ডাঃ এম, জি, মোস্তফা মুসাঃ
*মসজিদ শুধু আল্লাহর জন্য: কুরআনের নির্দেশ ও আজকের বাস্তবতা*
_জাজাকাল্লাহু খাইরান, প্রিয় ভাই, আব্দুল বারী। তুমি মসজিদ সম্পর্কিত যে বিষয়টি উত্থাপন করেছো তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, গভীর এবং সময়োপযোগী। কুরআনের সূরা আল-জিনের ১৮ ও ২০ নম্বর আয়াতের আলোকে এবং বর্তমান বাস্তবতার প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে একটি আলোচনা পেশ করা হল। 'ওমা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ'!_
_ভূমিকা:_ মসজিদ ইসলামী সমাজজীবনের কেন্দ্রবিন্দু—ইবাদত, শিক্ষা, ন্যায়বিচার এবং ভ্রাতৃত্ববোধের প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু কুরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে: “মসজিদসমূহ তো আল্লাহরই জন্য, সুতরাং সেখানে আল্লাহর সঙ্গে আর কাউকে ডেকো না।” (সূরা আল-জিন ৭২:১৮)!
এই আয়াতটি মসজিদের পবিত্রতা ও একনিষ্ঠ তাওহীদ চর্চার মৌলিক নির্দেশনা বহন করে। অথচ আজকের বাস্তবতায় অনেক মসজিদে দলীয় প্রচার, ব্যক্তি বন্দনা এবং কুরআন-সুন্নাহ বিমুখ বক্তব্য দেখা যায়—যা এই আয়াতের স্পষ্ট লঙ্ঘন। ফলে অনেক সচেতন মুসল্লি হতাশ হয়ে পড়েন এবং কেউ কেউ জুমার জামাত থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
আরও পড়ুনঃ গাবতলী মাদক দ্রব্য এবং অপকর্মের দ্বায়েহাতে নাতে আটক হলোপ্রতিবন্ধী সিপন
এই প্রবন্ধে আমরা বিশ্লেষণ করব, আল্লাহর নির্ধারিত নির্দেশনা অনুযায়ী মসজিদের উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিত এবং আজকের সমাজে মসজিদের ব্যবহারে কী কী বিচ্যুতি ঘটছে ও তার সমাধান কী হতে পারে।
*কুরআনের আয়াতসমূহ (সূরা আল-জিন (৭২:১৮, ২০):*
*(وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨)*
“নিশ্চয়ই মসজিদসমূহ আল্লাহরই জন্য, সুতরাং তোমরা সেখানে আল্লাহর সাথে আর কাউকে ডাকবে না।” (সূরা আল-জিন, আয়াত ১৮)!
*(قُلۡ إِنَّمَآ أَدۡعُواْ رَبِّي وَلَآ أُشۡرِكُ بِهِۦٓ أَحَدٗا ٢٠)*
“বলুন, আমি তো কেবল আমার রব্বকে আহ্বান করি এবং আমি তাঁর সাথে কাউকেও শরীক করি না।” (সূরা আল-জিন, আয়াত ২০)! আয়াতদ্বয়ের বিশ্লেষণ ও বার্তা:
*১. মসজিদ আল্লাহর জন্য নির্ধারিত স্থান:*
আয়াত ১৮ এ আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলেন, *“المساجد لله”* — অর্থাৎ মসজিদসমূহ শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। এর অর্থ: সেখানে শুধু আল্লাহর ইবাদত হবে। সেখানে দোয়া, জিকির, বয়ান—সব কিছুর কেন্দ্রে থাকবে তাওহীদ।
সেখানে কারও প্রশংসা, দলীয় প্রচার, রাজনৈতিক মাহাত্ম্য, নেতার বন্দনা—এসব করা সম্পূর্ণ অনুচিত ও কুরআনের পরিপন্থী।
আরও পড়ুনঃ হযরত মাওলানা যুবায়ের সাহেব দা.বা.-এর বাণীসমূহ
*২. মসজিদে শিরক ও বাড়াবাড়ি নিষিদ্ধ:*
“তোমরা সেখানে আল্লাহর সাথে কাউকে ডাকবে না” — এটি শুধু মূর্তিপূজা নয়, বরং যারা অন্য ব্যক্তির নামে দোয়া করে, কবরে শিরকমূলক আচরণ করে, অথবা বয়ানে এমনভাবে মানুষকে উপস্থাপন করে যেন তারা দীন চালায় — এর সবই এখানে অন্তর্ভুক্ত।
*৩. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেও আল্লাহ ছাড়া কাউকে ডাকেননি:*
আয়াত ২০-তে আল্লাহ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলেন: “বলুন, আমি কেবল আমার রব্বকেই আহ্বান করি এবং তাঁর সাথে কাউকেই শরিক করি না।”
এ থেকে বোঝা যায়: নবী নিজে মসজিদে দলীয় প্রচার বা নিজের মাহাত্ম্য তুলে ধরেননি। তিনি সবসময় কুরআনের আলোকে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করেছেন।
*বর্তমান বাস্তবতা ও সমস্যা:*
বাংলা বয়ানে আল্লাহর নাম ও কুরআনের আয়াত কম; অনেক জুমার খুতবায় দেখা যায়: (ক). রাজনৈতিক বক্তব্য; (খ). কারো প্রশংসা; (গ). রাষ্ট্রীয় পদধারীদের মহিমান্বিত করা; (ঘ). সাম্প্রতিক সংবাদমাধ্যমে আলোচিত বিষয়কে কেন্দ্র করে আবেগময় বক্তৃতা।
