*সুন্নাতে-আল্লাহ এবং সুন্নাতে-রাসূল:*
*একে অপরের পরিপুরক*
ইঞ্জিনিয়ার আবু তাহের মো. আকবর ভাই লিখেছেন: _"আসসালামু আলাইকুম, মুসা ভাই “সুন্নাতে-রাসূল মূলত আল্লাহর ওহী” একথা যথার্থ, কিন্ত সুন্নাত-রাসূল মূলত আল্লাহ তা'য়ালার সুন্নাত, এটা ভাষাগত ত্রুটি থেকে যায়, কারণ আল্লাহর সুন্নাত বলতে ভিন্ন কিছু বুঝায়। কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কর্মকান্ড বা সমর্থিত নিয়ম বা কর্মকৌশল আমাদের জন্য সুন্নাত, পক্ষান্তরে আল্লাহর কর্মকৌশল হলো আল্লাহর সুন্নাত বলে বুঝান হয়।"_
প্রিয় আকবর ভাই: ওয়া-আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আপনার কথায় যে বিষয়টি উঠে এসেছে, তা ইসলামিক শাস্ত্রে ‘সুন্নাহ’ শব্দের বহুমাত্রিক ব্যবহার ও তাৎপর্যের একটি গভীর বিষয়। এখানে ‘সুন্নাহ’ শব্দের সংজ্ঞা, আল্লাহর সুন্নাহ এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাহর পারিভাষিক বিশ্লেষণ ও 'সুন্নাতে-রাসূল'কে কেন ‘সুন্নাতে-আল্লাহ’ বলা যায় তা বিস্তারিত আলোচনা করা হবে, ইন-শা-আল্লাহ। ওমা তাওফিকি ইল্লা-বিল্লাহ।
*১. সুন্নাহ শব্দের সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা:* ‘সুন্নাহ’ (سنة) আরবি শব্দ, যার অর্থ ‘পথ’, ‘নীতি’, ‘রীতি’, ‘প্রথা’ বা ‘নির্দিষ্ট নিয়ম’। শব্দটি বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হয়:
(ক). সাধারণ অর্থে: কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম, পদ্ধতি বা রীতি যা নিয়মতান্ত্রিক বা ঐতিহ্যগতভাবে চালু থাকে। (খ). শরীয় অর্থে: কুরআন শিক্ষা কার্যক্রমের অধীনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বাণী, কাজ, অনুমোদিত আচরণ ও জীবনধারা, যা ইসলামের জীবনব্যবস্থার অংশ, তাই সুন্নাতে-রাসূল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
*২. আল্লাহর সুন্নাহ ও রাসূলের সুন্নাহর পার্থক্য:* 'আল্লাহর সুন্নাহ' ও 'রাসূলের সুন্নাহ'র পার্থক্য তিনটি দিক থেকে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো:
_(ক) সুন্নাহ শব্দের অর্থ:_ আল্লাহর সুন্নাহ বলতে বোঝানো হয় আল্লাহ তায়ালার স্থায়ী নিয়মনীতি ও বিধানসমূহ, যেমন সৃষ্টির নিয়ম, বিশ্বজগতের কার্যপ্রণালী, পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ, ধারাবাহিকতা এবং মানুষের প্রতি আল্লাহর প্রশাসনিক, নিয়ামত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। এটি সৃষ্টির সার্বজনীন প্রকৃতির নিয়ম ও ন্যায়বিচারের রীতি হিসেবে কার্যকর। অন্যদিকে, রাসূলের সুন্নাহ হলো কুরআন কেন্দ্রিক নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর জীবনে অনুশীলিত আদর্শ, তাঁর বক্তব্য, কাজকর্ম ও অনুমোদিত আচরণসমূহ, যা কুরআন থেকে উদ্ধুদ্ধ হয়ে মানুষের জন্য ইসলামী জীবনবিধি ও আচরণবিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অর্থাৎ, আল্লাহর সুন্নাহ সামগ্রিক মহাজাগতিক নিয়ম; আর রাসূলের সুন্নাহ হলো সেই নিয়মের মানব জীবনে প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন।
