ডাঃ এম, জি, মোস্তফা মুসাঃ
*হাশরের ময়দানে ঈমানের সাক্ষ্য প্রদান: কুরআনের আলোকে বিশ্লেষণ*
_একজন দ্বীনি ভাই লিখেছেন: প্রিয় ভাই বোনেরা, জানতে চাই সকলের নিকট, হাশরের দিন আমাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দিবে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। কিন্তু ঈমানের সাক্ষ্য কে বা কি দেবে। কেননা ঈমাণ ব্যাতীত কেউ জান্নাতের জন্য বিবেচিত হবে না। যদিও কর্মের মাধ্যমেই পরোক্ষভাবে ঈমানের পরিচয় পাওয়া যায়, কিন্তু কুরআনের সুনির্দিষ্ট Reference চাই। সকলকে ধন্যবাদ।_
_ভূমিকা:_ হাশরের দিন, অর্থাৎ কিয়ামতের ময়দান হবে ন্যায়বিচারের সর্বোচ্চ আদালত, যেখানে প্রত্যেক মানুষকে তার জীবনের প্রতিটি কাজের হিসাব দিতে হবে। কুরআনে একাধিক স্থানে বলা হয়েছে যে, সেদিন মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, এমনকি পৃথিবীর স্থান-কালও তার কর্মের সাক্ষ্য দেবে (সূরা ইয়াসীন, ৩৬:৬৫; সূরা ফুসসিলাত, ৪১:২০-২১)। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, ঈমানের সাক্ষ্য কে বা কি দেবে? কারণ ঈমান ছাড়া কোনো ব্যক্তি জান্নাতের যোগ্য বিবেচিত হবে না।
*কুরআনের দৃষ্টিতে ঈমানের গুরুত্ব:* কুরআনে বারবার জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে, ঈমান এবং আমলে সালিহা (সৎকর্ম), এই দুইয়ের সমন্বয়ই জান্নাতের চাবিকাঠি। আল্লাহর বাণী: "যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তারাই জান্নাতের অধিবাসী; সেখানে তারা স্থায়ী হবে।" (সূরা আল-বাকারা, ২:৮২)
এখানে ঈমানের গুরুত্ব সর্বাগ্রে, সৎকর্মের গ্রহণযোগ্যতার জন্য ঈমান অপরিহার্য। প্রশ্ন হলো, ঈমানের সাক্ষ্য: কে দেবে? নিম্নের আলোচনা থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে উত্তর বিশ্লেষণ করব, ইন-শা-আল্লাহ; ওমা তাওফিকি ইল্লা-বিল্লাহ।
আরও পড়ুনঃ মধুপুরে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংবাদ সম্মেলন
*১. আল্লাহ সরাসরি ঈমানের সাক্ষ্য দেবেন:* কিয়ামতের দিন আল্লাহ স্বয়ং মানুষের ঈমান ও কুফরের ঘোষণা দেবেন, কারণ তিনিই অন্তরের অবস্থা জানেন, তিনিই অন্তর্জামি। আল্লাহর বাণী: "ইন্নাল্লাহা আলীমুম বিজাতিস সুদুর - তাদের অন্তরে যা আছে, তা আল্লাহ ভালোভাবে জানেন।" (সূরা আলে ইমরান, ৩:১১৯)! মানুষের অন্তরের ঈমানের অবস্থা একমাত্র আল্লাহই জানেন, তাই তিনি নিজেই তার সাক্ষ্য প্রদান করবেন।
*২. ফেরেশতারা সাক্ষী হবে:* ঈমান এবং আমল উভয় ক্ষেত্রেই ফেরেশতারা সাক্ষ্য দেবে। আল্লাহর বাণী: "আর সেদিন প্রত্যেক নাফস উপস্থিত হবে, তার সঙ্গে থাকবে একজক চালক ও একজন সাক্ষী।" (সূরা কাফ, ৫০:২১)!
এখানে “সাক্ষী” ফেরেশতা মানুষের আমল ও ঈমানের অবস্থার প্রমাণ দেবে, কারণ তারা মানুষের জীবনভর কার্যকলাপ লিপিবদ্ধ করে। (সূরা ক্বফ, ৫০:১৭-১৮ আয়াত অনুসরণে)!
