
মোঃ মিঠু মিয়া
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি
গাইবান্ধা পলাশবাড়ি উপজেলার কোমরপুরের মধ্য রামচন্দ্রপুর গ্রামে গড়ে ওঠা রাধা গোবিন্দ কালী মন্দিরের মুল স্বত্বাধিকারী হরিদাস চন্দ্র তরণীদাস এর বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার কারবার করায় তার আয়ের উৎস নিয়ে সচেতন জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগে প্রকাশ, উল্লেখিত শ্রী হরিদাস চন্দ্র তরণীদাস কোটি কোটি টাকা খরচ করছে মন্দিরে। স্থানীয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ সকল মহলকে ম্যানেজ করে এই মন্দির পরিচালনা করা হচ্ছে ! বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার উথলী বাজারের জনৈক শ্রী গোপীনাথ চন্দ্রের পুত্র এই শ্রী হরিদাস চন্দ্র তরনীদাস। ইতোমধ্যে বেড়িয়ে আসা শুরু হয়েছে হরিদাস চন্দ্র তরনীদাস এর ভয়ংকর প্রতারণার খতিয়ান।
সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় হরিদাস চন্দ্র তরনীদাসের খবর দিয়েছে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাব। শ্রী হরিদাস চন্দ্র তরনীদাস উত্তরাধিকার সূত্রে কিছুই পায়নি। তবে প্রতারণার মাধ্যমে গত ৮ বছরের মধ্যে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। জানা গেছে, পতিত প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যের প্রটোকল অফিসারসহ জনপ্রশাসন মন্রলয়ের কর্মকতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে হরিদাস চন্দ্র তরনীদাস এই প্রতারণার জাল বিস্তার করেন।
সুত্র জানায়, এই হরিদাস চন্দ্র তরনীদাস ২০১০ সালেও রাজধানীর উত্তরায় পুরাতন এসি মেকানিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। তার বয়স ৩৪ বছর। শুধু তাই নয়, এই শ্রী হরিদাস চন্দ্র তরনীদাস ২০১৮ সালে একজন সবজি বিক্রেতা ছিলেন। ২০১৯ সালে ধর্মান্তরিত হয়ে হরিদাস চন্দ্র থেকে তাওহীদ ইসলাম হয়ে যান। এরপর এই হরিদাসের শুরু হয় প্রতারণার কার্যক্রম। অল্পদিনের ব্যবধানে রচিত হয় কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের মাধ্যমে ধনী ও প্রভাবশালী হওয়ার ইতিহাস।
সুত্র আরো জানায়, প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া টাকায় উচ্চাভিলাষী জীবন যাপন শুরু করেন শ্রী হরিদাস চন্দ্র তরনীদাস। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের ভুয়া প্রটোকল অফিসারের পরিচয়ে বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। আত্মসাত চক্রের হোতা হরিদাস চন্দ্রকে সহযোগীসহ জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সহযোগীতায় রাজধানীর বনানী থেকে গ্রেপ্তার করেন র্যাব-৩ এর একটি দল। এ সময় রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক খন্দকাল আল মঈন বলেন, এক শ্রেণির প্রতারকচক্র স্পর্শকাতর ব্যক্তিদের অথবা সমাজের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে বা তাদের প্রটোকল অফিসার, বিভিন্ন মন্ত্রীর ভুয়া এপিএস পদবী ব্যবহার করে মানুষের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত করেন।
এদিকে, প্রতারক চক্র প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের ভুয়া প্রটোকল অফিসার পরিচয় দিয়েও বিভিন্ন স্থান থেকে অর্থ আত্মসাৎ করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতারক চক্রের প্রতারণাসহ নানা অপকর্মের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে এনএসআই ও র্যাব-৩ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর বনানী এলাকা হতে শ্রী হরিদাস চন্দ্র ওরফে তাওহীদ ও সহযোগী ইমরান মেহেদী হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এসময় তার সাথে আটক হওয়া ইমরান মেহেদী হাসান ময়মনসিংহের ত্রিশালের নওদারের সাইফুল ইসলামের পুত্র বলে জানা যায়।
সেই সময়ে তার বক্তব্যে খন্দকার মঈন বলেন, হরিদাস ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় অবৈধ উপায়ে ভারতে আত্মীয়ের বাসায় চলে যান। সেখানকার পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে থেকে এতিম সার্টিফিকেট নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন ও ইলেক্ট্রনিক বিষয়ে দুই বছরের বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ২০১০ সালে দেশে ফিরে রাজধানীর উত্তরায় পুরাতন এসি মেকানিকের কাজ শুরু করেন। ২০১৮ সালে সবজি বিক্রেতার সাথে সাবলেট বাসা ভাড়া নেন। সেখানেই বিয়ে ও ২০১৯ সালে ধর্মান্তরিত হয়ে তাওহীদ ইসলাম ধারণ করেন। সেই সময় জিজ্ঞাসাবাদে হরিদাস র্যাবকে জানান, তার শ্বশুরের পরিচয়ে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া এলাকায় কিছু জমি ক্রয় করেন। শ্বশুড়ের মাধ্যমে এলাকার লোকের সাথে নিজেকে একজন বিত্তশালী লোক হিসেবে পরিচিত হন। পাশাপাশি প্রচার