_(খ) সুন্নাহ শব্দের প্রয়োগ ক্ষেত্র:_ আল্লাহর সুন্নাহ সৃষ্টির সর্বজনীন নিয়ম, যা প্রকৃতি ও সমাজের সর্বাঙ্গীন নিয়ন্ত্রণ করে; যেমন বৃষ্টিপাত, সৃষ্টির চক্র, মহাজাগতিক ব্যবস্থাপনা, আল্লাহর শাস্তি-পুরস্কারের ব্যবস্থা। এটি সকল মানুষ ও প্রাণীর জন্য সার্বভৌম ও অবিচলিত। অপরদিকে, রাসূলের সুন্নাহ মূলত মানব সমাজে কুরআনের বিধান প্রয়োগ, নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, সামাজিক আচরণ, ইবাদত ও আইনগত ব্যবস্থা নির্ধারণে প্রযোজ্য, যা আল্লাহ অনুমোদিত ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের নিয়মাবলী হিসেবে কাজ করে।
_(গ) সুন্নাহ শব্দের ব্যবহার:_ ‘সুন্নাহ’ শব্দটি আল্লাহর ক্ষেত্রে সাধারণত তাঁর অবিচলিত নিয়ম, নিয়মনীতি ও শাসনব্যবস্থাকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যেমন ‘সুন্নাত-আল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহর নিয়ম। কিন্তু যখন ‘সুন্নাহ’ শব্দটি নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, তখন তা তাঁর কুরআন কেন্দ্রিক জীবন ও আচরণের ধারা, দৃষ্টান্ত ও নির্দেশনার প্রতিফলন বোঝায়, যা মুসলমানদের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ। তাই একই শব্দ হলেও আল্লাহ ও রাসূলের প্রসঙ্গে এর প্রয়োগ এবং অর্থ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হয়।
_(ঘ). সারমর্ম:_ সুন্নাহ শব্দের অর্থ ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে আল্লাহর সুন্নাহ ব্যাপক ও সার্বজনীন, যা সমগ্র বিশ্বজগতের সকল সৃষ্টি ও মাখলুকের জন্য প্রযোজ্য। এটি মহাজাগতিক নিয়ম, যা অপরিবর্তনীয় ও সর্বত্র প্রযোজ্য। অন্যদিকে, কুরআন কেন্দ্রিক রাসূলের সুন্নাহ মানুষের জন্য নির্দিষ্ট, যা আল্লাহর বৃহত্তর সুন্নাহর অধীনে অবস্থান করে এবং মানব সমাজে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা বাস্তবায়নে কাজ করে। এইভাবে, রাসূলের সুন্নাহ আল্লাহর সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত একটি বাস্তবায়নমুখী দিক, যা আল্লাহর স্থায়ী নীতিমালা ও বিধানগুলো মানব জীবনে প্রয়োগ ও ব্যাখ্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
আরও পড়ুনঃ হাসলে আয়ু বাড়ে – শেখ মোমতাজুল করিম শিপলু
*৩. কেন ‘সুন্নাতে-রাসূল’ কে ‘সুন্নাতে-আল্লাহ’ বলা যায়?* এখানে মূল বিষয় হলো, ইসলামে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাহ আল্লাহর ওহী (কুরআন) এবং নির্দেশনার অধীনেই হয়। অর্থাৎ, কুরআন কেন্দ্রিক রাসূলের প্রত্যেক কাজ, কথা এবং অনুমোদিত কাজের ভিত্তি আল্লাহর নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠিত। এজন্য, আল্লাহর আদেশ ও নির্দেশনায় রাসূলের সুন্নাহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সূরা নিসা (৪:৮০), আল্লাহ বলেন: “যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল।” অর্থাৎ রাসূলের সুন্নাহ মানা আসলে আল্লাহর বিধানের সম্মত আচরণ।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজে সর্বোচ্চ আদর্শ, যিনি আল্লাহর নির্দেশিত পথে জীবন যাপন করেছেন (সূরা আহযাব ৩৩:২১)। তাই তাঁর সুন্নাহ সরাসরি আল্লাহর সুন্নাহর অংশ।
