সুস্থতার ব্যকরন-রাজিব আহমেদ
অন্তর্জাল ঘাঁটাঘাটি করলেই সুস্থ থাকার জন্য কী খাবেন, কখন খাবেন, কতটুকু খাবেন, কিভাবে খাবেন- এসব নিয়ে অসংখ্য ভিডিও/পোস্ট ইত্যাদি দেখতে পাবেন। কিন্তু প্রতিদিন কী পরিমাণ ত্যাগ করা উচিত অর্থাৎ শরীরের রেচন প্রক্রিয়া নিয়ে কেউ কোনো উচ্চবাচ্য করেন না! যদিও সেটা খাদ্যগ্রহণের চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আজকের লেখায় আমি সেদিকেই আলোকপাত করবো-
মানুষ মূলত চারভাবে শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দেয়- ১. মল, ২. মূত্র, ৩. ঘাম আর ৪. নিঃশ্বাস। শুনে হয়ত অবাক হবেন যে, মানুষ মলের মাধ্যমে শরীর থেকে যে পরিমাণ দূষিত পদার্থ বের করে, তারচেয়ে অনেক বেশি দূষিত পদার্থ বের হয় তার মূত্রের মাধ্যমে। আবার মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে যে পরিমাণ দূষিত পদার্থ বের হয়, তারচেয়ে অনেক বেশি দূষিত পদার্থ বেরিয়ে যায় ঘামের মাধ্যমে।
এমনকি ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে যে পরিমাণ দূষিত পদার্থ বের হয়, তারচেয়ে অনেক বেশি দূষিত পদার্থ নিঃশ্বাসের মাধ্যমে বেরিয়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে- যেটা আমরা খালি চোখে দেখতেও পাই না (অথচ কিছু বোধ-বুদ্ধিহীন মানুষ ধুলোবালি তথা কথিত করোনা থেকে সুরক্ষার দোহাই দিয়ে মুখে ত্যানা পেচিয়ে শরীরের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা জীবাণুগুলো প্রকৃতিতে মিশে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে)! তার মানে সুস্থ থাকার জন্য শরীর থেকে মলের চাইতে মূত্র, মূত্রের চাইতে ঘাম এবং ঘামের চাইতেও নিঃশ্বাস বের করাটা বেশি জরুরি এবং অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রশ্ন হলো- কোনটা প্রতিদিন কতখানি, কয়বার এবং কিভাবে ত্যাগ করতে হবে?
নিঃশ্বাস যদিও-বা চলমান প্রক্রিয়া, কিন্তু আমাদের ফুসফুস অধিকাংশ ক্ষেত্রে ন্যূনতম দূষিত বাতাস বের করে দিয়েই তার দায়িত্ব শেষ করে। পরিণামে শরীরের ভেতরে অনেক দূষিত বাতাস ও গ্যাস জমে থাকে; সেগুলো কিন্তু জটিল সব রোগের কারণ হতে পারে? শরীর থেকে দূষিত বায়বীয় পদার্থ বের করে দেওয়ার জন্য সকাল-বিকাল (সম্ভব হলে রাতে ঘুমানোর আগেও) খালি পেটে নিয়মিত প্রাণায়াম (কপালভাতি, উললম-বিলম, ভ্রমরি ইত্যাদি) করা যেতে পারে।
শরীর থেকে ঘাম ঝরানোর জন্য প্রতিদিন সকালে এক ঘণ্টা শারীরিক কসরত/ব্যায়াম অথবা অন্তত আধাঘণ্টা দ্রুতবেগে হাঁটা বা দৌড়াতে হবে। অথবা এমন কোনো কঠোর পরিশ্রমের কাজ করতে হবে যেন শরীর থেকে গলগল করে ঘাম নির্গত হয়। ঘাম না ঝরাইলে এমন কিছু জীবাণু চামড়ার নিচে আস্তানা গাড়ে (যেগুলোকে রক্তের সহায়তা নিয়ে কিডনি বা ফুসফুস ছেঁকে বের করে দিতে পারে না)- যেগুলো চর্মরোগসহ মরণঘাতী নানা রোগের কারণ হতে পারে!
