শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:০৮ পূর্বাহ্ন
Headline :
বাংলাদেশ জোট মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল হাসেম ন্যাশনাল ইউনিটি কাউন্সিল(এনইউসি) এর মহাসচিব বিদ্যুৎ চন্দ্র বর্মনের বাণী: মানবতার মূর্ত প্রতীক: *অধ্যাপক ড. আলহাজ্ব মোঃ শরীফ আব্দুল্লাহ হিস সাকী শিক্ষাবিদ ও মানবতাবাদী এক অনন্য সমন্বয়* -ড. এ আর জাফরী বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটে মূল চিন্তাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত প্রধান উপদেষ্টা ফরহাদ মাজহার বগুড়া গাবতলী স্টেশনের রেলওয়ে কর্মচারীকে মারপিট করে আহত করে ২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় – দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে নতুন সম্ভাবনার দিগন্তে বাংলাদেশ ময়মনসিংহে পলাতক আসামী গেপ্ততার করেছে র‍্যাব ১৪ যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৩ বিজিবির অভিযানে ইয়াবাসহ আটক ১ বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বিএনপিরভারপ্রাপ্তচেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ দোয়া মাহফিল

*ইউনুস (আ.): তাওবার গুরুত্ব ও* *দায়িত্ব পালনের হিকমাহ*

Reporter Name / ২৪ Time View
Update : সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫
ওয়াস-সালাম, ডা. এম. জি. মোস্তফা মূসা

ওয়াস-সালাম,
ডা. এম. জি. মোস্তফা মূসাঃ

_ভূমিকা:_ নবী ইউনুস (আ.)-এর জীবন ও কাহিনী কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, বরং তা একটি অনন্য দাওয়াতি শিক্ষা, আত্মশুদ্ধি, ও তাওবার শক্তি নিয়ে গভীর হিকমাহর এক মহামূল্যবান পাঠ। আল-কুরআনে তাঁর জীবন কাহিনী অত্যন্ত সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলেও, তাতে রয়েছে নেতৃত্বের দায়িত্ব, আত্মোপলব্ধি এবং আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার চাবিকাঠি হিসেবে তাওবার গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। ইউনুস (আ.) এমন এক নবী ছিলেন, যিনি দায়িত্বের ক্ষেত্রেও এমন এক সিদ্ধান্ত নেন যা আল্লাহর পছন্দ হয়নি, কিন্তু খাঁটি তাওবার মাধ্যমে আবার আল্লাহর ক্ষমা ও রহমত লাভ করেন।

*১. ইউনুস (আ.)-এর পরিচিতি ও দাওয়াতি জীবন:* ইউনুস (আ.) ছিলেন একজন প্রেরিত নবী, যিনি নিনাওয়াহ (Nineveh) নামক অঞ্চলে দাওয়াত দিয়েছেন, যা বর্তমান ইরাকের মসুল এলাকার অন্তর্গত।। তাঁর জাতি ছিল মূর্তিপূজায় নিমগ্ন, যারা আল্লাহর একত্ববাদ (তাওহীদ) প্রত্যাখ্যান করছিল।এবং তারা তাঁর আহ্বানে কর্ণপাত করছিল না। অনেক চেষ্টার মাধ্যমে তাঁর জাতিকে আল্লাহর শাস্তির সম্পর্কে সতর্ক করার পর, যখন তাঁর জাতির লোকেরা তাঁর দাওয়াতকে প্রত্যাখান করে, তখন তিনি হতাশ হয়ে আল্লাহর পূর্ব-অনুমতি ছাড়াই স্থান ত্যাগ করেন, যা ছিল তাঁর জন্য অনুচিত। এই তাড়াহুড়োপূর্ণ সিদ্ধান্তই তাঁকে আল্লাহর বিশেষ এক নিদর্শনের মুখোমুখি করে তোলে। আল্লাহ তাঁকে শিক্ষা দিতে একটি মাছের পেটে পাঠিয়ে দেন, যেখানে তিনি তাওবা করেন ও আল্লাহর প্রশংসা করেন।