অর্থাৎ, যখন আমরা ‘সুন্নাতে-রাসূল’ বলি, তখন তা সরাসরি ‘সুন্নাতে-আল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহর প্রদত্ত ওহী ও নির্দেশনার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সুন্নাহকে বুঝায়, যা মূলত কাউলি (কথা) এবং ফে'য়লি (কর্ম) সুন্নাহ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তৃতীয় আর এক প্রকার সুন্নাহ যা অনুমোদন (তাকরার) যোগ্য সুন্নাহ হিসেবে পরিচিত।
_(ক). কাউলি সুন্নাহ — আল্লাহর সরাসরি শিক্ষা:_ আল্লাহ তায়ালা শুধু কুরআন নাযিল করেই থেমে যাননি, বরং তিনি জিবরীল (আ.)-এর মাধ্যমে তার সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বও গ্রহণ করেছেন (সূরা কিয়ামাহ, ৭৫:১৯ আয়াত অনুসরণে)। নবুওয়াত ও রিসালাতের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর এই ব্যাখ্যা আমানতদারীতার সাথে উম্মাহর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, যাতে তারা নাযিলকৃত বিধান সঠিকভাবে বুঝে ও পালন করতে পারে (সূরা নাহল, ১৬:৪৪ আয়াত অনুসরণে)। যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর এই ব্যাখ্যা ও নির্দেশনা গ্রহণ করবে, সে আসলে আল্লাহর ব্যাখ্যা ও হিদায়েতকেই গ্রহণ করবে এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করবে (সূরা আলে ইমরান, ৩:৩১ আয়াত অনুসরণে)। সুতরাং, যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আনুগত্য করল, সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই আনুগত্য করল—কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজের ইচ্ছায় কিছু বলেন না; তিনি কেবল আল্লাহর ওহীর ভিত্তিতেই কথা বলেন ও কাজ করেন (সূরা নিসা, ৪:৮০; সূরা নাজম, ৫৩:৩-৪)। এভাবে প্রমাণিত হয়, সুন্নাতে-রাসূল (ﷺ) মূলত সুন্নাতে আল্লাহ—যেহেতু রাসূলের শিক্ষা, নির্দেশনা ও জীবনাচার সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ওহীভিত্তিক দিকনির্দেশনা।
আরও পড়ুনঃ হাইকোর্টের আদেশে লামায় দুই অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ
সুতরাং, কুরআন ও সুন্নাহ কোনো বিচ্ছিন্ন উৎস নয়; বরং সুন্নাতে-রাসূল (ﷺ) হল কুরআনের জীবন্ত ব্যাখ্যা ও বাস্তবায়ন, যা আল্লাহ নিজে নির্দেশ ও অনুমোদন দিয়েছেন। তাই সুন্নাতে-রাসূল (ﷺ) মূলত সুন্নাতে আল্লাহরই অন্তর্ভুক্ত।
_(খ) ফে‘য়লি সুন্নাহ — আল্লাহর শিখানো বাস্তব উদাহরণ-দৃষ্টান্ত:_ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আমলে সালিহা (সৎকর্ম) এবং ইবাদতগুলোও সরাসরি আল্লাহর শেখানো, যেমন:
সালাত: হাদীসে প্রমাণিত যে সালাতের সময়, রাকাত, রুকু-সিজদার পদ্ধতি, সালাতে পঠিতব্য — সবই জিবরীল (আ.) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে শিখিয়েছেন। হাদীসে এসেছে: "জিবরীল আমাকে কাবার পাশে এসে দুই দিন দুই ভিন্ন সময়ে সালাত শিখিয়েছেন" (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযি)। সালাত সম্পর্কিত সকল কিছু ফে'য়লি সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত।
সিয়াম: কুরআন শুধু রমযানের সিয়ামের নির্দেশ দিয়েছে (সূরা বাকারা, ২:১৮৩, ১৮৪, ১৮৫, ১৮৭), কিন্তু সিয়াম রাখার শর্ত, সিয়াম ভঙ্গে শর্ত, কখন ইফতার, কিভাবে সেহরি, সিয়াম ভাঙার নিয়ম, কিয়াম, লাইলাতুল কদর, ফিতরা প্রদান, ঈদের সালাত — সবই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ফে‘য়লি (কর্ম) সুন্নাহ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।
যাকাত: কুরআনে যাকাতের ফরজ ও দানের খাত সমূহ উল্লেখ আছে (সূরা তাওবা,৯:৬০), কিন্তু কত টাকা ও সম্পদে, কত হারে, কোন শর্তে যাকাত প্রদান করতে — সব রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শেখানো পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট হয়েছে, যা ফে'য়লি সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত।
হজ্জ: আল্লাহ হজ্জ ফরজ করেছেন (সূরা আলে ইমরান, ৩:৯৭), কিন্তু এর তাওয়াফ, সাঈ, মিনা, আরাফা, মুযদালিফায় অবস্থান, জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ, কুরবানি, মাথা মুন্ডন — সবই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আমলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত, যা ফে'য়লি সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত।
জীবনের অন্যান্য আচরণ: যেমন বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার, ব্যবসা-বাণিজ্য, আচরণ, সম্পর্ক, বন্ধুত্ব, সততা, বিনয়, সাহায্য — এগুলোর প্রয়োগ কুরআন নির্দেশনার কাঠামো দেয়, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আমলের মাধ্যমে সম্পন্ন, যা ফে'য়ালি সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত।
_(গ) দলিলের যৌক্তিক ফলাফল:_(ক). যেহেতু রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতিটি কথা ও কাজ সরাসরি আল্লাহর ওহীর অধীনে (কাউলি ও ফে‘য়লি সুন্নাহ উভয়ই)।
(খ). যেহেতু, জিবরীল (আ.) আল্লাহর আদেশে কুরআনসহ এর ব্যাখ্যা ও ব্যবহারিক দিক রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে শিখিয়েছেন।
(গ). যেহেতু, কুরআন স্পষ্ট করে বলে যে রাসূলের আনুগত্য মানেই আল্লাহর আনুগত্য,
সেহেতু, যৌক্তিকভাবে বলা যায়:
রাসূলের সুন্নাহ মূলত আল্লাহর সুন্নাহ এবং তা আল্লাহর বৃহত্তর সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত বাস্তবায়নমূলক অংশ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জীবনই আল্লাহর নির্ধারিত জীবনব্যবস্থার জীবন্ত রূপ।
*৪. ভাষাগত ত্রুটির কারণ ও স্পষ্টতা:* আকবর ভাই, আপনার বক্তব্য ঠিক যে, আল্লাহর সুন্নাহ বলতে সাধারণত আল্লাহর সার্বজনীন ও অবিচলিত নিয়মাবলী বোঝানো হয়, যা প্রকৃতি, সমাজ, জনকল্যাণ, জবাবদিহি ইত্যাদিতে কাজ করে। আর রাসূলের সুন্নাহ বলতে মানুষের জন্য নির্দেশিত, মানব জীবনে প্রযোজ্য ও হিদায়েতমূলক নিয়ম বোঝানো হয়।
