সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনঃ
আশুরা ও কারবালার ঘটনা, চাপা পড়া প্রকৃত ইতিহাস ও বিভ্রান্তি নিরসন!
কারাবালার হৃদয়বিদারক ঘটনায় মুসলমানদের কি করনীয়?
🟢প্রশ্নঃ আশুরা ও কারবালা কি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা?
(১)আশুরা কিঃ আশুরা হচ্ছে(দশ) অর্থাৎ
মহরর্রম মাসের ১০তারিখ কে আশুরা বলা হয়।
★হাদিসঃ-... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় এসে দেখেম যে, ইয়াহুদীরা আশুরার দিন সিয়াম পালন করে। তিনি(ছাঃ) বলেন,এই দিনটির বিষয় কি যে তোমরা সিয়াম পালন কর? তারা বলেন,এটি একটি মহান দিন।
এ দিনে আল্লাহ তায়ালা মূসা (আঃ) ও তাঁর সম্প্রদায়কে মুক্তি দিয়েছেন এবং ফির’আউন ও তার অনুসারীদের ডুবিয়ে দিয়েছেন। এ জন্য মূসা (আঃ) কৃতজ্ঞতা স্বরুপ এ দিনে সাওম পালন করেছেন তাই আমরাও এ দিনে সিয়াম পালন করি। তখন রসুলুল্লাহ(ছাঃ) বললেন, মুসা(আ) বিষয়ে আমাদের অধিকার বেশি অতঃপর রাসুলুল্লাহ(ছাঃ) এ দিবসে সিয়াম পালন করেন এবং সীয়াম পালন করতে নির্দেশ প্রদান করেন।
মুসলিম আস সহীহ ২/৭৯৬
আরও পড়ুনঃ শোক_সংবাদ
★এ সিয়ামের ফযীলত সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ “আল্লাহর কাছে আশা করি তিনি বিগত এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।”
মুসলিম আস সহীহ ২/৮১৮
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
..... ইয়াহূদী এবং নাসারারা এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ(ছাঃ) বললেন,ইনশাআল্লাহ আগামী বছর থেকে আমরা নবম তারিখেও সিয়াম পালন করব।
এমতাবস্থায় রাসুলুল্লাহ(ছাঃ)এর ইন্তেকাল হয়ে যায়। সহীহ মুসলিম ২৫৩৭(ইফা)
🌿(২)রসুল(ছাঃ)এর ওফাতঃ ১১ হিজরী সনের রবীউল আউয়ালের সোমবার সকাল ১০টার দিকে মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন। রাসূল (ছাঃ)-এর জন্ম ও মৃত্যু দু’টিই সোমবারে হয়েছিল’।
মুসলিম হা/১১৬২; বুখারী হা/১৩৮৭।
🌿শিক্ষাঃ-আল্লাহর রসুল(স) জীবিত থাকতে আশুরার সিয়াম পালন করেছেন এবং পরবর্তীতে ২টা রাখতে আদেশ করেছেন।
🚫কারবালার যুদ্ধঃ এ যুদ্ধ সংঘটিত হয় ৬১ হিজরির ১০ই মহররম।
আলি(র) এর মৃত্যুর পূর্বে (নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিবর্গের খলিফা নির্বাচনের পদ্ধতিমতে) হাসান(র)কে পরবর্তি শাসক হিসেবে মনোনয়ন দেন,আলি(র) এর ৪০হিজরিতে ইন্তেকালের পর হাসান(র)দায়ীত্ব নেন,৬মাস অতিবাহিত হলে গৃহযুদ্ধ অবসানের লক্ষে নিজ থেকেই মুয়াবিয়া(র) এর পক্ষে খেলাফত ত্যাগ করেন এবং মুয়াবিয়া(র) খলিফা হন।
আরও পড়ুনঃ *ঈসা (আ.) রুহুলুল্লাহ: ভালোবাসা ও হিকমাহর দাওয়াহ*
২০বছর পর তিনি মৃত্যু বরন করেন, মৃত্যুর পূর্বে তিনি ইয়াজিদকে খলিফা মনোনয়ন করে যান,মুয়াবিয়া(র) এর মৃত্যুর পর ইয়াজিদ খলিফা দাবি করলে তৎকালীন মুসলিম রাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষ তা মেনে নেয়,তবে মদীনার অনেক মানুষ,ইরাকের মানুষ,কুফার মানুষেরা ইয়াজিদকে মেনে নেয়নি,কুফার মানুষেরা হুসাইন (রা.) কে খলিফা হিসেবে গ্রহণ করতে প্রায় লক্ষাধিক কুফাবাসি খলিফা হিসেবে বায়াত করে পত্র প্রেরণ করে,মক্কা ও মদিনায় অনেক সাহাবি ইয়াজিদের চক্রান্ত আঁচ করতে পেরে নিষেধ করেছিলেন।
🚫সবশেষে তিনি পরিবারের সদস্যদের ও ৫০জন সাথি নিয়ে কুফাবাসীর পত্রের আমন্ত্রনে কুফায় রওয়ানা দেন। কুফায় পৌছার আগেই ইয়াজিদের নিয়োগকৃত ওবায়দুল্লাহ উনাকে বাধা দেন,ওবায়দুল্লাহর বাধা এবং কুফাবাসীর বায়াত থেকে ফিরে যাওয়ার পদস্খলন দেখে তিনি মদিনায় ফিরে যেতে চাইলেন,ওবায়দুল্লাহ প্রথমে রাজি হলেও তার সহকারী সিমারের প্ররোচনায় সে ফিরে যেতে বাধা দেয়,হোসাইন(র) বার বার বলতে থাকেন কুফাবাসী তোমাদের কি হলো?