*৩. নবী ও রাসূলদের সাক্ষ্য:* যে জাতির কাছে নবী পাঠানো হয়েছে, কিয়ামতের দিন সেই নবী তার জাতির ঈমান বা কুফুরের সাক্ষ্য দেবেন।
আল্লারে বাণী: "যেদিন আমরা প্রত্যেক উম্মতের মধ্য থেকে একজন সাক্ষী আনব, আর তোমাকে (হে মুহাম্মদ) এদের উপর সাক্ষী হিসেবে আনব।" (সূরা আন-নিসা, ৪:৪১)! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর উম্মতের ঈমানের সত্যতা বা কুফুরের ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করবেন।
*৪. মানুষের নিজস্ব জবান (জিহ্বা):* কুরআনে এসেছে, সেদিন মানুষের মুখমণ্ডল, হাত, পা সবই কথা বলবে। কর্মের মাধ্যমে ঈমান প্রমাণিত হবে, আর জবান তা স্বীকার করবে।
আল্লাহর বাণী: "আজ আমি তাদের মুখমণ্ডল সিলমোহর করে দেব, তাদের হাত আমাদের সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কর্মের সাক্ষ্য দেবে।" (সূরা ইয়াসীন, ৩৬:৬৫)!
যদিও এই আয়াত সরাসরি কর্মের সাক্ষ্য নিয়ে, কিন্তু ঈমান ও কর্মের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য, কর্ম ঈমানের প্রতিফলন।
*৫. নিজের রেকর্ড (আমলনামা):* আমলনামায় কেবল আমল বা কর্ম নয়, বরং ঈমানের রেকর্ডও থাকবে, কারণ ফেরেশতারা অন্তরের ঈমান প্রকাশকারী প্রতিটি কাজ নথিভুক্ত করবে। আল্লাহর বাণী: "এবং সেদিন উপস্থিত করা হবে ‘আমলনামা এবং তাতে যা লিপিবদ্ধ আছে তার কারণে তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে আতংকগ্রস্ত এবং তারা বলবে: হায়, দুর্ভোগ আমাদের! এটা কেমন গ্রন্থ! ওটাতো ছোট বড় কিছুই বাদ দেয়নি, বরং ওটা সমস্ত হিসাব রেখেছে। তারা তাদের কৃতকর্ম সম্মুখে উপস্থিত পাবে; তোমার রব্ব কারও প্রতি যুলম করেন না"। (সূরা আল-কাহফ, ১৮:৪৯)!
*ঈমান প্রমাণের মূল নীতি:* কুরআনের আলোকে ঈমানের সাক্ষ্য নিম্নলিখিত উপায়ে প্রতিষ্ঠিত হবে: (ক). আল্লাহর জ্ঞান, যিনি অন্তরের অবস্থা জানেন। (খ). ফেরেশতাদের লিপিবদ্ধ নথি।(গ). নবী-রাসূলদের সাক্ষ্য। (ঘ). নাফস, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও জবান দ্বারা স্বীকারোক্তি। (ঙ). আমলনামায় সংরক্ষিত রেকর্ড।
*উপসংহার:* ঈমান হলো জান্নাতের মূল ভিত্তি; কর্ম তার প্রমাণ ও ফল। কিয়ামতের দিন ঈমানের সাক্ষ্য দেবেন আল্লাহ, ফেরেশতারা, নবী-রাসূলগণ, মানুষের নিজের নাফস এবং মানুষের নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, পাশাপাশি আমলনামায়ও তার প্রমাণ থাকবে। তাই কেবল মুখের স্বীকৃতিই নয়, অন্তর ও আমলের মাধ্যমে ঈমানকে দৃঢ় করা অপরিহার্য, যাতে সেই মহান দিনে আমাদের ঈমানের সাক্ষ্য দৃঢ় ও গ্রহণযোগ্য হয়।
আল্লাহ বলেন: "হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সৎকথা বল; তাহলে তিনি তোমাদের কাজ (আমল) কে ক্রটিমুক্ত করবেন এবং তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে তারা অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে।" (সূরা আল-আহযাব, ৩৩:৭০-৭১)!
*আল্লাহ-হুম্মা সাল্লি, ওয়া সাল্লিম, ওয়া বারিক আ'লা মুহাম্মাদ; আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ'লামীন*। (মূসা: ১৫-০৮-২৫)
প্রধান উপদেষ্টাঃ ফরহাদ মাজহার
উপদেষ্টাঃ এস,এম নজরুল ইসলাম ভুইয়া
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ আবুল হাসেম
উপ সম্পাদকঃ এম, আসমত আলী মিসু
সহঃসম্পাদকঃ আলী নওয়াব খোকন
বার্তা সম্পাদকঃ ইয়াছিন আরাফাত
সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদকঃ আসাদুজ্জামান খান মুকুল
www.dainikbanglarsangbad.com
ইমেইলঃ dainikbanglarsangbad490@gmail.com
প্রধান কার্যলয়ঃ বাড়ি নং ৩৫, রোড নং-৪, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
মোবাইলঃ01736-091515, 01716-698621
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Copyright © 2025 dainikbanglarsangbad.com. All rights reserved.