*২. ইউনুস (আ.)-এর কাহিনী থেকে নীতিমূলক শিক্ষা:* (ক). দায়িত্বে অবহেলার পরিণতি: নবীর পর্যায়েও দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া গুরুতর বিষয়। নবী হয়েও দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া আল্লাহর কাছে অপ্রিয়; এটি দেখায় যে দায়িত্বশীলতা নবীর জীবনের অপরিহার্য গুণ। (খ). আত্মবিশ্লেষণ, অনুশোচনা ও তাওবা: মাছের পেটের অন্ধকারে ইউনুস (আ.) বলেন: “লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনায্-য্বালিমীন”। আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আপনি পবিত্র, আমি তো ছিলাম যালিমদের একজন। (সূরা আল-আম্বিয়া, ২১:৮৭)। এই দো’আটি সূরা আল-আম্বিয়া (২১:৮৭) থেকে, যা ইউনুস (আ.) মাছের পেটে থেকে পাঠ করেছিলেন। এটি বিপদের সময় ও তাওবার দো’আ হিসেবে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ইউনুস (আ.) খাঁটি তাওবার মাধ্যমে তাঁর ভুল উপলব্ধি করেন। (গ). আল্লাহর রহমত ও ক্ষমাশীলতা: আল্লাহ বলেন, “অতঃপর আমি তাঁর দো’আ কবুল করলাম এবং তাঁকে দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি দিলাম, আর আমি এভাবে মু’মিনদের উদ্ধার করে থাকি।” (সূরা আল-আম্বিয়া, ২১:৮৮)। খাঁটি অনুতাপ ও ইখলাসের মাধ্যমে আল্লাহ ইউনুস (আ.)-কে ক্ষমা করে দেন। (ঘ). সমষ্টিগত তাওবার গুরুত্ব: ইউনুস (আ.)-এর কওম একমাত্র জাতি যারা পরবর্তীতে সমষ্টিগতভাবে তাওবা করে এবং আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি থেকে মুক্তি দেন (সূরা ইউনুস ১০:৯৮)।

আরও পড়ুনঃ নরসিংদীতে কশিপ, পারিবারিক মিলনমেলা ও কার্য নির্বাহী কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত

*৩. ইউনুস (আ.)-এর জীবন থেকে হিকমাহর শিক্ষা:* (ক). তাওবার শক্তি: মাছের পেটের অন্ধকারে ইউনুস (আ.) আল্লাহর নিকট দো’য়া করেছিলেন: “লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা, ইন্নি কুনতু মিনাজ-জ্বালিমীন” (সূরা আম্বিয়া ২১:৮৭)। এই দো’য়াটি চরম বিপদে পড়লে তাওবার সর্বশ্রেষ্ঠ দো’য়া। আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে খাঁটি তাওবা করলে আল্লাহর কাছে কিছুই অসম্ভব নয়। (গ). আল্লাহর প্রশংসা ও তাওহীদে প্রত্যাবর্তন: এটি মুক্তির চাবিকাঠি। ইউনুস (আ.)-এর দোআয় রয়েছে তাওহীদ ও পবিত্রতার ঘোষণা এবং নিজের অপরাধের স্বীকৃতি—এই তিনটি উপাদান তাওবার পূর্ণতা এনে দেয়। (ঘ). নেতৃত্বের শিক্ষা: নবীর পর্যায়েও দায়িত্ব পালনে অবহেলা আল্লাহর কাছে গৃহীত হয় না, বরং তা সংশোধন ও আত্মোপলব্ধির মাধ্যমেই মুক্তি সম্ভব। (ঙ). শিক্ষার স্তর: আল্লাহ একজন নবীকেও ভুলের মাধ্যমে শিক্ষা দেন—এতে বোঝা যায় যে দায়িত্বের গুরুত্ব কত গভীর।

*৪. আল-কুরআনে ইউনুস (আ.)-এর কাহিনী:* হিকমাহ ও নিদর্শনের আলোকে: কুরআনের বিভিন্ন সূরায় তাঁর কাহিনী এসেছে। সূরা আস-সাফফাত (৩৭:১৩৯–১৪৮): মাছের পেটের অভিজ্ঞতা ও কওমের ইমান গ্রহণ। সূরা আল-আম্বিয়া (২১:৮৭–৮৮): তাওবা ও আল্লাহর রহমত লাভের দৃষ্টান্ত। সূরা ইউনুস (১০:৯৮): সমষ্টিগত তাওবার কারণে জাতির মুক্তি। এতে তুলে ধরা হয়: (ক). আত্মোপলব্ধি; (খ). আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি; (গ). ব্যক্তিত্বের পরিণতি; এবং (ঘ). কওমের সমষ্টিগত তাওবার মর্যাদা।

*৫. ইউনুস (আ.)-এর স্থান ত্যাগ এবং দলীয় দায়িত্ব বণ্টনের হিকমাহ:* এখানে রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিকমাহ: (ক). স্বাধীন সিদ্ধান্তের সীমা নির্ধারণ: একজন নবী হলেও আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া দায়িত্ব ত্যাগ শোভন নয়। (খ) দলীয় কাঠামো রক্ষা: নেতৃত্বে থেকে কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে চলে যাওয়া সংগঠন ভেঙে ফেলে। Delegation না করে স্থান ত্যাগ করলে নেতৃত্বব্যবস্থা ব্যর্থ হয়—এটি আধুনিক সংগঠনিক ব্যবস্থাপনায়ও গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। (গ). দাওয়াহ আন্দোলনের নিয়মনীতি ও ধৈর্য: হতাশ হলেও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া কর্তব্য। হতাশ হওয়া নয়, বরং ধৈর্য ও অবিচলতা নবীর বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত।

