*আস-সামী (ٱلسَّمِيعُ): আল্লাহ সর্বশ্রোতা*
*কুরআনিক, বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক বিশ্লেষণ*
_তৌহিদুল ইসলাম কোহেন সিঙ্গাপুর থেকে প্রশ্ন করেছেন: "কিছু একাডেমিক প্রশ্ন: (১). আল্লাহ যদি সব কিছু শুনেন ও দেখেন, দুই কাঁধে বসে ফেরেস্তাদের আমলনামা লেখার কারণ কি? (২). আল্লাহের শ্রবণ শক্তি কি সময় (টাইম) নির্ভর? অর্থাৎ তিনি কি কোন ঘটনা ঘটার আগেই আমাদের শব্দ শুনতে পান ও দেখতে পান, নাকি কেবল ঘটনা ঘটার সাথে সাথে শুনতে ও দেখতে পান? কারণ আল্লাহর সকল গুণাবলী চিরন্তন ও শাশ্বত।_
প্রিয় কোহেন: আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাহতুল্লাহ। তোমার উত্থাপিত এ প্রশ্নগুলো আসলেই গভীর ও একাডেমিক। আমি সংক্ষেপে, কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে আলোচনা করার চেষ্টা করছি; "ওমা তাওফিকি ইল্লাবিল্লাহ"।
*প্রশ্ন–১: আল্লাহ যদি সব কিছু শুনেন ও দেখেন, তবে দুই কাঁধে বসা ফেরেশতারা (কিরামান কাতিবীন) কেন আমলনামা লেখে?*
উত্তর: এটি দ্বৈত কারণে:
আরও পড়ুনঃ জলঢাকায় গনঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের জন্য দোয়া ও মিলাদ মাহফিল
_(ক). সাক্ষ্যের জন্য প্রমাণ:_ আল্লাহ অবশ্যই সব কিছু জানেন, এমনকি অন্তরের কথাও। কিন্তু আখিরাতে মানুষ যাতে বলতে না পারে: “আমার বিরুদ্ধে তো কোনো প্রমাণ নেই”, এজন্য আমলনামা লেখা হয়। তবে আল্লাহ ভাল জানেন তিনি তাঁর শ্বাশত বিধানে কেন সবকিছু লিখে রাখছেন।
কুরআনে বলা হয়েছে: "আর প্রতিটি মানুষকে আমরা তার কৃতকর্মের রেকর্ড তার গলায় বেঁধে দিয়েছি..." (সূরা আল-ইসরা, ১৭:১৩)। আমলনামা হলো আদালতের দলিল, যা কিয়ামতের দিনে খোলা হবে (৬৯:১৯-২৯)।
_(খ). ন্যায়বিচারের পূর্ণতা:_ বিচার শুধু আল্লাহর জ্ঞান দিয়ে নয়, দৃশ্যমান প্রমাণ দিয়ে হবে। আমলনামা হবে তৃতীয় পক্ষীয় নথি (Objective record), যাতে মানুষ নিজের কাজ নিজেই অস্বীকার করতে না পারে।
সুতরাং, ফেরেশতারা আল্লাহর অজ্ঞতার কারণে নয়, বরং মানবজাতির সামনে অকাট্য দলিল ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমলনামা লিপিবদ্ধ করেন।
*প্রশ্ন–২: আল্লাহর শ্রবণ শক্তি কি সময় (টাইম) নির্ভর? তিনি কি ঘটনার আগেই শুনতে পান ও দেখতে পান, নাকি ঘটনার সাথে সাথে?*
উত্তর: আল্লাহর শ্রবণ (সামি‘) ও দৃষ্টি (বসির) সময়-নির্ভর নয়। সময় আমাদের জন্য সৃষ্টি, আল্লাহ সময় ও স্থানের ঊর্ধ্বে। আল্লাহর জ্ঞান চিরন্তন (قديم), তিনি জানেন: অতীতে কি ঘটেছে (Past); বর্তমানে কি ঘটছে (Present); এবং ভবিষ্যতে কি ঘটবে (Future)। এমনকি কি হতো যদি এরূপ হতো (possible scenarios)।
*বৈজ্ঞানিক দৃষ্টান্ত:* মানুষ শুনে সাউন্ড ওয়েভ কানে এসে মস্তিষ্কে পৌঁছালে। অর্থাৎ সময়ের সীমার মধ্যে। কিন্তু আল্লাহর শ্রবণ ও দৃষ্টি মানুষের মতো নয়; তাঁর জন্য আগে–পরে বা অতীত (Past), বর্তমান (Present), বা ভবিষ্যত ( Future)-এর কোন ধারণা প্রজোয্য নয়।৫
তিনি একই সাথে সবকিছু জানেন ও অবগত, বাইরের শব্দ, অন্তরের ফিসফিস, এমনকি অঘটিত বিষয়ও। সুতরাং, আল্লাহ কেবল ঘটনাকালে শোনেন না, বরং ঘটনার পূর্বেই জানেন, শোনেন, দেখেন এবং তা ঘটার সাথে সাথেও জানেন, শোনেন এবং দেখেন। বিষয়টি মানুষের আক্বল দিয়ে বোধ-উপলব্ধি করা এবং তার জন্য বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। আল্লাহর ব্যাপারে এসব মেটাফিজিকাল এবং স্পিরিচুয়াল বিষয়ের উপর ঈমান আনা মু'মিনদের অন্যতম কাজ।
