ডঃ এম, জি, মস্তফা মুসাঃ
*আইয়ুব (আ.)-এর জীবনচরিত, শিক্ষা,* *হিকমাহ এবং ধৈর্যের মূর্ত প্রতীক*
*১. আইয়ুব (আ.)-এর পরিচিতি ও দাওয়াতি জীবন:* আইয়ুব (আ.) ছিলেন এক ধনবান, ধার্মিক ও সৎ নবী, যিনি সিরিয়ার ভূমিতে বসবাস করতেন। তিনি ছিলেন ঈমান, দানশীলতা ও ন্যায়পরায়ণতার এক উজ্জ্বল প্রতীক।
আল্লাহ তাঁকে নবী হিসেবে মনোনীত করে তাঁর ক্বাওমকে সৎ পথে আহ্বান জানানোর দায়িত্ব দেন। তাঁর দাওয়াতের মূল বার্তা ছিল— ঈমান, তাওহীদ, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং ধৈর্য ও তাক্বওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
*২. আইয়ুব (আ.)-এর কাহিনী থেকে নীতিমূলক শিক্ষা:* (ক). ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা: বিপদের সময়েও আল্লাহর প্রতি অভিযোগ না করে ধৈর্য ধরে তাঁর রহমতের অপেক্ষা করা। (খ). বিপদে ইবাদতের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা: ধন, সন্তান ও স্বাস্থ্য হারিয়েও তিনি ইবাদত থেকে বিচ্যুত হননি। (গ). পরিবারের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্বশীলতা: তাঁর স্ত্রী ছিলেন তাঁর দুঃসময়ের সাথী, যিনি কখনো তাঁকে ত্যাগ করেননি।
*৩. আইয়ুব (আ.)-এর জীবন থেকে হিকমাহর শিক্ষা:* (ক). আল্লাহর পরীক্ষা কোনো পাপের ফল নয়, বরং তা একটি উত্তম বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধির মাধ্যমও হতে পারে। (খ). রোগ, দারিদ্র্য বা সামাজিক অবজ্ঞা সবই দুনিয়াবি পরীক্ষা—আসল মূল্যবান বিষয় হলো ঈমান ও ধৈর্য। (গ). যে ব্যক্তি বিপদের সময়েও রূহানি সম্পর্ক রক্ষা করে, সে আল্লাহর বিশেষ রহমতের যোগ্য হয়।
*৪. আল-কুরআনে আইয়ুব (আ.)-এর কাহিনী:* হিকমাহ ও নিদর্শনের আলোকে: “স্মরণ করুন আমার বান্দা আইয়ুবকে, যখন সে তার রব্বকে আহ্বান করেছিল: নিশ্চয় শয়তান আমাকে ক্লেশ ও কষ্ট দিয়েছে”। আল্লাহ বললেন: “তোমার পা দিয়ে ভূমিতে আঘাত কর। এ এক ঠাণ্ডা পানি, পান করার ও গোসলের উপযোগী”।
“আমি তাকে তার পরিবার ও তাঁদের সাথে আরও দ্বিগুণ দিয়ে দিলাম, আমার দয়া স্বরূপ এবং জ্ঞানবানদের জন্য উপদেশস্বরূপ”। “আর তুমি তোমার স্ত্রীর ব্যাপারে শপথ করেছিলে—তুমি তাকে (একশত) বেত্রাঘাত করবে—তাহলে একটি তৃণ গুচ্ছ নিয়ে সেটি দিয়ে একবার আঘাত করো এবং শপথ ভংগ করো না”। “আমি তাকে ধৈর্যশীল পেয়েছি। সে ছিল কত উত্তম বান্দা, সে ছিল আমার অভিমুখী।" (সূরা সাদ ৩৮:৪২-৪৪)।
*৫. আইয়ুব (আ.)-এর দায়িত্বের মধ্যে হিকমাহ:* (ক). দাওয়াতের পাশাপাশি জীবনের প্রতিটি দিক দিয়ে ঈমানের বাস্তব উদাহরণ হওয়া। (খ). সমাজকে শিক্ষা দেওয়া: ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা ছাড়া আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হয় না। (গ). মানুষকে বোঝানো যে বিপদ মানেই অভিশাপ নয়, বরং তা হতে পারে এক মহান নিয়ামত।
