ডঃ এম, জি, মস্তফা মুসাঃ
*সুলাইমান (আ.) ও দাউদ (আ.):**তাঁদের ফয়সালায় রয়েছে উজ্জ্বল আদর্শ*
_ভূমিকা:_ বিচার মানে কেবল আইন প্রয়োগ নয়, বরং ন্যায়, ভারসাম্য, মানবিকতা ও প্রজ্ঞার সম্মিলন। কুরআনের সূরা আল-আম্বিয়ায় (২১:৭৮–৭৯) নবী দাউদ (আ.) ও তাঁর পুত্র সুলাইমান (আ.)-এর মধ্যে সংঘটিত একটি ফয়সালার ঘটনা এ শিক্ষাই দেয়—যেখানে পিতা-পুত্রের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও যুক্তিনির্ভর দৃষ্টিভঙ্গি ন্যায়বিচারের নতুন পথ উন্মোচন করে। এই ঘটনা শুধু একটি রায় বা সিদ্ধান্তই নয়, বরং ইসলামী ফিকহ, বিচারনীতির গভীরতম স্তরসমূহকে আলোকিত করে।
_আল্লাহ বাণী:_ “এবং স্মরণ কর দাঊদ ও সুলাইমানের কথা, যখন তারা দুজনে বিচার করছিল শস্য ক্ষেত্র সম্পর্কে; তাতে রাত্রিকালে প্রবেশ করেছিল কোন সম্প্রদায়ের মেষ; আর আমি প্রত্যক্ষ করছিলাম তাদের বিচার। আমরা সুলাইমানকে এ বিষয়ের মীমাংসা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম এবং তাদের প্রত্যেককে আমি দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান। আমরা পর্বত ও পক্ষীকুলকে দাঊদের অনুগত করে দিয়েছিলাম, ওরা তার সাথে আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত; আমিই ছিলাম এই সবের কর্তা (২১:৭৮–৭৯)।”
_ঘটনা ও প্রেক্ষাপট:_ এক ব্যক্তি নবী দাউদ (আ.)-এর কাছে অভিযোগ করেন, তার ফসলের ক্ষেতে রাতের অন্ধকারে অপরজনের ভেড়ার পাল প্রবেশ করে ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। দাউদ (আ.) প্রাথমিকভাবে রায় দেন—ফসলের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ভেড়ার মালিককে তার সব পশু ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে দিতে হবে। এই সময় সুলাইমান (আ.)—যিনি তখনো নবুওয়াত পাননি, বিনয়ের সাথে বলেন, উভয়ের সম্পদ ও ক্ষতিপূরণ যেন ভারসাম্যপূর্ণ হয়, তিনি বলেন:
(ক). কৃষকের নিকট মেষগুলি থাকবে এবং কৃষক সাময়িকভাবে পশুগুলোর দুধ পান করবে ও উপকার ভোগ করবে, (খ). অপরপক্ষ মেষের মালিক জমিটি তদারকি করে এবং পানি সিঞ্চন করবে; জমিটি পূর্বাবস্থায় ফিরে আসলে সে মেষগুলি ফেরত পাবে, (গ). পরে উভয়ই তাদের নিজস্ব সম্পত্তি ফিরে পাবে। তখন দাউদ (আ.) নিজের রায়-ফয়সালা নাকচ করে পুত্রের রায় গ্রহণ করলেন। এই ঘটনার প্রতি আয়াতটিতে ইঙ্গিত রয়েছে।
_আল্লাহর স্বীকৃতি ও প্রশংসা:_ আমরা সুলাইমানকে এ বিষয়ের মীমাংসা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম এবং তাদের প্রত্যেককে আমি দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান। (সূরা আল-আম্বিয়া, ২১:৭৯)। এই আয়াত প্রমাণ করে—সঠিক বিচার সব সময় সিনিয়র বা পদধারীর একক অধিকার নয়; বরং যিনি যুক্তিসংগত, ভারসাম্যপূর্ণ ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধান দিতে পারেন—তাঁর মতই গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুনঃ গাবতলী চকবোচাইয়ে জাগরনী ক্লাবের উদ্যোগে প্রীতি ফুটবল ও হা-ডু-ডু খেলা অনুষ্ঠিত
