ড. এস. কে. আকরাম আলীঃ
একটি গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নির্বাচন, এবং জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য নির্বাচন অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে। বাংলাদেশের মতো দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন কাজ। তবে বর্তমানে দেশের জন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
সব পক্ষের উচিত এখন এগিয়ে এসে বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করা, যেন এই নির্বাচন একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি মডেল হিসেবে টিকে থাকে। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন জাতিকে বর্তমান বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তা থেকে মুক্ত করতে পারে।
অতীতের নির্বাচনী অভিজ্ঞতা ছিল ভালো এবং মন্দ দুই-ই। যদি আমরা ২০২৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত ফিরে তাকাই, তবে দেখতে পাই ১৯৭৩ সালের প্রথম নির্বাচন নবীন রাষ্ট্রের জন্য একটি খারাপ ইতিহাস তৈরি করেছিল। শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়েছিলেন, তার অধীনে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচন ছিল সবচেয়ে অগণতান্ত্রিক নির্বাচন হিসেবে চিহ্নিত। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনেই জনগণ প্রথম ধাক্কা খায় এবং শেখ মুজিব সরকারের প্রতি আস্থা হারায়।
শেখ মুজিব কেবল ক্ষমতাকেই ভালোবেসেছিলেন এবং কাছের সহযোগীদের ও ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে দূরে রাখেন। তিনি সোভিয়েত রাশিয়ার ধাঁচে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচনী সংস্কৃতি ধ্বংস করেন।
আরও পড়ুনঃ রামু থানার পুলিশের অভিযানে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ইয়াবা বাইকসহ আটক-১
জনগণের দ্বিতীয় ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা ছিল এই একদলীয় শাসন, যা তাদের গণতান্ত্রিক স্বপ্নকে ভেঙে দেয়। এর ফলেই তিনি জনগণের আস্থা ও দীর্ঘদিনের সহযোগী আমেরিকার সমর্থন হারান এবং ১৯৭৫ সালের আগস্টে মাত্র সাত মাসের মধ্যেই তার পতন ঘটে।
এরপর মার্কিন ঘনিষ্ঠ সহযোগী খন্দকার মোশতাক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলেও ভারতপন্থী এক জেনারেলের পাল্টা অভ্যুত্থানে তিনি টিকতে পারেননি।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতা বিপ্লব জিয়াউর রহমানকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। জিয়াউর রহমান জনগণের আস্থার প্রতিদান দেন এবং স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জনগণের বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন।
আল্লাহর রহমতে জাতি তার নেতৃত্বে রক্ষা পেয়েছিল এবং তিনি ১৯৭৯ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক চর্চার সূচনা করেন। তবে ১৯৮১ সালের মে মাসে তার মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড আবারো রাজনৈতিক সংকট তৈরি করে এবং ১৯৮২ সালের মার্চে এরশাদ রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। যদিও তিনি উন্নয়নের যাত্রা শুরু করেছিলেন, কিন্তু নির্বাচনের নামে প্রহসনের মধ্য দিয়ে জিয়ার গণতান্ত্রিক চর্চাকে ধ্বংস করেন।
১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে এরশাদের পতন রাজনীতিতে পরিবর্তন আনে। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন, যা প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়।
আরও পড়ুনঃ রামু থানার পুলিশের অভিযানে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ইয়াবা বাইকসহ আটক-১
এতে জনগণ আবারও আস্থা ফিরে পায় বিএনপি সরকারে, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। তবে মাগুরা উপনির্বাচনের বিতর্কিত ঘটনা বিএনপি সরকারকে বিপুল রাজনৈতিক চাপে ফেলে। আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের যৌথ আন্দোলনের ফলেই খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা মেনে নিতে বাধ্য হন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসেন, তবে ২০০১ সালের শুরুতে প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের অধীনে অনুষ্ঠিত শেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচন দুটিকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হিসেবে ধরা হয়, যা দ্বিদলীয় রাজনীতির সুস্থ সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এক উচ্চবিলাসী মনোভাবাপন্ন জেনারেল ক্ষমতা দখল করলেও রাজনীতির জটিলতা উপলব্ধি করে তিনি সরে দাঁড়ান। ভারতের প্রভাবে ফেঁসে যাওয়া মইনউদ্দিন আহমেদ ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের কারচুপির নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন। তার অধীনে সব নির্বাচনই ছিল প্রহসন, যা বাংলাদেশের অবাধ নির্বাচনী সংস্কৃতিকে কার্যত মৃত্যুদণ্ড দেয়।
২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে। জনগণ যদিও শেখ হাসিনা ও তার প্রভু উভয়ের হাত থেকে মুক্তি পায়, কিন্তু তাদের দুশ্চিন্তা এখনো শেষ হয়নি। বিপ্লবী সরকার গঠন না করায় দেশ বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তায় ডুবে যায়।
এই রাজনৈতিক ভুলগুলো ঘটেছে মূলত অপরিণত, অজ্ঞ ও অভিজ্ঞতাহীন নেতৃত্বের কারণে। এখন গোটা জাতি এক প্রতিপক্ষ-বিপ্লবের হুমকির মুখে, যার লক্ষণ ইতোমধ্যেই সমাজে দৃশ্যমান। রাজনৈতিক সমস্যা যত দেরিতে সমাধান হবে, ততই ভেতর ও বাইরের বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। তাই অবিলম্বে বিপ্লবের অংশীদারদের জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে হবে এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সময়মতো নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ রামু থানার পুলিশের অভিযানে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ইয়াবা বাইকসহ আটক-১
নিম্নকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা না থাকলেও উচ্চকক্ষে থাকতে পারে। কোনো দলই এ বিষয়ে একগুঁয়ে হওয়া উচিত নয়। ড. ইউনুস স্বেচ্ছায় নির্বাচনের আগে কিছু মাস আগেই caretaker সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে পারেন।
সমাজে সেনা হস্তক্ষেপের গুজব ছড়ানো এড়াতে হবে। বারবার সেনাপ্রধান জাতিকে আশ্বস্ত করেছেন যে তার ক্ষমতার কোনো লোভ নেই, এবং জনগণও এমন কোনো উদ্যোগ মেনে নেবে না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের পাশে থেকেছে মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের আগস্টের স্বৈরাচার পতন পর্যন্ত।
জনগণ এখন দ্রুত রাজনৈতিক সমাধানের অপেক্ষায়, যা কেবল একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই সম্ভব। ড. ইউনুস অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে আন্তরিক ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে প্রমাণিত হয়েছেন। বর্তমানে আমাদের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই—যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন করতে হবে। আমাদের অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে, রাজনৈতিক নেতারা সাম্প্রতিক অতীত থেকে শিক্ষা নেবেন।
প্রধান উপদেষ্টাঃ ফরহাদ মাজহার
উপদেষ্টাঃ এস,এম নজরুল ইসলাম ভুইয়া
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ আবুল হাসেম
উপ সম্পাদকঃ এম, আসমত আলী মিসু
সহঃসম্পাদকঃ আলী নওয়াব খোকন
বার্তা সম্পাদকঃ ইয়াছিন আরাফাত
সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদকঃ আসাদুজ্জামান খান মুকুল
www.dainikbanglarsangbad.com
ইমেইলঃ dainikbanglarsangbad490@gmail.com
প্রধান কার্যলয়ঃ বাড়ি নং ৩৫, রোড নং-৪, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
মোবাইলঃ01736-091515, 01716-698621
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Copyright © 2025 dainikbanglarsangbad.com. All rights reserved.