জীবনভর সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার বদাভ্যাস পরিত্যাগ করার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ হলো দুই থেকে তিনবার আপোষে মলত্যাগ করা। এছাড়া মাসে অন্তত একবার পেট খারাপ (পাতলা পায়খানা) হওয়াটা মন্দ কিছু নয়, বরং কোলন পরিষ্কার হওয়ার সুযোগ তৈরি হয় তাতে। মলত্যাগ করতে হবে মাটিতে বসে (ভূমির সমতলে)- মানে হাই কমোড বাদ দিয়ে লো-প্যানে (squat)। এটাই স্বাস্থ্যসম্মত প্রক্রিয়া এবং শরীয়তের বিধান।
আরও পড়ুনঃ কাটাখালী পাক দরবার শরীফে পীরে কামেল হয্রত মাওলানা খাজা আবুল বাশার রহঃ এর ওফাত দিবস-
মলত্যাগের সময় বাম পায়ের ওপরে ভর রাখবেন আর ডান পা খাড়া রেখে বসবেন। কারো বাসায়/অফিসে যদি লো-প্যান না থাকে অথবা শারীরিক অসুবিধার জন্য নিচে বসতে না পারেন, সেক্ষেত্রে হাই কমোডে বামপাশে আংশিক কাত হয়ে (চাপ রেখে) বসবেন এবং পায়ের নিচে একটি টুল রাখবেন যেন দুই উরু পেটে চাপ দিতে থাকে।
সমতলে মলত্যাগ করলে মলত্যাগের রাস্তা প্রশস্ত হয় এবং পায়খানা clear হয়। হাই কমোড-এ মলত্যাগ করা যে হাঁটুর সমস্যা ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার জন্য অনুঘটকের কাজ করে- সেটা আমরা অনেকেই জানি না (মানা তো আরো পরের ব্যাপার)! সমতলে বসে মলত্যাগ করলে মলাশয় ও মলনালী (পুরো পায়ুপথ) সরলরেখায় থাকে। ফলে কোনোপ্রকার কসরত (abdominal straining) ছাড়াই মল বেরিয়ে আসে। মলত্যাগে প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত চাপ দিতে হলে fissure হওয়ার আশংকা থাকে।
মলত্যাগ করার সময় খুব বেশি কোথ দিয়ে তাড়াহুড়ো করাও অনুচিত। সেক্ষেত্রে নানা জটিলতা তৈরি হতে পারে। আসলে আমাদের এমন খাবারই গ্রহণ করা দরকার- যা সহজে হজম হয় আর উচ্ছিষ্ট অংশ সহনীয়ভাবে দেহ থেকে আপোষে বের হয়ে যেতে পারে। কিন্তু ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি আর ভুলভাল খাদ্যাভ্যাসের কারণে প্রায়শ সেটি সম্ভব হচ্ছে না।পেট পরিষ্কারের প্রক্রিয়াটি অনেকাংশে সহজ হয়ে যাবে- আমরা যদি হাই কমোড ছেড়ে আবার লো-প্যানে মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি। এতে করে অনেক শারীরিক সমস্যা নিমিষেই দূর হয়ে যাবে, এমনকি আপনার হাঁটুও ধীরে ধীরে হারানো শক্তি ফিরে পেতে শুরু করবে।
আরও পড়ুনঃ ময়মনসিংহ সিপিএসসি, র্যাব-১৪,কর্তৃক মাদকসহ মাদক কারবারি গ্রেফতার ২
ভারতের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনয় শিল্পী অমিতাভ বচ্চন, দীপিকা পাডুকোন ও প্রয়াত ইরফান খান অভিনীত বিখ্যাত হিন্দি চলচ্চিত্র ‘পিকু’নির্মিতই হয়েছে শুধুমাত্র এই বার্তাটি সকলের কাছে পৌঁছে দিতে যে, পাশ্চাত্যের হাই কমোড ব্যবহারে আরামদায়ক বা সুবিধাজনক মনে হলেও আসলে মানবদেহের গঠন-কাঠামোটাই এমন যে নিচু হয়ে বসে মলত্যাগ সঠিক ও স্বাস্থ্যসম্মত প্রক্রিয়া (চলচ্চিত্রটির ৬৯তম মিনিট দ্রষ্টব্য)।
সবশেষে বলবো জলবিয়োগের কথা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ ও কর্মক্ষম মানুষের প্রতিদিনকার পানি পান এবং প্রস্রাবের পরিমাণ নিয়ে সাধারণ কিছু গাইডলাইন রয়েছে- যা কিনা ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, শারীরিক পরিশ্রম-যুক্ত কাজের পরিমাণ ও অন্যান্য ফ্যাক্টর অনুযায়ী কিছুটা তারতম্য হতে পারে।
