ডাঃ এম, জি, মোস্তফা মুসাঃ
*মারিয়াম (আ.)-এর অলৌকিক সন্তান-জন্ম: এক মহান হিকমাহ ও আল্লাহর কুদরতের প্রকাশ*
_ভূমিকা:_ ইসলামের ইতিহাসে কিছু ঘটনা রয়েছে, যা শুধু মানবজাতির নয়, বরং সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্য বিস্ময়ের ও শিক্ষা গ্রহণের উৎস। তেমনই এক ঘটনা হলো, মারিয়াম (আ.)-এর গর্ভে পিতা ছাড়াই ঈসা (আ.)-এর জন্ম।
এ ঘটনা শুধু অলৌকিক নয়, বরং এতে লুকিয়ে আছে আল্লাহর অসীম কুদরত ও গভীর হিকমাহ। এটি আল্লাহর কুদরতের এক জীবন্ত নিদর্শন, যা কেবল ঈমানদারদের হৃদয় দৃঢ় করে, বরং সন্দেহবাদীদের যুক্তি চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়। কুরআনুল কারীমে এ ঘটনা বিস্তৃতভাবে আলোচিত হয়েছে, বিশেষত সূরা আলি-ইমরান ও সূরা মারিয়ামে।
_মূল ঘটনা: মারিয়াম (আ.)-এর জীবনে এক অলৌকিক অধ্যায়_
*১. ফিরিশতার আগমন এবং সুসংবাদ:* মারিয়াম (আ.) ছিলেন এক পুণ্যাত্মা নারী, যিনি সবসময় আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন থাকতেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে বিশেষভাবে মনোনীত করেছিলেন। একদিন ফিরিশতা জিবরীল (আ.) তাঁর কাছে মানবাকৃতিতে এসে উপস্থিত হন। “তখন ফিরিশতা বললেন, হে মারিয়াম, আল্লাহ তোমাকে বাছাই করেছেন, তোমাকে পবিত্র করেছেন এবং দুনিয়ার নারীদের উপর তোমাকে প্রাধান্য দিয়েছেন।” (সূরা আলি-ইমরান, ৩:৪২)!
আরও পড়ুনঃ মানিকছড়িতে সেনাবাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ বিদেশী মদ জব্দ
জিবরীল (আ.) তাঁকে সুসংবাদ দেন: “আমি তোমাকে এক পবিত্র পুত্রের সংবাদ দিচ্ছি।” (সূরা মারিয়াম, ১৯:১৯)! মারিয়াম (আ.) বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করেন: “আমার কেমন করে পুত্র হবে, যখন আমাকে কোনো পুরুষ স্পর্শ করেনি"? (সূরা আলি-ইমরান, ৩:৪৭)! ফিরিশতা বলেন: “এটা আল্লাহর জন্য সহজ। তিনি যা ইচ্ছা করেন, সৃষ্টি করেন।”!
*২. অলৌকিক গর্ভধারণ:* আল্লাহর নির্দেশে জিবরীল (আ.) আল্লাহ হুকুমে রূহ থেকে ফুঁকে দেন। এভাবেই মারিয়াম (আ.) গর্ভবতী হয়ে পড়েন। এটি ছিল এক অলৌকিক ঘটনা, মানবজাতির ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
*৩. সমাজের প্রশ্নের ভয় এবং নির্জনে চলে যাওয়া:* গর্ভধারণ ধারন এবং গর্ভ প্রকাশের পর মারিয়াম (আ.) মানুষের নিন্দা ও কটুক্তির ভয়ে অত্যন্ত দুঃখিত হন। তিনি জনসমক্ষে যেতে দ্বিধাবোধ করতে থাকেন। আল্লাহর নির্দেশে তিনি এক নির্জন স্থানে চলে যান। কুরআন বলে: “অতঃপর সে তার গর্ভ নিয়ে দূর এক স্থানে নির্জনে সরে গেল।” (সূরা মারিয়াম, ১৯:২২)!
*৪. প্রসবের কষ্ট এবং সান্ত্বনা:* প্রসব যন্ত্রণা শুরু হলে তিনি খেজুর গাছের কাণ্ড ধরে আক্ষেপ করে বলেন: “হায়, আমি যদি এর পূর্বে মরে যেতাম এবং একেবারে বিস্মৃত-অজ্ঞাত হয়ে যেতাম"! (সূরা মারিয়াম, ১৯:২৩)!
তখন নীচ থেকে তাকে সান্ত্বনা দেওয়া হয়: “দুঃখিত হইও না। তোমার রব্ব তোমার নীচে একটি ঝরনা প্রবাহিত করেছেন। আর গাছের কাণ্ড নাড়াও, তা থেকে তাজা পাকা খেজুর পড়বে"। (সূরা মারিয়াম, ১৯:২৪-২৫)!
*৫. ঈসা (আ.)-এর জন্ম এবং প্রত্যাবর্তন:* মারিয়াম (আ.) ঈসা (আ.)-কে জন্ম দিয়ে শিশুকে কোলে নিয়ে নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে এলেন। লোকেরা তাঁকে দেখে অবাক হয়ে গেল এবং নানা প্রশ্ন করতে শুরু করল: “হে মারিয়াম, তুমিই তো হারূনের বোন? তোমার পিতা ছিলেন নেককার, তোমার মা ছিলেন পবিত্রা, তবে তুমি কীভাবে এমন কাজ করতে পারলে?” (সূরা মারিয়াম, ১৯:২৮)!
*৬. শিশু ঈসা (আ.)-এর অলৌকিক কথা বলা:* মারিয়াম (আ.) কোনো উত্তর না দিয়ে শিশুর প্রতি ইঙ্গিত করলেন। লোকেরা বিস্মিত হয়ে বলল: “আমরা কীভাবে এক শিশু সদ্যজাতের সাথে কথা বলব?”