আমি যুদ্ধ করতে আসিনাই। ইয়াজিদ বাহিনী উনাকে যুদ্ধ করতে বাধ্য করলেন,
উনার পরিবারের সদস্যদের খুব কষ্ট দিলেন, তিনি নিজের ও পরিবারের সম্ভ্রম রক্ষায় প্রাণপণ যুদ্ধ চালিয়ে গেলেন,একে একে উনার সাথিরা শহীদ হলেন।
ইয়াজিদের চক্তান্তের ফল,ওবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ-সীমার-সিনান নাখয়ী-খাওলি নামক পাষন্ডের হাতে তিনি শহীদ হন। আহলে বাইতের সম্মানিত সদস্যদের রক্তে রঞ্জিত কারবালার প্রান্তর,নারকীয় ও হৃদয়বিদারক এ ঘটনা আজও মুসলিম জাহান ব্যাথায় কাতর।
🚫এ ঘটনা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে চিরস্থায়ী বিভক্তি ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। পরবর্তীতে অনেক মিথ্যা ও ভিত্তিহিন কাহীনি উম্মার মধ্যে ছড়ানো হয়েছে,ইসলাম বিদ্বেষীদের শত শত বছরের বিকৃত ইতিহাস প্রচার,পরবর্তীতে শিয়া সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মুসলিম দেশে শাসনব্যবস্থা,কোন কোন শাসকদের সাথে ঘনিষ্টতায় প্রকৃত ইতিহাস চাপা পড়ে যায়।
এ অঞ্চলের মানুষের অবস্থা ও কার্যাদি অবলোকন করে মনে হয়, আশুরার আমল হচ্ছে কারবালার ঘটনাকে ঘিরেই, অথচ উপরোল্লিখিত হাদিসের (🌿১) আলোকে প্রতীয়মান হয় যে,বাস্তবতা এর সম্পূর্ণ বিপরীত বরং মুসা(আঃ) আশুরার সিয়ামের স্বীকৃতি দিয়েছেন রসুল(ছাঃ) এর জীবদ্দশা থেকেই।
🚫হিজরি ৬১ সনের আশুরার দিন কারবালার প্রান্তরে দুঃখজনক ঘটনা সঠিকভাবে জানতে না পেরে আজ অনেকেই ভ্রষ্টতা ও কুসংস্কারের অন্ধকারে নিমজ্জিত।
🚫প্রকৃত ঘটনা তিনি সেখানে ইয়াজিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাননি,তিনি কুফাবাসীকে বার বার বলেছিলেন আমি যুদ্ধ করতে আসিনি তোমাদের ডাকে এসেছি।
আরও পড়ুনঃ হালাল উপার্জনের লক্ষ্যে শ্লোগান নিয়ে, কর্মশালা ও নৈশভোজ করে অনলাইন গ্লোবাল শপ ( অজিএস) লি.
🟢আশুরা ও কারবালা একই তারিখে ঘটিত ২টি ভিন্ন ঘটনা উম্মার কাছে গুরুত্ব অপরিসীম,মুসা(আঃ)এর আশুরার সিয়াম যেমন সুন্নাহ/হাদিস দ্বারা প্রমানিত। ৫০বছর পরের কারাবালার ঘটনায় কোন ইবাদত/আমল আমরা প্রবর্তন করতে পারিনা, ইবাদত/আমল প্রবর্তনের জন্য রসুল(স)থেকে নির্দেষনা লাগবে।
🟢হিজরি ৬১ সনের আশুরার দিনের কারবালার অতিশয় হৃদয়বিদারক ও বেদনাদায়ক এ ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নেবো হকের পক্ষে থাকার, কর্মপন্থা ঠিক করবো বাতিলের বিরুদ্ধে লড়াই করার। আল্লাহ্ সবচেয়ে ভালো জানেন,
তিনি তৌফিক দাতা।
প্রধান উপদেষ্টাঃ ফরহাদ মাজহার
উপদেষ্টাঃ এস,এম নজরুল ইসলাম ভুইয়ামোঃ আমিনুল ইসলাম,
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ আবুল হাসেম,
সহঃসম্পাদকঃ আলী নওয়াব খোকন,
বার্তা সম্পাদকঃ ইয়াছিন আরাফাত,
সহকারী বার্তা সম্পাদকঃ এম, আসমত আলী মিসু,
সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদকঃ আসাদুজ্জামান খান মুকুল,
www.dainikbanglarsangbad.com
ইমেইলঃ dainikbanglarsangbad490@gmail.com
প্রধান কার্যলয়ঃ বাড়ি নং ৩৫, রোড নং ৪, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
মোবাইলঃ01736091515, 01716698621
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Copyright © 2025 dainikbanglarsangbad.com. All rights reserved.