*বিচারনীতি ও হিকমাহ: আমরা কী শিক্ষা লাভ করি:*
_(ক). ন্যায়বিচার কেবল শাস্তি নয়, বরং পুনর্গঠনমূলক সমাধান:_ সুলাইমান (আ.) এমন একটি সমাধান দেন, যাতে ফসলের ক্ষতি পূরণ হয় কিন্তু অপরপক্ষের অর্থনৈতিক সর্বনাশ হয় না। এটি পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচার (Restorative Justice)-এর এক প্রাচীন ইসলামী মডেল, যাকে পুনর্বাসনভিত্তিক ন্যায়বিচার বলা হয়।
_(খ). যুক্তিনির্ভরতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা:_ যদিও তিনি পিতার ভিন্নমত পোষণ করেন, কিন্তু বিনয়ের সাথে তা প্রকাশ করেন। ফলে পিতা-পুত্রের সম্পর্কেও কোনো দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় না। আজকের পরিবার ও প্রশাসনের জন্য এক বড় শিক্ষা।
_(গ). আল্লাহর সাক্ষী হওয়া ও হিকমাহ দান:_ আল্লাহ বলেন, “আমরা ছিলাম তাদের ফয়সালার সাক্ষী।” (২১:৭৮) এবং তিনি উভয়কে হিকমাহ দান করেন। এতে বোঝা যায়, সঠিক বিচার শুধুমাত্র আইনের নয়, বরং ইলহামী প্রজ্ঞার ফলাফল।
_(ঘ). তরুণদের যুক্তিভিত্তিক মতামতের স্বীকৃতি:_ সুলাইমান (আ.) তখনো নবী ছিলেন না। তবুও তার যুক্তি ও চিন্তার গভীরতা দাউদ (আ.) গ্রহণ করেন। এটি তরুণদের যুক্তিপূর্ণ মতামতকে মূল্যায়ন করার একটি বড় উদাহরণ।
*উপসংহার:* দাউদ (আ.) ও সুলাইমান (আ.)-এর এই ঘটনাটি কুরআনের একটি অত্যন্ত মূল্যবান শিক্ষা। এটি বিচারব্যবস্থার কাঠামো, নৈতিকতা, মানবিকতা এবং পারিবারিক জ্ঞানের মেলবন্ধন ঘটায়। আজকের সমাজে যেখানে বিচারের নামে প্রতিশোধ, পক্ষপাত ও অবিচার ছড়াচ্ছে, সেখানে এই ঘটনা আমাদের জন্য আলোকবর্তিকা স্বরূপ।
এই কাহিনী শুধু অতীত নয়, বরং সমসাময়িক সময়ের জন্যও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক—বিশেষত ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, বিচার সংস্কার, পরিবারে যুক্তিনির্ভর প্রশিক্ষণ ও নেতৃত্ব গঠনের জন্য এটি একটি যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত।
*আল্লাহ-হুম্মা সাল্লি, ওয়া সাল্লিম, ওয়া বারিক আ’লা মুহাম্মাদ; আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন*। (মূসা: ২৮-০৬-২৫)।
প্রধান উপদেষ্টাঃ ফরহাদ মাজহার
উপদেষ্টাঃ এস,এম নজরুল ইসলাম ভুইয়ামোঃ আমিনুল ইসলাম,
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ আবুল হাসেম,
সহঃসম্পাদকঃ আলী নওয়াব খোকন,
বার্তা সম্পাদকঃ ইয়াছিন আরাফাত,
সহকারী বার্তা সম্পাদকঃ এম, আসমত আলী মিসু,
সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদকঃ আসাদুজ্জামান খান মুকুল,
www.dainikbanglarsangbad.com
ইমেইলঃ dainikbanglarsangbad490@gmail.com
প্রধান কার্যলয়ঃ বাড়ি নং ৩৫, রোড নং ৪, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
মোবাইলঃ01736091515, 01716698621
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Copyright © 2025 dainikbanglarsangbad.com. All rights reserved.