছা জানানো মানে সেই বিশ্বাস ও উপাসনার প্রতি সম্মতি দেওয়া, যা একজন মুসলমানের ঈমানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে “শুভ মহালয়া” বা “শুভ দুর্গাপূজা” বললে তা শিরক-সমর্থনের মতো প্রতীয়মান হতে পারে।
_২. ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবিক সৌজন্য:_ অন্যদিকে, ইসলাম মানবিক সৌজন্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখতে উৎসাহিত করে। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন: “যারা তোমাদের সঙ্গে ধর্মের কারণে যুদ্ধ করে না এবং তোমাদেরকে তোমাদের ঘর থেকে বের করে দেয়নি, আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দেন যে তোমরা তাদের সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করবে এবং তাদের প্রতি সদয় হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন” (সূরা মুমতাহিনা ৬০:৮)।
অতএব, অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সদাচরণ, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, প্রতিবেশিত্ব ও সৌজন্যমূলক সম্পর্ক ইসলামে বৈধ, বরং প্রশংসনীয়। তবে সেই সৌজন্য যেন তাদের ধর্মীয় আচার ও অনুষ্ঠানকে সমর্থন বা অংশগ্রহণে রূপ না নেয়।
_৩. বিকল্প ভাষা ব্যবহার:_ শুভেচ্ছা প্রকাশের জন্য মুসলমানরা বিকল্প ও নিরপেক্ষ বাক্য ব্যবহার করতে পারেন। যেমন—“আপনাদের জন্য কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করি”। এতে সৌজন্যও রক্ষা হবে, আবার ধর্মীয় উৎসবের প্রতি কোনো সমর্থনও প্রকাশ পাবে না।
_৪. দাওয়াহর পদ্ধতি:_ বন্ধু আমজাদ আলীর বক্তব্য মূলত সত্য হলেও তাঁর ভাষা কিছুটা নমনীয় হতে পারত। ইসলামে দাওয়াহ প্রদানের ক্ষেত্রে কোমলতা ও প্রজ্ঞার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে: “তুমি তোমার রব্বের পথে আহ্বান করো হিকমা-প্রজ্ঞা ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে, এবং তাদের সাথে বিতর্ক করো উত্তম পন্থায়” (সূরা নাহল ১৬:১২৫)। তাই শিরকের বিষয়ে কঠোর অবস্থান বজায় রেখেও ভাষা যেন নরম, যুক্তিনির্ভর ও দাওয়াহ-উপযোগী হয়, সেটাই উত্তম।
*উপসংহার:* ইসলামে শিরকের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই, এটি ঈমানের মূলনীতি। তবে একইসাথে ইসলাম সৌজন্য, ন্যায়পরায়ণতা, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধকে গুরুত্ব দিয়েছে। একজন মুসলিমকে তাই এমন পথ অনুসরণ করতে হবে, যাতে শিরক সমর্থন না হয়, আবার মানবিক সম্পর্ক ও সামাজিক ভদ্রতাও নষ্ট না হয়। সেইদিক থেকে বন্ধু আমজাদ আলীর বক্তব্য মূলত ইসলামের নীতির সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। আল্লাহ যেন আমজদকে এবং আমাদের সকলকে ঈমান ও আমলে সালিহার উপর কবুল করেন।
*আল্লাহ-হুম্মা সাল্লি, ওয়া সাল্লিম, ওয়া বারিক আ’লা মুহাম্মাদ; আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন*। (মূসা: ২২-০৯-২৫)