আরও পড়ুনঃ মানিকছড়িতে সেনাবাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ বিদেশী মদ জব্দ
_অলৌকিকভাবে শিশু ঈসা (আ.) তখনই কথা বলতে শুরু করলেন:_ “আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং নবী করেছেন। আমাকে বরকতময় করেছেন যেখানেই আমি থাকি এবং আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন সালাত ও যাকাতের, যতদিন আমি বেঁচে থাকব।” (সূরা মারিয়াম, ১৯:৩০-৩১)! এই অলৌকিক ঘটনা সমগ্র সম্প্রদায়কে স্তব্ধ করে দেয়।
*৭. ঈসা (আ.)-এর পিতা ছাড়া জন্মের হিকমাহ:*
_৭.১ আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন:_ মানুষ যাতে বুঝতে পারে, আল্লাহ যাকে চান, যেমনভাবে চান, সৃষ্টি করতে সক্ষম। যেমন: (ক). আদম (আ.)-কে পিতা-মাতা ছাড়া সৃষ্টি করেছেন। (খ). হাওয়া (আ.)-কে পিতা ছাড়া, মাতা থেকে সৃষ্টি করেছেন। (গ). আমাদের সবাইকে পিতা-মাতার মাধ্যমে সৃষ্টি করেন। (ঘ). আর ঈসা (আ.)-কে মাতা থেকে, পিতা ছাড়া সৃষ্টি করেছেন। এভাবে আল্লাহ প্রমাণ করেছেন—তাঁর জন্য কিছুই অসম্ভব নয়।
_৭.২ এক পরীক্ষা এবং আলামত:_ এটি ছিল বনী ইসরাইলের জন্য এক পরীক্ষা এবং পরবর্তী উম্মতের জন্যও এক মহা নিদর্শন, যাতে মানুষ বুঝতে পারে, আল্লাহর ক্ষমতা সীমাহীন।
_৭.৩ ঈসা (আ.)-এর বিশেষ মর্যাদা:_ এভাবে জন্মের মাধ্যমে আল্লাহ ঈসা (আ.)-কে এক বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন, যদিও তাঁকে আল্লাহর পুত্র বলা, খ্রীষ্টানদের দাবি একেবারেই মিথ্যা।
*৮. কিয়ামতের নিদর্শন:* ঈসা (আ.)-এর অলৌকিক জন্ম এবং তাঁর পুনরাগমন কিয়ামতের পূর্বাভাসের সঙ্গে যুক্ত। এতে মহান হিকমাহ লুকিয়ে আছে।
_আল্লাহর কুদরত:_ ঈসা (আ.)-এর পিতা ছাড়া জন্ম আল্লাহর কুদরতের চূড়ান্ত প্রকাশ। সৃষ্টির সব নিয়ম-নীতি আল্লাহর হুকুমের অধীন। তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই ঘটে না। কুরআনে এসেছে: “যখন তিনি কোনো কাজের ফয়সালা করেন, তখন তিনি বলেন, ‘হও’, অতঃপর তা হয়ে যায়।” (সূরা ইয়াসীন, ৩৬:৮২)!
এ ঘটনা প্রমাণ করে যে, বিজ্ঞান, বংশবিজ্ঞান বা চিকিৎসাশাস্ত্র যা-ই বলুক না কেন, আল্লাহ তাআলার হুকুমের উপর কোনো কিছুর শক্তি নেই।
*৯. উপসংহার:* মারিয়াম (আ.)-এর গর্ভে পিতা ছাড়া ঈসা (আ.)-এর জন্ম এক অনন্য, বিস্ময়কর ও মহান ঘটনা। এটি শুধু ইতিহাসের এক অলৌকিক কাহিনী নয়, বরং তাওহীদের স্পষ্ট প্রমাণ, আল্লাহর কুদরতের জীবন্ত নিদর্শন এবং মানুষের জন্য এক বড় শিক্ষা।
এ ঘটনা আমাদের শিখায়—আল্লাহ যা চান, করতে সক্ষম। আমাদের উচিত তাঁর প্রতি পূর্ণ আস্থা, বিনয় ও ঈমান রাখা। একইসঙ্গে, এ ঘটনা আমাদের সতর্ক করে, যেন আমরা কোনোভাবেই ঈসা (আ.)-কে আল্লাহর পুত্র মনে না করি। বরং তিনি ছিলেন একজন মহান নবী ও রাসূল, যিনি আল্লাহর বাণী ও নিদর্শন বহন করেছিলেন।
*আল্লাহ-হুম্মা সাল্লি, ওয়া সাল্লিম, ওয়া বারিক আ'লা মুহাম্মাদ; আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ'লামীন*। (মূসা: ১৫-০৭-২৫)
প্রধান উপদেষ্টাঃ ফরহাদ মাজহার
উপদেষ্টাঃ এস,এম নজরুল ইসলাম ভুইয়া
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ আবুল হাসেম
উপ সম্পাদকঃ এম, আসমত আলী মিসু
সহঃসম্পাদকঃ আলী নওয়াব খোকন
বার্তা সম্পাদকঃ ইয়াছিন আরাফাত
সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদকঃ আসাদুজ্জামান খান মুকুল
www.dainikbanglarsangbad.com
ইমেইলঃ dainikbanglarsangbad490@gmail.com
প্রধান কার্যলয়ঃ বাড়ি নং ৩৫, রোড নং-৪, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
মোবাইলঃ01736-091515, 01716-698621
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Copyright © 2025 dainikbanglarsangbad.com. All rights reserved.