তাই ভাষাগত ও পারিভাষিকভাবে ‘সুন্নাহ’ শব্দের এই ভিন্ন ব্যবহারকে বুঝে ব্যাখ্যা করাই শ্রেয়। কিন্তু তাতেও কোনো দ্বন্দ্ব নেই, কারণ রাসূলের সুন্নাহ আল্লাহর সুন্নাহর বাস্তবায়ন ও প্রকাশ। আল্লাহর সুন্নাহ যদি ‘দৃষ্টান্ত ও নিয়ম’ হয়, তবে রাসূলের সুন্নাহ মানব জীবনে সেই নিয়মের জীবন্ত রূপ।
*৫. সংক্ষিপ্ত সারাংশ:* ‘সুন্নাহ’ শব্দের অর্থ হলো কোনো নিয়ম, রীতি বা পথ যা আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্য ব্যবহৃত হলেও প্রেক্ষিত ভেদে তার অর্থ ভিন্ন হতে পারে। আল্লাহর সুন্নাহ মূলত সৃষ্টির নিয়ম, প্রশাসনের অবিচলিত বিধান এবং বিশ্বব্যাপী কার্যকর নিয়মাবলী বোঝায়, যা ধর্মীয় ও বিশ্বজাহানের নিয়ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। অন্যদিকে, রাসূলের সুন্নাহ হলো মানব জীবনে নির্দেশিত জীবনযাপন ও আচরণের রীতি, যা আল্লাহর সুন্নাহর বাস্তবায়িত ও প্রতিফলিত রূপ।
তাই যখন আমরা ‘সুন্নাতে-রাসূল’ বলি, তখন তা আল্লাহর প্রদত্ত ওহী ও নির্দেশনার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত জীবনব্যবস্থার বাস্তব রূপকে বোঝায়, যা আমরা ‘সুন্নাতে-আল্লাহ’ পরিভাষা হিসেবেও প্রকাশ করতে পারি। অতএব, ভাষাগত ভিন্নতা থাকলেও এই দুই সুন্নাহ মূলত অভিন্ন ধারার অন্তর্গত; রাসূলের সুন্নাহ আসলে আল্লাহর সুন্নাহরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ও জীবন্ত প্রতিফলন।
*৬. উপসংহার:* সুতরাং, ‘সুন্নাহ’ শব্দের বহুমাত্রিকতা বুঝে বলতে হবে: রাসূলের সুন্নাহ হলো আল্লাহর সুন্নাহর প্রতিফলন, যাকে আমরা ‘সুন্নাতে-আল্লাহ’ বলার মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশিত জীবনব্যবস্থার রূপ হিসেবে স্বীকার করি। এই দৃষ্টিকোণ থেকেই ‘সুন্নাতে-রাসূল মূলত আল্লাহর সুন্নাহ’ — এমন বলা যথার্থ ও যৌক্তিক। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ইসলাম বুঝতে এবং তা সঠিকভাবে অনুশীলন করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
*আল্লাহ-হুম্মা সাল্লি, ওয়া সাল্লিম, ওয়া বারিক আ'লা মুহাম্মাদ; আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ'লামীন*। (মূসা: ১৩-০৮-২৫)
প্রধান উপদেষ্টাঃ ফরহাদ মাজহার
উপদেষ্টাঃ এস,এম নজরুল ইসলাম ভুইয়া
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ আবুল হাসেম
উপ সম্পাদকঃ এম, আসমত আলী মিসু
সহঃসম্পাদকঃ আলী নওয়াব খোকন
বার্তা সম্পাদকঃ ইয়াছিন আরাফাত
সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদকঃ আসাদুজ্জামান খান মুকুল
www.dainikbanglarsangbad.com
ইমেইলঃ dainikbanglarsangbad490@gmail.com
প্রধান কার্যলয়ঃ বাড়ি নং ৩৫, রোড নং-৪, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
মোবাইলঃ01736-091515, 01716-698621
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Copyright © 2025 dainikbanglarsangbad.com. All rights reserved.