*৬. ইউনুস (আ.)-এর প্রতি নির্দিষ্ট নিদর্শন ও তার হিকমাহ বিশ্লেষণ:* (ক). মাছের পেটে থাকা: এটি এক অদ্ভুত নিদর্শন—অন্তরীণ আত্মবিশ্লেষণের প্রতীক। এই ঘটনা আত্মোপলব্ধির ঘন অন্ধকারকে প্রতীক করে, যেখানে একমাত্র আলো হলো আল্লাহর প্রশংসা ও তাওহীদ। (খ). বসুন্ধরার বাইরে অথচ জীবিত থাকা: জীবন্ত অবস্থায় গভীর সমুদ্রে থাকা: মানুষের জন্য এটি চরম শিক্ষা—আল্লাহর কুদরত কত বিশাল। আল্লাহর অসীম কুদরতের নিদর্শন—তিনি যেখানে ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা, বান্দাকে রক্ষা করেন। (গ). জাতির সর্বসম্মত তাওবা: আল্লাহ বলেন: “তবে ইউনুস (আ.)-এর সম্প্রদায় ছাড়া, তারা যখন ঈমান আনল তখন আমরা তাদের থেকে দুনিয়ার জীবনের হীনতাজনক শাস্তি দূর করলাম এবং তাদেরকে কিছু কালের জন্য জীবনোপভোগ করতে দিলাম।” (সূরা ইউনুস ১০:৯৮)। হিকমাহ: তাওবা শুধু ব্যক্তিগত নয়, সমষ্টিগতভাবেও একটি জাতিকে রক্ষা করতে পারে।

*৭. ক্বাওমে-ইউনুসের সাথে তাওহীদের দ্বন্দ্ব ও হিকমাহর বিশ্লেষণ:* ইউনুস (আ.)-এর সম্প্রদায় প্রথম দিকে তাওহীদের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে, এবং তাদের ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। কিন্তু যখন তারা আল্লাহর ইচ্ছায় ঈমান আনে ও সত্যিকার তাওবা করে, তখন তাদের জন্য রহমতের দরজা খুলে দেয়। ইতিহাসে একমাত্র জাতি হিসেবে তারা আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা পায়—এটি তাওহীদে ফিরে আসার শক্তিমত্তার প্রতীক। ঈমান, তাওহীদ ও তাওবা—এই তিন মিলেই হলো জাতিগত মুক্তির পথ।

*৮. উপসংহার:* ইউনুস (আ.)-এর কাহিনী আমাদের শেখায়:

(ক). নেতৃত্ব ও দায়িত্বের ক্ষেত্রেও আল্লাহর নির্দেশের বাইরে যাওয়া বিপজ্জনক। নেতৃত্ব ও দায়িত্বে অবহেলা মারাত্মক ফল আনতে পারে।

(খ). আত্মসমালোচনা, তাওবা, ও আল্লাহর প্রশংসাই পরিত্রাণের উপায়।

(গ). আল্লাহর প্রশংসা ও তাওহীদের ঘোষণা সংকট থেকে উদ্ধার করতে পারে।

(ঘ). তাওবা যতটা ব্যক্তি পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ, জাতিগতভাবেও তা বিপর্যয় ঠেকাতে পারে। সমষ্টিগত তাওবাও একটি জাতিকে ধ্বংস থেকে বাঁচাতে পারে। উদাহরণ, ইউনুস (আ.)-এর সম্প্রদায়।

(ঙ). সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিকমাহ: আল্লাহ কখনো অনুতপ্ত বান্দাকে ফিরিয়ে দেন না।

ইউনুস (আ.)-এর ক্ষেত্রে তাওবার গুরুত্ব ও দায়িত্ব পালনের শিক্ষা (জীবনের সারাংশ): দাওয়াতের দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণে মাছের পেটে আটকে যান; পরে তাওবার মাধ্যমে মুক্তি লাভ করেন (সূরা আস-সাফফাত ৩৭:১৩৯-১৪৮)।

হিকমাহ: দায়িত্ব পালনে অবহেলা বড় অপরাধ; কিন্তু খাঁটি তাওবা দিয়ে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। মূল্যবোধ: আত্মবিশ্লেষণ, তাওবা, দায়িত্বশীলতা।

*আল্লাহ-হুম্মা সাল্লি, ওয়া সাল্লিম, ওয়া বারিক আ’লা মুহাম্মাদ; আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন*। (মূসা: ২৩-০৬-২৫)।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category