করতে থাকেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের প্রটোকল অফিসার। দামি গাড়ি হাঁকিয়ে এবং পোশাক পরিধান করে স্থানীয় রাজনীতিবিদ, গণ্যমান্য বিত্তশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচয় ও সখ্যতা গড়ে তোলেন। প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়ের সহায়তায় প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক প্রজেক্টে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখান। এ ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি দপ্তর থেকে অর্থ এবং উন্নয়ন মূলক কাজ করতে তাদেরকে আশ্বস্ত করতেন। তার তার মিষ্টি আচরণে প্রলুব্ধ হয়ে অনেকেই চাকরি, বদলি, টেন্ডারসহ বিভিন্ন বিষয়ে তদবির নিয়ে তার কাছে আসা শুরু করেন। তিনি এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চাকরি প্রত্যাশী, পছন্দমত জায়গায় বদলি, সরকারি চাকরি, বিভিন্ন ক্রয়-বিক্রয় ও উন্নয়নমূলক কাজের টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে কাজ বাগিয়ে এনে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত শুরু করেন।
এ সময় র্যাব আরো জানায়, গ্রেপ্তার ইমরান মেহেদী হাসান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত তার বিভিন্ন সহযোগীসহ অন্যান্য ক্লায়েন্ট সংগ্রহ করে হরিদাসের নিকট নিয়ে আসতেন। এ সময় হরিদাস স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিভিন্ন পদে চাকরি, পদোন্নতি এবং দলীর বিষয়ে আশ্বাস দিয়ে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাত করেন।
মজার ব্যাপার হলো- কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত হরিদাস অত্যন্ত বচনপটু। একবার তার সাথে কেউ পরিচিত হলে তার প্রতারণার খপ্পর হতে বের হতে পারতো না। তিনি প্রতারণার মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে ২০১৯ সালে ফুলবাড়িয়া এলাকায় প্রায় এক বিঘা জমি ক্রয় করে প্যারিস সুইমিংপুল এন্টারটেইনমেন্ট পার্ক নামে রিসোর্টের কাজ শুরু করেন। সেখানে তার প্রলোভনে পড়ে অনেকেই টাকা লেনদেনের রসিদ ছাড়া তাকে লাখ লাখ টাকা লগ্নি করেন।
২০২০ সালে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে রিসোর্টের কাজ শেষে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। রিসোর্টে প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা, সুইমিংপুলে গোসল ১০০ টাকা এবং রিসোর্টের ভিতরে ঘোরাঘুরির জন্য ৫০ টাকা করে টিকেট বিক্রি করা শুরু করেন। অনেকে বিবাহ, জন্মদিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য তার রিসোর্ট ভাড়া নিতে থাকে। শ্রী হরিদাস চন্দ্র তরনীদাস বিভিন্ন বিত্তশালী ব্যক্তিদের তার রিসোর্টে আমন্ত্রণ জানাতেন। এসময় তাদেরকে পতিত ফেসিষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তার এডিট করা ছবি প্রদর্শন করে তার প্রজেক্টসহ অন্যান্য প্রজেক্টে বিনিয়োগ করার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নেন।
প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে র্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, তার মোবাইলে বিভিন্ন নম্বর প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের এবং তাদের নিকটাত্মীয়ের বিভিন্ন সদস্যদের নামে সেইভ করে ও কল দিয়ে দেখাতেন। নিজেকে প্রভাবশালী বলে জাহির করতেন। যদিও প্রকৃতপক্ষে তার কোন রাজনৈতিক নেতা বা কর্মীর সাথে পরিচয় নেই। তার কোন দলীয় পরিচয় নেই। প্রতারণা করে অর্থ উপার্জনই তার মূল লক্ষ ও পেশা।
সুতরাং উল্লেখিত প্রতারক শ্রী হরিদাস চন্দ্র যেহেতু র্যাবের হাতে আটক হয়ে, পরবর্তীতে জামিনে মুক্তি পেয়ে গাইবান্ধা জেলা ও পলাশবাড়ি উপজেলার সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সহ সকল মহলকে ম্যানেজ করে পলাশবাড়ির কোমরপুরে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ দাবি করে রাধা গোবিন্দের মন্দির স্থাপন করেন। তাই তার টাকার উৎস খুঁজতে থাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার।(চলবে)
প্রধান উপদেষ্টাঃ ফরহাদ মাজহার
উপদেষ্টাঃ এস,এম নজরুল ইসলাম ভুইয়া
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ আবুল হাসেম
উপ সম্পাদকঃ এম, আসমত আলী মিসু
সহঃসম্পাদকঃ আলী নওয়াব খোকন
বার্তা সম্পাদকঃ ইয়াছিন আরাফাত
সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদকঃ আসাদুজ্জামান খান মুকুল
www.dainikbanglarsangbad.com
ইমেইলঃ dainikbanglarsangbad490@gmail.com
প্রধান কার্যলয়ঃ বাড়ি নং ৩৫, রোড নং-৪, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
মোবাইলঃ01736-091515, 01716-698621
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Copyright © 2025 dainikbanglarsangbad.com. All rights reserved.