এর ফলে কুরআনের বাণী, আল্লাহর স্মরণ ও দীনী জ্ঞান প্রচার মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে।
*মসজিদের ব্যবহার দলীয় প্রচারের জন্য:*
প্রশাসনের অধীনে থাকা ইমামরা অনেক ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ থাকেন না। তারা সরকারের পক্ষে কথা বলেন, গঠনমূলক সমালোচনার সুযোগ রাখেন না।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের বকুলবাড়িয়া ইউনিয়ন কমিটি গঠন উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
*কেন অনেকে মসজিদে যেতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন:*
সত্যিকারের ইলমের অভাব; দলীয় বয়ান ও পক্ষপাতমূলক আলোচনা; কুরআন ও হাদীসের যথার্থ ব্যাখ্যার পরিবর্তে সংস্কারহীন পুরনো বুলি; কখনো কখনো ব্যবসায়িক বা রাজনীতিক উদ্দেশ্যে বক্তৃতা।
এর ফলে আল্লাহভীরু মানুষ অনেক সময় মসজিদে যেতে কষ্ট অনুভব করেন, এমনকি জুমাও মিস করেন — যা অবশ্যই দুঃখজনক ও ভয়ংকর অবস্থা।
*তবে কি মসজিদে যাওয়া বন্ধ করা উচিত:*
না! কখনোই না। জুমা ফরজ ইবাদত (সূরা জুমু’আ: ৬২:৯)।মসজিদে অনিয়ম বা সীমালঙ্ঘন হলে, তার সংস্কার করা কর্তব্য। অন্যদেরকে সত্য প্রচারে উৎসাহিত করা দরকার — যেন খুতবা হয় আল্লাহ-কেন্দ্রিক, কুরআনভিত্তিক।
*সমাধানের কিছু প্রস্তাবনা:*
১.খুতবায় কুরআনের আয়াত, ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ ও তাফসির জোরদার করা হোক।
২.ইমামদের প্রশিক্ষণ ও মানোন্নয়ন করা হোক।
৩.বয়ানে দলীয় বিষয় বা ব্যক্তিবন্দনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হোক।
৪.জনগণ সচেতন হোক — কুরআন হাদিস জেনে খুতবা যাচাই করুক।
৫.বিকল্পভাবে সহিহ দীন প্রচারকারী মসজিদে যাওয়া উৎসাহিত করা হোক।
আরও পড়ুনঃ মধুপুরে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের মাঝে এসইডিপি পুরস্কার বিতরণ
*উপসংহার:* আল্লাহর কিতাব স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, “মসজিদ আল্লাহর জন্য, সেখানে কেবল আল্লাহকেই ডাকো।” অথচ আমরা আজ অনেক মসজিদে আল্লাহর চেয়ে মানুষের প্রশংসা, রাজনীতি, বিভাজন, শিরক ও বিদ'আত দেখতে পাই। আমাদের কর্তব্য হলো, দীন বুঝে দীন চর্চা করা, অন্যায় হলে তা পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করা (হাদীস: “খারাপ কিছু দেখলে তা হাত দিয়ে, না পারলে মুখ দিয়ে, না পারলে অন্তরে ঘৃণা করো”)। মসজিদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া নয়, বরং তাকে আল্লাহর ঘর হিসেবে রক্ষা করা আমাদের ঈমানি দায়িত্ব।
আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন, আল্লাহর ঘরসমূহকে তাঁর নামে আবাদ করার তাওফিক দিন। আমীন।
আল্লাহ বলেন: "নিশ্চয়ই মসজিদসমূহ আল্লাহরই জন্য।” (*وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ*)! “নিশ্চয়ই মসজিদসমূহে শুধু আল্লাহরই কিতাবের আলোচনা, ব্যাখ্যা, বর্ণনা এবং বিশ্লেষণ।”
“হে আল্লাহ, আমাদের মসজিদগুলোকে নূরের কেন্দ্র বানান, আর সেগুলোকে বিদআত, রাজনীতি ও লোক দেখানো কাজ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।”
*আল্লাহ-হুম্মা সাল্লি, ওয়া সাল্লিম, ওয়া বারিক আ'লা মুহাম্মাদ; আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ'লামীন*। (মূসা: ২৭-০৭-২৫)
প্রধান উপদেষ্টাঃ ফরহাদ মাজহার
উপদেষ্টাঃ এস,এম নজরুল ইসলাম ভুইয়া
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ আবুল হাসেম
উপ সম্পাদকঃ এম, আসমত আলী মিসু
সহঃসম্পাদকঃ আলী নওয়াব খোকন
বার্তা সম্পাদকঃ ইয়াছিন আরাফাত
সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদকঃ আসাদুজ্জামান খান মুকুল
www.dainikbanglarsangbad.com
ইমেইলঃ dainikbanglarsangbad490@gmail.com
প্রধান কার্যলয়ঃ বাড়ি নং ৩৫, রোড নং-৪, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
মোবাইলঃ01736-091515, 01716-698621
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Copyright © 2025 dainikbanglarsangbad.com. All rights reserved.