আরও পড়ুনঃ আইন সহায়তা কেন্দ্র আসক ও মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত
_সার্বিক মন্তব্য:_ ফেরেশতাদের লেখা আল্লাহর প্রয়োজন হয় না, আমাদের জন্য সাক্ষ্য ও ন্যায়বিচারের স্বচ্ছতার ব্যবস্থাপনার প্রমাণ হিসেবে প্রয়োজন।
আল্লাহর শ্রবণ ও দৃষ্টি কোনো কিছুর দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়; তা সময়, স্থান বা মাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল নয়। এজন্য আল্লাহর গুণাবলীকে বলা হয়: চিরন্তন, পরিপূর্ণ ও সীমাহীন।
*আল্লাহ সর্বশ্রোতা: আইন, নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও দর্শনের দৃষ্টিকোণ থেকে*
_(ক). আইন (Law):_ মানবীয় আইন সাক্ষ্য ও প্রমাণের উপর দাঁড়ায়, যা অসম্পূর্ণ হতে পারে। কিন্তু আল্লাহ সর্বশ্রোতা হওয়ায় কোনো অপরাধ আড়াল থাকে না। তাঁর আদালতে চূড়ান্ত বিচার সর্বদা সঠিক।
_(খ). নীতি (Policy/Principle):_ এই বিশ্বাস মানুষের মনে একটি অদৃশ্য নীতি গড়ে তোলে, “আমি গোপনে হলেও আল্লাহর কাছে গোপন নই।” ফলে মানুষ আইন ভাঙতে ভয় পায়, এমনকি যখন মানবীয় শাস্তির ভয় নেই।
_(গ). নৈতিকতা (Morality):_ আল্লাহ প্রতিটি কথা শোনেন, এই ঈমান মানুষকে নিজের ভাষা ও অন্তর শুদ্ধ রাখতে উদ্বুদ্ধ করে। এটি নৈতিকতার সর্বোচ্চ মানদণ্ড প্রতিষ্ঠা করে।
আরও পড়ুনঃ অভাব জয় করে বিচারকের আসনে গোলাম রসুল সুইট
_(ঘ). মূল্যবোধ (Values):_ জবাবদিহিতার (Accountability) সংস্কৃতি সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়। সততা, ন্যায়, বিশ্বস্ততা—এসব মূল্যবোধ মজবুত হয়।
_(ঙ). দর্শন (Philosophy):_ মানুষের আইন সীমাবদ্ধ ও পরিবর্তনশীল, কিন্তু আল্লাহর শ্রবণ ও বিচার শাশ্বত ও পরিপূর্ণ। দর্শনের দৃষ্টিতে এটি ন্যায়বিচারের চূড়ান্ত উৎস, যা মানুষকে দুনিয়ার সাময়িক বিচার অতিক্রম করে আখিরাতের বিচারের দিকে মনোযোগী করে।
*সারসংক্ষেপ:*“আল্লাহ সর্বশ্রোতা”, এই ঈমান কেবল আধ্যাত্মিকই নয়, বরং এটি আইনকে শক্তিশালী করে, নীতিকে শুদ্ধ করে, নৈতিকতাকে সংহত করে, মূল্যবোধকে গভীর করে এবং দর্শনে ন্যায়বিচারের চূড়ান্ত ধারণা প্রদান করে।
*আল্লাহ-হুম্মা সাল্লি, ওয়া সাল্লিম, ওয়া বারিক আ'লা মুহাম্মাদ; আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ'লামীন*। (মূসা: ০৭-০৯-২৫)
প্রধান উপদেষ্টাঃ ফরহাদ মাজহার
উপদেষ্টাঃ এস,এম নজরুল ইসলাম ভুইয়া
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ আবুল হাসেম
উপ সম্পাদকঃ এম, আসমত আলী মিসু
সহঃসম্পাদকঃ আলী নওয়াব খোকন
বার্তা সম্পাদকঃ ইয়াছিন আরাফাত
সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদকঃ আসাদুজ্জামান খান মুকুল
www.dainikbanglarsangbad.com
ইমেইলঃ dainikbanglarsangbad490@gmail.com
প্রধান কার্যলয়ঃ বাড়ি নং ৩৫, রোড নং-৪, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
মোবাইলঃ01736-091515, 01716-698621
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Copyright © 2025 dainikbanglarsangbad.com. All rights reserved.