*৬. আইয়ুব (আ.)-এর নির্দিষ্ট নিদর্শন ও তার হিকমাহ বিশ্লেষণ:* (ক). রোগভোগ ও ধন-সম্পদের ক্ষয়: আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা, কিন্তু এর দ্বারা তিনি পরিচিত হলেন "সাবিরুন" বা ধৈর্যশীলদের নেতা হিসেবে। (খ). স্ত্রীর প্রতি সহানুভূতি: তিনি শপথ ভঙ্গ না করে হিকমাহপূর্ণভাবে তা পূর্ণ করলেন, যা আল্লাহর প্রশংসনীয় এক পথনির্দেশ।
*৭. ক্বাওমের সাথে তাওহীদের দ্বন্দ্ব ও হিকমাহর বিশ্লেষণ:* যদিও কুরআনে সরাসরি ক্বাওমের বিরুদ্ধাচরণ বা দ্বন্দ্বের বিশদ বিবরণ নেই, তথাপি তাফসিরবিদরা বলেন যে, আইয়ুব (আ.)-এর চারপাশের মানুষ তাঁর দুরবস্থায় ঈমানহীনতা প্রকাশ করে ব্যঙ্গ করেছিল। কেউ কেউ তাঁকে "পাপের কারণে শাস্তিপ্রাপ্ত" বলে আখ্যা দিয়েছিল। কিন্তু তিনি তাতে বিচলিত না হয়ে আল্লাহর ওপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল বজায় রাখেন। হিকমাহ: সত্যিকারের মুমিনের ধৈর্য এমন হওয়া উচিত যা সমাজের বদনাম, তিরস্কার, ও দুর্যোগেও অটুট থাকে।
আরও পড়ুনঃ ইরানে মার্কিন হামলায় জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগ প্রকাশ
*৮. উপসংহার:* আইয়ুব (আ.) আমাদের শিখিয়ে গেছেন—ধৈর্য, তাওয়াক্কুল ও ইবাদতের দৃঢ়তা একজন মুমিনের শ্রেষ্ঠ গুণ। তাঁর জীবন এক পরীক্ষাগারে রূপ নিয়েছিল, যার প্রতিটি পর্যায় আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য ছিল একটি সিঁড়ি। তিনি প্রমাণ করে গেছেন, আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন এবং তাঁর রহমত তাদের জন্য বর্ষিত হয় যাঁরা বিপদে হতাশ না হয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে যান।
_হিকমাহ: ধৈর্যের এক অতুলনীয় উদাহরণ:_ আইয়ুব (আ.) বছর যাবৎ কঠিন রোগে ভুগেছিলেন, তবুও তাঁর মুখ ও হৃদয় ছিল সর্বদা আল্লাহর জিকিরে ব্যস্ত। তিনি কখনো আল্লাহর প্রতি অভিযোগ করেননি, শুধু বলেন:
*(إني مَسَّنيَ الضُّرُّ وأنت أرحمُ الرّاحِمين)*
আমি দুঃখ-কষ্টে পড়েছি, অথচ তুমিই সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু” (সূরা আল-আম্বিয়া: ৮৩) এ বাক্যটি মুমিনের জন্য এক মহামন্ত্র: দুঃখের মধ্যেও আস্থা, রোগের মধ্যেও রহমতের প্রার্থনা।
*আল্লাহ-হুম্মা সাল্লি, ওয়া সাল্লিম, ওয়া বারিক আ’লা মুহাম্মাদ; আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন*। (মূসা: ২২-০৬-২৫)।
প্রধান উপদেষ্টাঃ ফরহাদ মাজহার
উপদেষ্টাঃ এস,এম নজরুল ইসলাম ভুইয়ামোঃ আমিনুল ইসলাম,
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ আবুল হাসেম,
সহঃসম্পাদকঃ আলী নওয়াব খোকন,
বার্তা সম্পাদকঃ ইয়াছিন আরাফাত,
সহকারী বার্তা সম্পাদকঃ এম, আসমত আলী মিসু,
সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদকঃ আসাদুজ্জামান খান মুকুল,
www.dainikbanglarsangbad.com
ইমেইলঃ dainikbanglarsangbad490@gmail.com
প্রধান কার্যলয়ঃ বাড়ি নং ৩৫, রোড নং ৪, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
মোবাইলঃ01736091515, 01716698621
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Copyright © 2025 dainikbanglarsangbad.com. All rights reserved.