মোঃ আরিফুল ইসলাম মুরাদ সিনিয়র সাংবাদিক স্টাফ রিপোটারঃ
অদম্য ইচ্ছাশক্তি একজন মানুষকে সফলতার চূড়ায় পৌঁছে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে দরিদ্রতা কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। নিজের চেষ্টা আর অদম্য ইচ্ছা যে একজনকে সফল করতে পারে তার আরও একটি উদাহরণ আসাদুজ্জামান নুর।
সদ্য প্রকাশিত ১৬তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজেএসসি) নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলে সহকারী জজ পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। যদিও একসময় পড়ার বই কেনার মতো টাকা তার কাছে ছিল না। বন্ধুর কাছে বই নিয়ে পড়াশোনা করে তিনি এ ফলাফল করেন।
আসাদুজ্জামান নুর উত্তরের জেলা পঞ্চগড় সদরের ব্যারিস্টার বাজার এলাকার মৃত নুর বাদশার ছেলে। তিনি ২০১৭-১৮ বর্ষের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র ছিলেন। বর্তমান এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পড়ছেন স্নাতকোত্তর।
আরও পড়ুনঃ ইত্তেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া মোহনগঞ্জের প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও পুরষ্কার বিতরণ সম্পন্ন
২০১৪ সালে পঞ্চগড় বিপি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি, ২০১৬ সালে পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ ৪ দশমিক ৩৩ পেয়ে এইচএসসি পাশ করে চেষ্টা করেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু সে বছর ভর্তির সুযোগ না পেয়ে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতকে ভর্তি হন একই কলেজে। ২০১৭ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েই শুরু করেন কঠোর পড়াশোনা।
২০১২ সালে বাবার মৃত্যুর পর আর্থিক সংকটে পড়েন নুর। তখন তিনি নবম শ্রেণির ছাত্র। মাত্র ৬ শতক জমির ওপর ভিটেমাটি ছিল একমাত্র সহায় সম্বল। তবে হাল না ছেড়ে লেগে যান কঠিন জীবন যুদ্ধে। মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম ও অনুপ্রেরণায় ১৬তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজেএসসি) নিয়োগ পরীক্ষায় ৪০তম হন।
বই কেনার টাকা না থাকায় বন্ধুর কাছ থেকে বই নিয়ে পড়ে প্রথমবারের পরীক্ষাতেই নুর পৌঁছে যান এ সাফল্যের শিখরে। সুপারিপ্রাপ্ত হন সহকারী জজ পদে। এ পেশাতেই একজন ন্যায় বিচারক হতে চান তিনি।
করোনায় দীর্ঘ সময় অর্থ সংকটের কারণে অন্যের দোকানে কর্মচারী হিসেবেও কাজ করেছেন। করোনা কাটলেও কাটছিল না অনিশ্চয়তা। অনেকের কাছে সহযোগিতা চাইলেও মিলেনি সাড়া। তবে প্রিয়জনদের কাছ থেকে পেয়েছেন সহযোগিতা। বাবা মারা যাওয়ায় মা তাকে সাহস যোগাতেন। মায়ের জন্যই এ সফলতা এসেছে বলে জানান নুর।
আসাদুজ্জামান নুর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার প্রথম দুই বছর ‘সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট’ এর সহযোগিতায় পার করেছি। করোনা প্রকোপের পর আর্থিক সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। ঠিক ওই মুহূর্তে ‘পে ইট ফরওয়ার্ড বাংলাদেশ’ গ্রুপের খোঁজ পাই। সংস্থাটি আমাকে আর্থিক নিরসনের লক্ষ্যে পৌঁছতে সহযোগিতা করেছে। এ কারণে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারি। সংস্থাটির প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।
আরও পড়ুনঃ কলাপাড়া পৌর ওলামা দলের কর্মী সভা
পরবর্তীতে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজেএসসি)-তে অংশ নিতে বন্ধু হোসনে মোবারক সাগর ও নোসাইব মোহাম্মদ নাজ্জাসির বই নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। বিজেএসসির প্রিলি হতে লিখিত পরীক্ষার পুরোটা সময় তাদের বই পড়েছি। কারণ আমার বই কেনার কোনো সামর্থ্য ছিল না।