দৈনিক পানি গ্রহণের পরিমাণ :- একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ন্যূনতম ২.৫ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা উচিত। এর মধ্যে ১০-২০% পানি আসে খাবার থেকে এবং বাকিটা সরাসরি পানীয় থেকে। গরম আবহাওয়া, কঠোর শারীরিক পরিশ্রম, গর্ভাবস্থা বা দুধদানের সময় এই পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে।
আরও পড়ুনঃ কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বগুড়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলা যুবদল
প্রস্রাবের সংখ্যা ও পরিমাণ :- সুস্থ একজন মানুষের প্রতিদিন জাগ্রত অবস্থায় পাঁচ থেকে সবোর্চ্চ আটবার প্রস্রাব করা স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর ধরা হয়। প্রত্যেকবার মূত্রত্যাগের সময় শরীর থেকে ২০০ থেকে ৩০০ মিলিলিটার প্রস্রাব বেরিয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। এভাবে দিনে মোটামুটি দেড় থেকে দুই লিটার প্রস্রাব হওয়া উচিত যাতে দেহের পানি ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিশেষ সতর্কতা এই যে, কোনো অবস্থাতেই দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করবেন না। এ ব্যাপারে শরীয়তে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
মূত্রত্যাগের সংখ্যা যদি অনেক বেশি বা কম হয়, কিংবা প্রস্রাবের রঙ/গন্ধে পরিবর্তন দেখা দেয়, তাহলে সেটা অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে! সেক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব প্রাকৃতিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। উল্লেখ্য যে, পানির পরিমাণ এবং প্রস্রাবের সংখ্যা কম-বেশি হওয়া ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে; উপরে উল্লেখিত পরিমাণ গড় হিসেবে বিবেচনা করবেন।
পরিশেষে বিশেষ পরামর্শ : প্রতিবার মল-মূত্র ত্যাগ, শরীরচর্চা/দৌড় কিংবা প্রাণায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই এক/দুই গ্লাস পানি পান করে নেবেন। মল-মূত্রত্যাগ সংক্রান্ত আরো যেটা সর্বদা স্মরণে রাখা দরকার, তাহলো- কখনোই কেবলামুখী হয়ে মল-মুত্র ত্যাগ করবেন না এবং শৌচকর্মে সব সময় (অবশ্যই) বাম হাত ব্যবহার করবেন। আরো বিস্তারিত জানা ও বোঝার জন্য সুস্থতার ব্যাকরণ বইটি সংগ্রহ করে পড়তে পারেন...
প্রধান উপদেষ্টাঃ ফরহাদ মাজহার
উপদেষ্টাঃ এস,এম নজরুল ইসলাম ভুইয়া
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ আবুল হাসেম
উপ সম্পাদকঃ এম, আসমত আলী মিসু
সহঃসম্পাদকঃ আলী নওয়াব খোকন
বার্তা সম্পাদকঃ ইয়াছিন আরাফাত
সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদকঃ আসাদুজ্জামান খান মুকুল
www.dainikbanglarsangbad.com
ইমেইলঃ dainikbanglarsangbad490@gmail.com
প্রধান কার্যলয়ঃ বাড়ি নং ৩৫, রোড নং-৪, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
মোবাইলঃ01736-091515, 01716-698621
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Copyright © 2025 dainikbanglarsangbad.com. All rights reserved.