জুডিশিয়ারীর দিক নির্দেশনায় আমাকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন সাকিব আহমেদ ইমন ভাই। তিনি ছিলেন ১৫তম বিজেএসসি পরীক্ষায় সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশ প্রাপ্ত। তাছাড়া ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকরাও আমাকে সব ধরনের সহযোগিতা করে অনুপ্রাণিত করেছেন।
বিচারক হওয়ার আগে থেকেই স্বপ্ন ছিল কী না জানতে চাইলে নুর জানান, আগে থেকে বিচারক হওয়ার স্বপ্ন না থাকলেও পরবর্তীতে স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিতে থাকি। তবে আমার বাবা চাইতেন আমাকে আইনে পড়াবেন। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে ১৬তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজেএসসি) নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সহকারী জজ পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি।
ন্যায় বিচারক হতে চাই। কেননা ন্যায় বিচারকের সম্মান দুনিয়া ও আখেরাতেও। কেয়ামতের দিন আল্লাহ যেই সাত শ্রেণির মানুষকে তার আরশের ছায়ায় আশ্রয় দিবেন, তাদের মধ্যে প্রথম হলো ন্যায় বিচারক। তাই সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আমার দ্বারা অন্যায়ভাবে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
সবাই উপকৃত হন। বিশেষ করে আমার এ অর্জনে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন আমার বাবা। গর্ব করে বলতেন আমার ছেলে বিচারক হয়েছে। কিন্তু তিনি আজ নেই। বাবার জন্য দোয়া চাই, আল্লাহ যেন বাবাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন।
মা রশিদা পারভীন বলেন, আমার বিশ্বাস ছিল আমার ছেলে বড় হয়ে কিছু একটা হবে।
তাই কঠিন দরিদ্রতার ভেতর ছেলেকে কিছু দিতে না পারলেও চেষ্টা করেছি সেলাই মেশিনের আয়ে তাকে পড়াশোনা করানোর। সে যে সাফল্যের আলোর মুখ দেখেছে এটাই আমার কাছে বড় পাওয়া। সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।
আইন পেশায় নতুনদের বিষয়ে কোনো পরামর্শ আছে কী না এমন প্রশ্নের উত্তরে আসাদুজ্জামান নুর বলেন, আমার অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট খুব ভালো ছিল না। আমি জুডিশিয়ারি ও অ্যাডভোকেসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে বেশি ভাবতাম। পড়ালেখা শেষ করেই অনেকে চাকরির প্রস্তুতি নেয়। এটা আমার চোখে কঠিন মনে হয়।
কারণ, অ্যাকাডেমিক পাঠ শেষ হলেই শুরু হয় অর্থনৈতিক চাপ। এ কারণে তখন চাকরির প্রস্তুতি সেভাবে নেওয়া যায় না। যারা আইন পেশায় স্বপ্ন দেখছেন তাদের প্রতি আমার পরামর্শ- অনার্সের শুরু থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করবেন। পড়াশোনায় ব্যাপক মনোযোগী হতে হবে।
আমরা সেদিন হলে বন্ধুদের বলেছিলাম- ‘হলে প্রথম বারই হতে হবে , যদি দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন হয় তাহলে ফার্স্ট হতে হবে’। নতুনদের এরকম একটি ইচ্ছেশক্তি থাকতে হবে। তাহলেই স্বপ্ন জয় সম্ভব
প্রধান উপদেষ্টাঃ ফরহাদ মাজহার
উপদেষ্টাঃ এস,এম নজরুল ইসলাম ভুইয়া
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ আবুল হাসেম
উপ সম্পাদকঃ এম, আসমত আলী মিসু
সহঃসম্পাদকঃ আলী নওয়াব খোকন
বার্তা সম্পাদকঃ ইয়াছিন আরাফাত
সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদকঃ আসাদুজ্জামান খান মুকুল
www.dainikbanglarsangbad.com
ইমেইলঃ dainikbanglarsangbad490@gmail.com
প্রধান কার্যলয়ঃ বাড়ি নং ৩৫, রোড নং-৪, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
মোবাইলঃ01736-091515, 01716-698621
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Copyright © 2025 dainikbanglarsangbad.com. All rights reserved.